লামা ভূমি অফিসের অনিয়-দুর্নীতি, হয়রানী হচ্ছে প্রান্তিক প্রজারা
আব্দুর রহমান ১৯৮১ সালে ২৮৪ ইয়াংছা মৌজার ৭নং ওয়ার্ড কাঠালছড়ায় ১২ নং সীটে আর/১৬৩ হোঃ ৩ একর ২য় ও ৩য় শ্রেণীর জমি মালিকানা লাভ করেন। এর সাথে লাগুয়া ১১৫ নং আর হোঃ এর সাড়ে চার একর জমি ইয়ার মাহমুদ থেকে ক্রয় করে মোট সাড়ে সাত একর ভূমির মালিক হন। বিগত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ভোগদখলসহ ওই জমিতে ফলজ, বনজ বাগান সৃজন করে বসবাস করে আসছে। আবদুর রহমান ও তার তিন ছেলে মিলে চারটি বসত ঘর, তিনটি গরুর গোয়াল, ১টি মাছ চাষের পুকুর, ১টি নলকুপ, সোয়া একর জমিতে ধান চাষ করে আসছে।
বিগত বহু বছর আগের ইউপি চেয়ারম্যানের স্থিতি আদেশের প্রেক্ষিতে পরিত্যাক্ত ৪০ শতাংশ জমি এখনো পড়ে আছে। এত কিছুর পরেও লামা উপজেলা কানুনগো রাপ্রুমগ প্রতিবেদনে লিখেছেন, আবদুর রহমানের দখল নেই সেখানে(!)। এই ঘটনা অনুসন্ধানকালে জানাযায়, একই মৌজায় ৯ নং ওয়ার্ড কাইক্যারঝিরি ১৮ নং সীটে জনৈক কামাল হোসেন ১৯৮১ সালে ১২৮ নং আর হোঃ মূলে ৩ একর ২য় ও ৩য় শ্রেণির জমি বন্দোবস্তি পায়। ৮০’দশকে এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকে মারা যায়। সেখানে ৩২ টি পুনর্বাসিত পরিবার নিয়ে একটি রিফুজি কলোনী নাম করণে ১২ নং সীটের অংশে একটি বসতি বা গ্রাম ছিল। ১৯৮৭ সালের পরে ওই বস্তি এলাকা ছেড়ে সবাই চলে গেলেও আবদুর রহমান একাই সেখানে বসবাস করতে থাকেন, এবং অদ্যবধি তিনি স্বপরিবারে সেখানে বসবাসরত আছেন। স্থানীয়রা জানায়, ইয়াংছা মৌজার ১৮ নং সীটে জনৈক কামাল হোসেনের পিতা নজির আহমেদের আর হোঃ এর তিন একর জায়গা ছিল।
এর পর নজির আহমেদের ছেলে জামাল হোসেন বাবার ওই জমিটি চৌহদ্দী সংশোধন করে ১২ নং সীটে আনেন। ওই সময় আবদুর রহমান জামাল হোসেনকে চৌহদ্দী পরিবর্তনে সহায়তা করেন, কারণ ১২ নং সীট ও ১৮ নং সীট দুইটার দুই প্রান্তে দু’জন বাস করতেন। কাছাকাছি বসবাসের জন্য মুলতঃ জামালকে নিজের কাছে আনেন আবদুর রহমান। এর কয়েক বছর পর জামাল হোসেন তার বড় ভাই কামাল হোসেনের নামীয় আর ১২৮ নং হোঃ এর ৩ একর জমি চৌহদ্দী পরিবর্তন করে দাগে রুপান্তরের জন্য ১৯২/ডি/২০০৩ মামলা চালু করেন। এতদ প্রেক্ষিতে বান্দরবান “জেলা প্রশাসক এর ৪/১/২০ ১২ তারিখের আদেশেমতে, ১০৫৯ নং দাগে ২.০৮ একর জমি আর/১২৮ নং হোঃ ভূক্ত হবে, তবে জমি ৩ একরের অধিক হবে না”। এমনটা রেকর্ডে উল্লেখ রয়েছে। রেকর্ড অনুসন্ধানে আরো প্রকাশ পায় যে, মিস মামলা নং ১৬২ (ডি)/৯৮ এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ৫/৭/২০০৫ সালে আরেকটি আদেশে ১২৮ নং আর হোঃ এর প্রজা ” কামাল হোসাইনের স্থলে জামাল হোসাইন এবং চৌহদ্দী দক্ষিণে কাইক্যারঝিরির স্থলে “নামেরঝিরি ও মান্নান বাহাদুর, পূর্বে ইয়াংছা খালের স্থলে, ” ডা: আবুল কাসেম এর রাবার প্লট” উল্লেখ করে রেকর্ড সংশোধ করার হুকুম দেয়।
বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, মৃত প্রজার স্ত্রী সন্তান থাকতে, মৃতের সম্পত্তি কি করে, জেলা প্রশাসক সংশোধন করে অন্যের নামে দিতে পার(!)। অনুসন্ধানে জানাযায়, ১২৮ নং হোঃ এর প্রজা কামাল হোসাইন এর স্ত্রী শামসুন নাহার মিস ১৬২/ডি/৯৮ মামলা বাতিলের জন্য বিগত ২৪/১০/২০০৭ সালে সহকারী কমিশনার ভূমি লামা এর বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সে আবেদনও বিবেচনায় নেননি। অন্যদিকে সরেজমিন ১০৫৯ নং দাগে ও সংশোধিত রেকর্ডের চৌহদ্দীতে বসবাস করছেন ১৬৩ ও ১১৫ নং আর হোঃ এর মালিক আবদুর রহমান। এদিকে জামাল হোসাইন ও জনৈক সিরাজ দুইজনেই আবদুর রহমানের জমি দাবি করে আবদুর রহমানকে উচ্ছেদ করার জন্য বান্দরবান জজ কোর্ট থেকে ৮/১৫ মামলা হয়ে চট্টগ্রাম কমিশনার কোর্টে যায়। ওই মামলায় আবদুর রহমান পক্ষভুক্ত হন।
কমিশনার কোর্ট আবদুর রহমানের কাছে স্থানীয় এসিল্যান্ড ও কানুনগোরর রিপোর্ট চায়। সরেজমিন বাস্তব রিপোর্ট পাওয়ার জন্য, আবদুর রহমান লামা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট পিটিশন মামলা করের। মামলার প্রেক্ষিতে লামা কানুনগো রাপ্রুমগ সরেজমিন তদন্ত করে, আবদুর রহমানের দখল নেই মর্মে একটি মিথ্যা প্রতিবেদন দেয়। এ ব্যপারে জানতে চাইলে কানুনগো কোন সদুত্তর দিতেে পারেন। প্রতিবেদনের নারাজি দেয়া হলে, পুনরায় এসিল্যান্ডকে তদন্ত করার জন্য বলা হয়। এর আগে জামাল হোসাইন গং বয়বৃদ্ধ আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্রমূলক ইয়াবা টেবলেটের মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করান। স্থানীয়রা জানায়, সত্তর বছর বয়সের আবদুর রহমান কোনো দিন পান সিগারেটও পান করেননি। জামাল হোসাইন গং শুধুমাত্র জায়গা সম্পত্তি গ্রাস করার মানসে একের পর এক মিথ্যা মামালা দিয়ে হয়রানী করছে, যেন আবদুর রহমান ও তার সন্তানরা বসত ভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। নিরপেক্ষ তদন্ত করলে ভূমি সংক্রান্ত এমন অনেক অনিয়মের নজির মিলবে লামা উপজেলায়। বিষয়টির প্রতি ভূমি সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ নজর দেয়া দরকার।