বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেলেন দিনাজপুরের প্রবীন সাংবাদিক চিত্ত ঘোষ
রশিদুল ইসলাম টিপু, দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ
বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেলেন দিনাজপুরের প্রবীন সাংবাদিক চিত্ত ঘোষ
বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন দিনাজপুরের সাংবাদিকদের বাতিঘর প্রবীন সাংবাদিক চিত্ত ঘোষ। তৃণমূলে সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ তাকে এই অ্যাওয়ার্ডে ভুষিত করা হয়। অ্যাওয়ার্ডের অংশ হিসেবে তিনি ১ লক্ষ টাকার চেক, একটি সম্মাননাপত্র ও ক্রেষ্ট পেয়েছেন।
সোমবার (৩০ মে ২০২২) সন্ধ্যায় ঢাকার বসুন্ধরা আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বসুন্ধরা গ্রুপ আয়োজিত বর্নাঢ্য এক অনুষ্ঠানে তাঁকে এই সম্মাননা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বসন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবাহান, প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিম, বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড জুরিবোর্ড প্রধান অধ্যাপক মোঃ গোলাম রহমান।
দিনাজপুর শহরের চক্বাজারস্থ স্বর্গীয় মনীন্দ্র নাথ ঘোষ ও স্বর্গীয় ভালোবাসা ঘোষ এর দ্বিতীয় পুত্র চিত্ত ঘোষ এর জন্ম ১৯৫৯ সালের ১৯ অক্টোবর। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাশ। তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন ১৯৭৮ সাল হতে দেশের অন্যতম প্রাচীন সংবাদপত্র ‘দৈনিক সংবাদ’ এ নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে। বর্তমানে নিজস্ব বার্তা পরিবেশক (স্টাফ রিপোর্টার) হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সংবাদ এ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি দিনাজপুর হতে প্রকাশিত দ্বিতীয় দৈনিক সংবাদপত্র ‘দৈনিক প্রতিদিন’ এ যোগদান করেন ১৯৮০ সালে।
শেষ পর্যন্ত পত্রিকাটির বার্তা সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় ২০০১ সালে প্রকাশিত ‘দৈনিক আজকের দেশবার্তা’ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি দেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন ‘একুশে টেলিভিশন’ এর জন্মলগ্ন হতে দিনাজপুর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এখনো তিনি দৈনিক সংবাদ, একুশে টেলিভিশন এবং দৈনিক আজকের দেশবার্তায় সমানতালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
তিনি ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউট (পিআইবি) ঢাকায় আয়োজিত উত্তরবঙ্গের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের ১৫ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেন। এরপর দেশী-বিদেশী বেশ ক’টি সাংবাদিকতা বিষয়ে কর্মশলায় অংশ নেন। ২০১১ সালে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে তে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট (আইপিআই) কনভেনশনে যোগদান এবং সেখানে ‘এশিয়ার অর্থনীতি’ বিষয়ক এক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে কতিপয় বিপথগামী পুলিশ সদস্য কর্তৃক ইয়াসমিন নামে এক কিশোরী ধর্ষন ও হত্যা শিকার হয়। চিত্ত ঘোষ এর প্রেরিত এ সম্পর্কীত খবর দেশের কোন জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র ‘দৈনিক সংবাদ’ এ সর্বপ্রথম গুরুত্বসহকারে প্রথম পাতায় প্রকাশ হয়। সেই খবরটি পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্ব পায়।
তিনি দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই মেয়াদে রাজশাহী বিভাগীয় যুগ্ম মহাসচিব এবং দুই মেয়াদে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিকদের সংগঠনসমুহ পুনর্গঠনে এবং নেতৃত্ব বিকাশে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বর্তমানে অবিভক্ত বাংলার শতবর্ষী প্রাচীন (প্রতিষ্ঠাকাল ১৯১৩ খ্রীঃ) নাট্য প্রতিষ্ঠান ‘দিনাজপুর নাট্য সমিতি’র সভাপতি, প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিনাজপুর একাডেমি স্কুল (প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৩৩ খ্রীঃ) এর পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, সমাজে পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী সাঁওতাল, আদিবাসী, দলিত, হরিজন সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ে ও মানবাধিকার সুরক্ষায় দীর্ঘকাল ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি এনএনএমসি ফাউন্ডেশনের আওতাধীন দিনাজপুর জেলা এ্যাডভোকেসি প্লাটফর্মের সভাপতি। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন। সাংবাদিকতা পেশা ছাড়া তিনি অন্য কোন পেশা বা ব্যবসার সাথে জড়িত নন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত, স্ত্রী মাধুরী ঘোষ। তাদের তিন পুত্র সন্তান রয়েছে। বড় সন্তান চিন্ময় ঘোষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগে অধ্যয়নরত, দ্বিতীয় সন্তান জ্যোতির্ময় ঘোষ চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিবে এবং ছোট ছেলে রুপময় ঘোষ বিদ্যালয়ে যাওয়া এখনও শুরু করেনি। চিত্ত ঘোষ ছয় ভাই, পাঁচ বোনসহ একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য। এজন্য দিনাজপুর শহরে এ পরিবার বেশ প্রশংসিত।
বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডে ভুষিত হওয়ার পর চিত্ত ঘোষ তাঁর অনুভুতিতে জানান, আমি সর্বপ্রথমে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা জানাই গ্রাম বাংলার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য এ ধরনের একটি মহান উদ্যোগ গ্রহনের জন্য। আমার দীর্ঘ সাংবাদিকতার জীবনে ইতিপূর্বে কোন প্রতিষ্ঠানই এক সঙ্গে ৬৪ জেলার গণমাধ্যমকর্মীদেরকে সম্মাননা জানানোর উদ্যোগ গ্রহন করেনি। বসুন্ধরা গ্রুপের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ আমার বিশ্বাস দেশব্যাপী গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আরও বেশি উৎসাহি করে তুলবে। আগামীতে আরও অনেক গণমাধ্যমকর্মী বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডে ভুষিত হবেন বলে আশা রাখছি। তিনি বলেন, বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২১ এ আমার নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দীর্ঘ সাংবাদিকতার জীবনে এটাই আমার প্রথম স্বীকৃতি। যা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজকে আমার এই প্রাপ্তি আরও বেশি আনন্দের হতো যদি আমার মা বেঁচে থাকতেন।
মাত্র গত দু মাস আগে আমার পরম পূজনীয়া মা না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আজ আমি এই প্রাপ্তি আমার স্বর্গীয়া মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করছি। মা নিশ্চয়ই আমাদের আশির্বাদ করবেন। এছাড়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপিসহ অন্যান্য সম্মানীত অতিথিবৃন্দ এবং সাংবাদিক সহযোদ্ধাবৃন্দ সকলকে দিনাজপুরের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। জয় বাংলা, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।