৪ সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা প্রধানমন্ত্রীর মালদ্বীপ সফরে
রাষ্ট্রীয় সফরে আগামী বুধবার মালদ্বীপ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে দেশটির সঙ্গে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দ্বৈত করারোপ এবং যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক চারটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর মালদ্বীপ সফর নিয়ে রবিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
ড. মোমেন বলেন, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ’র আমন্ত্রণে আগামী ২২-২৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মালদ্বীপ সফর চূড়ান্ত করা হয়েছে। সফরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দ্বৈত করারোপ, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক চারটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর মালদ্বীপে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মরত। মালদ্বীপ সম্প্রতি আরো কিছু দ্বীপে পর্যটন রিসোর্ট তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে। ফলে ভবিষ্যতে আরো বেশি বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে আশা করা যায়। সম্প্রতি মালদ্বীপ বাংলাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তাদের শিক্ষার্থীদের পাঠানোর প্রস্তাব করায় দুদেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে বলে আমরা আশাবাদী।
মোমেন বলেন, এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ সহযোগিতা সম্প্রসারণ, বাংলাদেশের শ্রমবাজার সুসংহতকরণ ও সম্প্রসারণ, অনিয়মিত শ্রমিকদের নিয়মিতকরণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা নেওয়া হবে, যেন বাংলাদেশের সার্ভিস সেক্টর প্রসার পাবে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে।
গত মার্চে জন্মশতবার্ষিকী ও সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ঢাকায় আসেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। সম্প্রতি ঢাকা সফর করে গেলেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসিম। তাদের সফরে ঢাকা ও মালের মধ্যে কানেক্টিভিটির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও মালের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল ও সরাসরি ফ্লাইট চলাচল ইস্যুটি।
এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে মোমেন বলেন, আমরা কানেক্টিভিটির ওপর খুব জোর দিচ্ছি। মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতির ঢাকা সফরেও এসব বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ফ্লাইট চালু হয়েছে। ইউএস বাংলা চালু করেছে। বিমানও ফ্লাইট শুরু করবে। শিপিং লাইনের বিষয়ে আমরা এখনো চূড়ান্ত করতে পারিনি। আশা করি এটিও দ্রুত হয়ে যাবে।
অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সইয়ের অগ্রগতি জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কোভিডের কারণে অগ্রসর হতে পারেনি। এখনও সব ইস্যুগুলো এগ্রিড হয়নি, তাই দেরি হচ্ছে।
এ সময় মোমেন জানান মালদ্বীপে আটক ৪৩ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত নিয়ে আসা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে বন্দি বিনিময়ে আমরা একমত হয়েছি। মালদ্বীপের কোনো বন্দি বাংলাদেশে নেই। তবে দেশটিতে আমাদের ৪৩জন বন্দি রয়েছে। আমরা তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।
মালদ্বীপে নতুন করে কর্মী যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন জানান, মালদ্বীপের সঙ্গে আমাদের শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি। কোভিডের কারণে বাজারটা চাঙ্গা ছিল না। এখনও আবার হবে। তবে করোনার মধ্যেও আমরা কিছু নার্স ও মেডিকেল টেকনিশিয়ান পাঠিয়েছি। বিশেষ করে টিকা দেওয়ার জন্য একটি টিম গেছে। ওখানে আমাদের অনেক অবৈধ লোকও আছে। তাদের বৈধকরণ করছে।
প্রধানমন্ত্রীর মালদ্বীপ সফরে যা থাকছে-
২২ ডিসেম্বর বিশেষ ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালেতে অবতরণ করবেন। দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। ২৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।
সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। গার্ড অব অনার নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদে যাবেন। এ ভেন্যুতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে চারটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হবে।
দেশটি সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সফরে প্রধানমন্ত্রী মালদ্বীপের জাতীয় পার্লামেন্টেও বক্তব্য রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মালদ্বীপে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি কুশল বিনিময় করবেন।
একইদিন রাতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ড. জাহিদ মালেক, সেনাপ্রধান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, পররাষ্ট্র সচিবসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপযুক্ত কর্মকর্তারা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।