লাইফ স্টাইল

ভয়ঙ্কর মাদক ‘আইস’ যে কৌশলে দেশে ঢুকছে

দেশের এলিট শ্রেণির মাদকসেবীদের বেশি চাহিদার মাদকদ্রব্য এখন ‘ক্রিস্টালমেথ’ বা ‘আইস’। ইয়াবার তুলনায় এটি অনেক দামি এবং আসক্তির মাত্রা বেশি হওয়ায় এলিট শ্রেণি এখন ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টালমেথের দিকে ঝুঁকছে। বিভিন্ন রুটে দেশে এখন এই দামি মাদকদ্রব্য ঢুকে পড়ছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ দিয়ে এর সিংহভাগ আসছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

আজ শনিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ভয়ঙ্কর মাদক ক্রিস্টালমেথ বা আইস সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হোছেন ওরফে খোকন ও তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিককে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫ কেজি ৫০ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়; যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা।

র‌্যাব বলছে, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে নাফ নদীর মাধ্যমে তারা এই আইস নিয়ে আসে। মিয়ানমারের বার্মিজ আচার, কাপড় ও চায়ের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। তারা আচার ও চায়ের আড়ালে এই ভয়ঙ্কর মাদক আইস নিয়ে এসে সেগুলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাপ্লাই দিত। দেশে জব্দকৃত আইসের সবচেয়ে বড় চালান এটি।

আজ শনিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, অভিযানে জব্দ করা হয় নতুন ভয়ঙ্কর মাদক আইস; যার পরিমাণ প্রায় ৫ কেজি ৫০ গ্রাম এবং বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। এ ছাড়া তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গোলাবারুদ, দুটি মোবাইল, তিনটি দেশি-বিদেশি সিমকার্ড ও মাদক কারবারে ব্যবহৃত ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। র‍্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১৫-এর একটি আভিযানিক দল শনিবার ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত অন্যতম হোতা রফিকের বার্মিজ আচার, কাপড় ও চায়ের ব্যবসা ছিল। সে এই ব্যবসার আড়ালে এই ভয়ঙ্কর মাদক আইস নিয়ে এসে সেগুলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাপ্লাই দিত। দেশে জব্দকৃত আইসের সবচেয়ে বড় চালান এটি।

এই চক্রের অন্যতম হোতা খোকনের নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিক চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং টেকনাফে অটোরিকশা চালকের ছদ্মবেশে মাদক পরিবহন ও স্থানান্তর করত। এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এই সিন্ডিকেটে যে ২০ থেকে ২৫ জন রয়েছে, তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

প্রতিবেশী দেশ থেকে যেভাবে ঢাকায় ঢুকছে আইস
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃতরা টেকনাফকেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। এই চক্রটি গত কয়েক বছর ধরে অবৈধ মাদক ইয়াবার কারবার করে আসছে। সিন্ডিকেটে ২০-২৫ জন যুক্ত রয়েছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা সাধারণ নৌপথ ব্যবহার করে মাদকের চালান দেশে নিয়ে এসে থাকে। চক্রটি ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত থেকে গত কয়েক মাস ধরে আইস পাচার করে আসছিলো। ঢাকার উত্তরা, বনানী, গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের সিন্ডিকেট সদস্য রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে টেকনাফ কেন্দ্রিক কয়েকটি মাদক চক্র বেশ কিছুদিন ধরে পাশ্ববর্তী দেশ থেকে মাদকদ্রব্য আইস বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। ফলে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, টেকনাফের নাফ নদীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি চৌকি থাকলেও গ্রেফতার এই আইস সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে নৌকায় লাইটার সিগন্যালের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইস নিয়ে আসে। তারা এর আগে ইয়াবা নিয়ে এলেও বেশি লাভের আশায় সম্প্রতি আইস নিয়ে আসা শুরু করে। টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সড়ক পথে নিয়ে আসে। এরপর তারা চট্টগ্রাম থেকে সড়ক পথে ঢাকায় নিয়ে আসে।

ক্রিস্টালমেথের ক্ষতিকর দিক
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদক হলো আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। ক্রিস্টাল মেথ বা আইসে ইয়াবার মূল উপাদান এমফিটামিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও বহুগুণ ক্ষতিসাধন করে এই আইস। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা, মানসিক অবসাদ ও বিষণ্নতার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে এটির নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এই মাদকের প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ও অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। এই মাদকে আসক্তরা নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button