দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কাল থেকে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মধ্য দিয়ে অবশেষে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। তবে এখনো প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণার পরই শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। বিশেষ করে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি সমমানের শিক্ষার্থীদের মাঝেও এসেছে বাঁধভাঙা আনন্দ।
চলতি বছরের শুরুতে নানা নির্দেশনার মধ্য দিয়ে এসএসসি বা সমমানের এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার কয়েক দফা সিদ্ধান্ত হলেও তা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি করোনাভাইরাসের প্রাদুভার্বের কারণে।
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
তাছাড়া শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নানাভাবে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়।
গত ৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে আয়োজিত এক বৈঠকে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভা শেষে জানানো হয়, চলতি ও আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে হবে। আর প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন প্রতিষ্ঠানে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ইতোমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে। তারা প্রতিদিন ক্লাস করলে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে জেএসসি, জেডিসি, পিইসি পরীক্ষাসহ বার্ষিক পরীক্ষাও সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নির্দেশনার ক্ষেত্রে তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রাখতে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা প্রতিদিন তাদের পর্যবেক্ষণ করবেন। এ জন্য একটি সার্ভিলেন্স টিম কাজ করবে।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের আগে তৃণমূল বা মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু করার আগে তা সম্পূর্ণ তৈরি আছে কি না, সে বিষয়ে মনিটরিং সম্পন্ন হবে।
কোনো প্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে স্থানীয় পর্যায়ে এর অবস্থান বিবেচনায় তা বন্ধ করার ঘোষণাও থাকবে বলে উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার শুরুতে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মনিটরিং করা হবে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সামাজিক দূরত্ব মেনে সারিবদ্ধভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের নির্দেশনা রয়েছে। আপাতত কোনো অ্যাসেম্বলি হবে না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থ্যতার কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের খেলাধুলা বা ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটিজ চলবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দৈনিক চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে এর সময়সীমা বাড়তে পারে। এছাড়া, প্রতিদিন প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চেকলিস্ট পূরণ করতে হবে এবং তা অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) থেকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পাঠদান কর্মসূচি কঠোরভাবে মনিটরিংসহ নানা সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর খোলায় সারাদেশেই সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে জোর প্রস্তুতি। শিক্ষক-কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন ও সমন্বয় সভা করে শিক্ষার্থীদের জন্য নানা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।
এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের প্রধান গেটে স্যানিটাইজ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কিউ মেনে সারিবদ্ধ ভাবে প্রবেশ, মাস্ক পরা নিশ্চিতকরণ, থার্মোমিটারে শরীরের তাপমাত্রা মাপাসহ বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি ‘জেড’ শেপে শ্রেণীকক্ষে আসন বিন্যাস ইত্যাদি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের দিনভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস করা হলেও থাকছে না চেনা ডেইলি রুটিন। প্রতিদিন দুটো ক্লাস শেষে একটি শরীরচর্চা বা বিনোদন ক্লাস নেওয়ার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে শ্রেণিতে পাঠদানের সময়সীমা বাড়ানো হবে।
স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণায় মোট ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বার্থ ও বিষয়ে চারটি প্রামাণ্য চিত্র প্রকাশ করা হয়েছে। শ্রেণী কার্যক্রম চালুর বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, পরিচালনা পর্ষদ-অভিভাবকদের জন্যও বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।