খোলা চিঠি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আসসালামু আলাইকুম।
করোনায় সৃষ্ট বৈশ্বিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশও গভীর সংকটগ্রস্ত। একদিকে স্বাস্থ্যসেবা অন্যদিকে আর্থসামাজিক সংকট দুটোই নির্মম বাস্তবতা। এ ভয়াবহ সংকট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য অনিবার্য। জাতীয় ঐক্যই সমগ্র জাতির মাঝে উচ্চতর আত্মমর্যাদা বোধের জন্ম দেবে এবং ন্যায়বোধ ও মানবিক শক্তির বিকাশ ঘটাবে। জাতীয় ঐক্যের ফলে গড়ে উঠা সম্মিলিত প্রয়াস ও মনোবল আরো শক্তিশালী হবে এবং দুর্যোগ উত্তরণ সহজ হবে।
পক্ষান্তরে একপেশে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি পরাক্রমশালী ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রাষ্ট্রীয় অরাজকতাকে প্রণোদনা জোগাবে, আগামীর সমাজ কাঠামোকে বিপন্ন করবে এবং অমানবিক অনৈতিক এক রাজনীতির উত্থান ঘটাবে।
ইতিমধ্যে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা সহ জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা, করোনা মোকাবেলায় রোড ম্যাপ প্রকাশ, সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ত্রাণ বিতরন ও খাদ্য ঝুঁকি নিয়ে প্রস্তাবনা পেশ করেছি।
আজ আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনার সমীপে উত্থাপন করছি।
করোনায় আমাদের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছে। কয়েক কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা, চিকিৎসা, নগদ সহায়তা ও পুনর্বাসনে বিরাট অর্থের প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় উৎসের বাইরে আমাদের জাতীয় অর্থনীতির বিরাট অংশ দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের করায়ত্বে।
রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ও ভয়ংকর লুন্ঠনে সারা দেশে বিপুলসংখ্যক দুর্বৃত্ত চক্র গড়ে উঠেছে এবং দুর্নীতির কালোছায়া সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য হুমকি স্বরূপ। বিদ্যমান মানবিক বিপর্যয়েও ত্রাণ চুরি আত্মসাৎ এবং লুন্ঠনের যে ভয়াবহ দলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির চিত্র উম্মোচিত হয়েছে তা জাতির জন্য লজ্জাকর। ইতোপূর্বে যে সকল দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে প্রতিটিতেই অবৈধ সম্পদের ভয়াবহচিত্র, টাকার গোডাউন, স্বর্ণালংকারের স্তুপ আবিষ্কৃত হয়েছে। আপনার দুর্নীতি বিরোধী জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা দেয়ার পরও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান কেন ব্ন্ধ তা বোধগম্য নয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
এই দুর্নীতিবাজরা বঙ্গবন্ধুর শাসনামলকে বির্তকিত এবং বঙ্গবন্ধুকে কি পরিমাণ মানসিক যাতনা দিয়েছে তাও আপনি অবগত। দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার আপনার দৃঢ় অংগীকার বাস্তবায়নের এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ ১. লকডাউনের ফলে দুর্নীতিবাজরাএখন দেশে অবস্থান করছে। আকাশপথ জলপথ স্থলপথ সহ সকল পরিবহন এবং সীমান্ত পথে যাতায়ত বন্ধ থাকায় বিদেশ পাড়ি দেয়ার তাদের সুযোগ নেই। এমন কি লক ডাউনে বঙ্গবন্ধুর খুনীরা পর্যন্ত ধরা পড়েছে। ২.বিদ্যমান বাস্তবতায় টাকার গোডাউন স্থানান্তর এবং অর্থ পাচার করাও দূরূহ।
যেহেতু করোনায় দেশশ্রেমিক সেনাবাহিনী সারা দেশে নিয়োজিত তাই র্যাব কতৃর্ক সূচিত দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করে নতুন উদ্যোমে শুরু করা জরুরী। এই কার্যক্রম বিপুল রাষ্ট্রীয় সম্পদ উদ্ধার করে নিরন্ন মানুষের খাদ্য জোগান দেবে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠনকারীদের আইনের আওতায় আনার রাষ্ট্রীয় কর্তব্য সম্পন্ন করবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
আশা করছি দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পুনরায় গতিশীল করার মাধ্যমে আপনি ঘুণে ধরা রাষ্ট্রব্যবস্থা বদল করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করবেন।
আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
শুভেচ্ছান্তে
আ স ম আবদুর রব
২ মে ২০২০
উত্তরা,ঢাকা।