জেলার খবর

নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁওয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের জীবন যাপন চলে বুটমুড়ি বিক্রি করে

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁওয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের জীবন যাপন চলে বুটমুড়ি বিক্রি করে

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার সাদীপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও চোত্রাপাশা গ্রামের হেলাল উদ্দিন খন্দকার।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একজন তরতাজা যুবক ছিলেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে যখন হাজার হাজার ছাত্র,জনতা, যুবক মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য ছুটে চলছেন তখন হেলাল উদ্দিন খন্দকারের আর ঘরে মন বসছে না। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন। পরিবারের অভিভাবকদের সম্মতি চাইলেন মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য।

কিন্তু পরিবারের সদস্যরা রাজী হতে চাইল না। কারণ হেলাল উদ্দিন খন্দকার গ্রামের অত্যন্ত গরীব ঘরের সন্তান, যুদ্ধে যাওয়ার মতো টাকা পয়সা বা সহায় সম্বল তাদের কাছে নাই। তবুও থেমে থাকেননি হেলাল উদ্দিন।

তিনি একটি স্বাধীন দেশ, স্বাধীন পতাকা ও স্বাধীন মানচিত্র অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য মনস্থির করলেন। নিজের ভিটেবাড়ি মাত্র ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করলেন আপন ভাইদের কাছে। ভাইয়েরা তখন কথা দিয়েছেন, যুদ্ধ শেষে টাকা ফেরত দিতে পারলে আবার তার ভিটে বাড়ি ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু পরিস্থিতি হল ভিন্ন। যুদ্ধ শেষে হেলাল উদ্দিন বাড়ি ফিরে এলে তার ভাইয়েরা আর জমি ফেরত দেয়নি।

৯ মাস যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আলমগীর হোসেনের মা বাড়িতে বাড়ি ধান বানার কাজ করে সবাইকে নিয়া জীবিকা নির্বাহ করছে। মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, তারা ৩ ভাই ২ বোন। ইতিপূর্বে ১ বোন মারা গেছে। ভাই-বোনদেরকে নিয়ে অনেক কষ্টে তারা বড় হয়েছেন।

তিনি আরও জানান, অর্থাভাবে তারা কেউই লেখাপড়া করতে পারেনি। আলমগীর হোসেনের সংসারেও ৩ ছেলে ১ মেয়ে। তারাও লেখাপড়া করতে পারেনি অর্থাভাবে।
একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে আলমগীর হোসেন অথবা তার পরিবারের কেউই মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় চাকুরি বা কোন সুযোগ-সুবিধা পায় না। আলমগীর হোসেন এখন বাড়ির সামনে একটি টং দোকানে বুটমুড়ি বিক্রি করে কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করছে।

তিনি আরও জানান, তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিন খন্দকার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ২৫০০ টাকা সরকারিভাবে সম্মানি পেতেন। এখন তার মা সাফিয়া খাতুন ১২ হাজার টাকা সম্মানি পান। এই দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করছে তার মা। আলমগীর হোসেনের ছেলেরা ছোট বয়সেই বাবার সাথে রোজগার করতে নেমে গেছে। আলমগীর হোসেন যখন তার বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবার স্মৃতিচারণ করছিলেন তখন সে বার বার ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে চোখের পানি ঝড়াচ্ছিলেন।

বলছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে তার চাচাদের টাকা পরিশোধ করলেও তারা আজ অবদি জমি বুঝিয়ে দেয়নি। এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button