শিক্ষাঙ্গন

করোনাভাইরাসে ঢাবির ১১ শিক্ষকের প্রাণহানি

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ১১ জন শিক্ষক মারা গেছেন। তাদের মধ্যে চারজন বর্তমান শিক্ষক এবং বাকি সাতজন অবসরপ্রাপ্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বর্তমান শিক্ষকদের মধ্যে সর্বশেষ গতকাল রোববার (৮ আগস্ট) উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. নাজমা চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ১৬ জুলাই দর্শন বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আবদুল মতীন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এর আগে গত বছরের ৩১ মে মারা যান পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাকিল উদ্দিন আহমেদ। আর চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল মারা যান পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম খান।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে, গত বছরের ৭ মে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাজমুল করিম চৌধুরী মারা যান। একই বছরের ১৪ মে মারা যান বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। পরে ১ ডিসেম্বর মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক সভাপতি ও অধ্যাপক ড. হাসনা বেগম এবং ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. রতন লাল চক্রবর্তী।

এছাড়া, চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক কে এম মোহসীন, ৮ এপ্রিল দর্শন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. গালিব আহসান ও ৩০ এপ্রিল গণিত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মো. আব্দুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যেও করোনাভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকজন। করোনায় মারা গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের মাস্টার্সের শিকার্থী কাকন মিয়া, টিএসসির সাবেক পরিচালক আলমগীর হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের প্রিন্সিপাল টেকনিক্যাল অফিসার জ্যোতির্ময় পাল।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কয়েকশ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের করোনাভাইরাস পজিটিভ হওয়ার পর তারা সুস্থ হয়েছেন। আবার অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা এখনও অসুস্থ রয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষের কাছে আক্রান্তের সঠিক কোনো হিসাব নেই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, গুণী শিক্ষকদের হারিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার শোকাহত। এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক ঘটনা। তাদের জীবন অনুসরণ করে আমাদেকেও সেভাবে তৈরি হতে হবে। আমরা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।

করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবসময় তাদের জন্য আমরা দোয়া করি। মসজিদে-মন্দিরেও তাদের জন্য দোয়া হয়। পরিবার চাইলেও দোয়ার আয়োজন করতে পারে।

মৃত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, এমন একটি সময় আমরা বেশিরভাগ শিক্ষকদের হারিয়েছি, যখন করোনার তীব্র সংক্রমণ। তাদের জানাজায়ও অংশগ্রহণ করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপাচার্যের নির্দেশে তাদের অবদান, কর্ম স্বীকার করে জীবনবৃত্তান্ত রেকর্ড করা হয়েছে এবং শোকবার্তা পাঠানো হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে এ বিষয়গুলো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া, আমরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button