ইরাকে নিজেদের যুদ্ধ মিশন সমাপ্তির ঘোষণা বাইডেনের
অবশেষে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইরাকে ‘যুদ্ধের দায়িত্ব সমাপ্ত’ করার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ১৮ বছর ধরে চলা এই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।গতকাল সোমবার ওয়াশিংটন সফররত ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল কাধিমির সঙ্গে সাক্ষাতে হোয়াইট হাউসে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে মার্কিন বাহিনী তাদের মিশন শেষ করলেও ইরাকি বাহিনীকে আত্মরক্ষার কাজে প্রশিক্ষণ, উপদেশ ও পরামর্শ দেয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে। ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফরে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার। কাধিমি এবং বাইডেনের মধ্যে আলোচনার পরপরই এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হয়।
২০২১ সালের শেষ নাগাদ ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ মিশনের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। অর্থাৎ মার্কিন সেনা মোতায়েনের ১৮ বছরের বেশি সময় পর দেশটি থেকে সেনা সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন আগস্টের শেষ নাগাদ আফগানিস্তান থেকে সর্বশেষ মার্কিন সেনা সদস্যদেরও প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। এর ফলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তার শাসনামলে যে দুটি যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেসব যুদ্ধ মিশনের সমাপ্তি ঘটাচ্ছেন।
ওভাল অফিসে বাইডেন ও কাধিমি প্রথমবারের মতো সরাসরি সাক্ষাৎ করলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরাকের মধ্যে কৌশলগত আলোচনার অংশ হিসেবেই তারা বৈঠক করেছেন। ইরাকে বর্তমানে ২ হাজার ৫শ সেনা মোতায়েন রয়েছে, যারা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অবশিষ্ট সদস্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে স্থানীয় সেনাদের সহায়তায় ভূমিকা রাখছে।
কাধিমির সঙ্গে আলোচনার পর সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাইডেন বলেন, ‘ইরাকে আমাদের ভূমিকা থাকবে…প্রশিক্ষণ, সহায়তা এবং আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করা। কিন্তু চলতি বছরের শেষ নাগাদ আমরা আমাদের যুদ্ধের মিশন শেষ করতে যাচ্ছি।’
গত বছর ইরাকের রাজধানী বাগদাদে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাশেম সোলেইমানি এবং ইরান সমর্থিত একটি শিয়া মুসলিম মিলিশিয়ার নেতা মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর ইরাকে মার্কিন বাহিনীর অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়।
ইরান সমর্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো ইরাক থেকে মার্কিন জোটের সব বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানায়। ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে ইরাকের। অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফলে ওয়াশিংটনে কাধিমির এবারের সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ইরাকে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মার্কিন অবস্থান লক্ষ্য করে হামলার সংখ্যা বেড়ে গেছে। চলতি বছর এসব অবস্থানে প্রায় ৫০ দফা রকেট হামলা চালানো হয়েছে। এর আগে ইরাকি বিশেষজ্ঞ সাজেদ জিয়াদ বলেন, যদি ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কোনো ঘোষণা দেয়া না হয় তবে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে ইরানপন্থি গ্রুপগুলোর হামলা বেড়ে যাবে।
ইরাকে বেশিরভাগ মার্কিন সেনা মোতায়েন হয়েছে ২০১৪ সালে। এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় গত বছরের আগস্টে হোয়াইট হাউসে কাধিমিকে স্বাগত জানানো হয়।
বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পর কাধিমি বলেন, আজ আমাদের সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। অর্থনীতি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ আরও অনেক বিষয়ে আমাদের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে। তিনি জানান, ইরাকে এখন আর বিদেশি সেনার প্রয়োজন নেই।