বেনাপোল সীমান্তে চামড়া পাচার রোধে বাড়তি সতর্কতা জারি
যশোরের বেনাপোল সীমান্ত পথে ভারতে চামড়া পাচার রোধে সতর্কতা জারি করেছে বিজিবি সদস্যরা। ইতোমধ্যে সীমান্তের অনেক পয়েন্টে বৃদ্ধি করা হয়েছে বিজিবির নজরদারি ও লোকবল। বন্দর এলাকাসহ স্থল ও রেলপথে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিজিবির পাশাপাশি সতর্ক রয়েছে পুলিশ বাহিনীও। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে এবার চামড়া পাচার হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
এদিকে পুঁজি সংকটে চাহিদা মত চামড়া কিনতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে চামড়া ব্যবসায়ীরা। যেহেতু ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের পশুর চামড়ার গুণগত মান উন্নত তাই ভারতে এদেশের চামড়ার দাম এবং চাহিদা দুটোই বেশি। এ কারণে বেশি লাভের আশায় ভারতে সীমান্ত পথে চামড়া পাচারের প্রবণতা আছে অনেক ব্যবসায়ীর মধ্যে। আগে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে কোরবানী পশুর চামড়া আটকের ঘটনাও ঘটেছে বহুবার।
চোরাকারবারিরা সাধারণত পণ্য আনা নেওয়ায় জন্য বেনাপোলের পুটখালী, গোগা, কায়বা, অগ্রভুলোট, রুদ্রপুর, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, ঘিবা, সাদিপুর, বড় আঁচড়া, কাশিপুর ধাণ্যখোলা ও রঘুনাথপুর সীমান্ত পথ ব্যবহার করে থাকে। একারনে এ এলাকা দিয়ে চামড়া পাচারের ঝুঁকি থাকায় নজরদারিও বাড়িয়েছে বিজিবি।
যশোরের শার্শা উপজেলার সামটা গ্রামের চামড়া ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম জানান, ‘করোনা এই মহামারীর মধ্যে আমাদের চামড়া ব্যবসায়ীদের দুরাবস্থায় মধ্যে দিন কাটছে।’ তারা তাদের পুঁজির স্বল্পতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘চাহিদা মত চামড়া কিনতে পারবো কিনা দুশ্চিন্তা আছি। এবার ঈদে সরকার কর্তৃক চামড়ার দাম ঢাকায় বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪/৩৫ টাকা। ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ থেকে ১৮ টাকা প্রতি বর্গফুট। যা ঐমূল্যে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চামড়া কিনলে অন্যান্য খরচ করে লাভ হবে না। তবে চামড়ার মুল্য আর একটু বেশি হলে ভালো হতো।
শার্শা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) বদরুল আলম ও বেনাপোল পোর্ট থানা ওসি মামুন খান বলেন, ‘দেশে চামড়ার মূল্য ভারত অপেক্ষা কম থাকায় সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচারের সম্ভাবনা থাকে। ফলে পাচার রোধে পুলিশ সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে চামড়ার বাজারদর বেশি সেজন্য ব্যবসায়ীরা যাতে চামড়া পাচার করতে না পারে সেদিকে পুলিশের সর্বোচ্চ নজরদারি আছে।
যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সেলিম রেজা বলেন, ‘কোরবানি ঈদে চামড়া পাচাররোধে এবার সীমান্তে বিশেষ বিশেষ পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব পয়েন্টে বিশেষ টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে অবৈধপথে পাচার না হতে পারে। এছাড়া শহর থেকে যাতে চামড়া সহজেই সীমান্তে পৌঁছাতে না পারে তার জন্য বিজিবি চেকপয়েন্টগুলোতে নজরদারি জোরদার করেছে। এছাড়াও বিজিবির নিজেস্ব গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
এসময় তিনি আরও জানান, ‘বিজিবি প্রথম থেকেই যে কোনো পাচার প্রতিরোধে সতর্ক রয়েছে। তবে কোরবানি পশুর চামড়া যাতে পাচার না হয় তাতে আগামী ২০ জুলাই থেকে সীমান্তে বিজিবির সর্বোচ্চ নজরদারি বাড়াবে। এছাড়া অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে পাচার প্রতিরোধে কাজ করবে বিজিবি।
শার্শা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা বলেন, কোরবানির চামড়া এবার পাচার হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই কারণ বিজিবি টহল টিম জোরদার আছে। এছাড়া পশুর কাঁচা চামড়া রপ্তানির জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয় সচিব ও ডিসি মহোদয় কোরবানি পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং চামড়া রপ্তানিতে নিদের্শনা দিয়েছেন। শিল্প মন্ত্রনালয় থেকে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এই মূল্যে চামড়া ক্রয় হবে এবং বিসিকের পর্যাপ্ত পরিমাণ লবণ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিভিন্ন আর্থিক সংগঠনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।