বাঁশখালীতে ব্যার্থ এক প্রেমিক কুপিয়ে হত্যা করল বৈদ্য মহিলাকে
এনামুল হক রাশেদী, বাঁশখালী উপজেলা প্রতিনিধি-(চট্টগ্রাম)
বাঁশখালীতে ব্যার্থ এক প্রেমিক কুপিয়ে হত্যা করল বৈদ্য মহিলাকে
চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায় ব্যার্থ এক প্রেমিক যুবক দা দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করল এক মহিলা বৈদ্যকে। এ ঘটনায় মারাত্বকভাবে দায়ের কোপে জখম হয়েছে আরো ৩ জন।
এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে সমগ্র উপজেলায়।উত্তেজিত জনতা খুনি যুবককে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে। খুনি যুবক মোহা: এহসান(২২) শীলকূপ ইউনিয়নের মাইজ পাড়ার মো. ইব্রাহীম প্রকাশ বদর আমিনের ছেলে। নিহত ফাতেমা বেগম গীতা মধ্যম শীলকূপের মোস্তাক আহমদ শিকদারের স্ত্রী।
১২ জুলাই’২১ ইং সোমবার সকাল ৭টায় বাঁশখালীর শীলকূপ ইউনিয়নের টাইমবাজার সংলগ্ন গন্ডামারা সড়কের দাশ পাড়ায় নির্মম ও লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে। ঘটনার বিবরনে জানা যায়, খুনি এহসান প্রেমিক কব্জায় আনার জন্য নিহত বৈধ্য ফাতেমার কাঁছে ধর্না দিয়েছিল। বৈদ্য ফাতেমাও এহসানকে আশ্বস্থ করেছিল সময়ের ব্যবধানে তার প্রেমিক তার কাঁছে বৈশ্যতা স্বিকার করে তার বধু হয়ে চলে আসবে।
বৈদ্য ফাতেমাও তার তন্ত্র-মন্ত্র ও তাবিজ-দোয়া দিয়ে চেস্টার পর চেস্টা চালিয়ে আসছিল। কিন্তু ততক্ষন থর সৈলনা প্রেমিক যুবক এহসানের। এহসান নামের এক যুবক বৈদ্যের কাছ থেকে বার বার তাবিজ নিয়েও প্রেমে সফল না হওয়ায় অবশেষে উত্তেজিত হয়ে ‘দা’ দিয়ে উপযুর্পরি কুপিয়ে হত্যা করেছে নারী বৈদ্য ফাতেমা বেগম প্রকাশ গীতাকে(৪২)।
ওই সময় ফাতেমাকে বাঁচাতে গিয়ে এহসানের কোপে আরও গুরুতর আহত হয়েছেন বৈদ্যের বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস পাখি(২০), তাদের গৃহপরিচারিকা রাবেয়া বেগম(৩৫), গৃহপরিচারিকার কন্যা বৃষ্টি (১০)সহ তিনজন। ওই তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শরীরও দা’র কোপে মারাত্বকভাবে জখম হয়েছে।
নিহত ফাতেমা বৈদ্য বাঁশখালীর পুঁইছড়ি ইউনিয়নের নাপোড়া গ্রামের মৃত মনিন্দ্র দাশের কন্যা গীতা দাশ। শীলকূপের মোস্তাক আহমদ শিকদারকে প্রেম করে বিয়ে করার আগে তিনি গীতা বৈদ্য নামে পরিচিত ছিলেন। বিয়ের পর ধর্ম পরিবর্তন করে নাম ফাতেমা বেগম রাখলেও স্থানীয়ভাবে তাকে গীতা বৈদ্য নামে চেনেন।
ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(দক্ষিণ) মো. জাহাঙ্গীর, সহকারি পুলিশ সুপার ( আনোয়ারা সার্কেল) হুমায়ুন কবির, বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সফীউল কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিভাবে খুন হলেন ঃ প্রত্যেক্ষদর্শী ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৭ টা বাড়ির সবাই ঘুমে। খুনি মোঃ এহসান টাইম বাজার সংলগ্ন গন্ডামারা সড়কের দাশ পাড়ায় এসে বন্ধ ঘরের দরজা খুলতে অনুরোধ করলেন।
ওই সময় বৈদ্যের ছোট ছেলে মো. বাদশা সিকদার (১৬) দরজা খুলে দিয়ে পাশের বাজারে নাস্তা করতে চলে যান। ঘরে কোন পুরুষ সদস্যও ছিল না। ওই সময় এহসানের হাতে ছিল একটি ডাব। ওই ডাব পড়িয়ে পান করার উদ্দেশ্যে বাদশার মা ফাতেমা বেগমকে এহসান ‘আপা’ ডেকে ঘুম থেকে উঠালেন। তিনি ঘুম থেকে উঠে ডাবটা এহসানকে পড়িয়ে দিলেন। পড়ানো ডাব কাটার জন্য এহসান বৈদ্য ফাতেমাকে একটি দা দিতে বললেন।
ওই দা দিয়ে ডাব কেটে পানি খেয়ে এহসান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বৈদ্য ফাতেমাকে বললেন আগের তাবিজগুলো দিয়ে কিছুই হয়নি। আমি যেই মেয়েটিকে ভালোবাসি সে আমার সাথে কথাও বলে না। বরঞ্চ আমি নানা সব উদ্ভট স্বপ্ন দেখছি। জবাবে ফাতেমা বললেন আরও অনেকদিন তাবিজ ও ডাব পড়া নিতে হবে তাহলে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। এই কথা বলার সাথে সাথে ফাতেমাকে এহসান শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে মারাত্বকভাবে জখম করে। পুরো ঘর রক্তে রাঙিয়ে যায়।
এসময় ঘরে থাকা বৈদ্যের বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস পাখি(২০), তাদের গৃহপরিচারিকা রাবেয়া বেগম(৩৫), গৃহপরিচারিকার কন্যা বৃষ্টি (১০) বৈদ্য ফাতেমাকে বাঁচাতে আসলে ধারালো দা’য়ের কোপে ওরাও গুরুতর আহত হয়। তাদের চিৎকারে টাইমবাজারের শতাধিক লোক এগিয়ে এসে খুনি মো. এহসানকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে খুনিকে গ্রেফতার করেন।
গুরুতর আহত ৪ জনকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান গ্রামবাসী। ওইখান থেকে ৪ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। চমেকে নিয়ে যাবার পথে ফাতেমা মারা যান। অন্যরা চমেকে চিকিৎসাধীন আছে। বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সফীউল কবির বলেন,‘ খুনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৈদ্য ফাতেমার সাথে তাবিজ ও ডাব পড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে এহসান ঘরে থাকা দিয়ে ফাতেমাসহ অন্যদের কোপায়। ওই ঘটনায় ফাতেমা মারা গেলেও অন্যরা চিকিৎসাধীন আছে। এহসানকে দা’সহ গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।