প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকাই বিক্রি করবে টিসিবি
সয়াবিন তেলের দাম বাড়াচ্ছে না ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি)। স্থানীয় উৎস থেকে ক্রয় ও মজুত করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেল লিটারে ১০০ টাকায় বিক্রি করছিল টিসিবি। ৫ জুলাই থেকে লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেটি থেকে সরে এসেছে বাজারে নিত্যপণ্য সরবরাহকারী রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠান।
কঠোর বিধিনিষেধ, কোরবানির ঈদ, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি এবং ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় টিসিবি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা।
২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য সংস্থাটির বিক্রয় কার্যক্রমে ১০০ টাকা লিটার নির্ধারণ করা ছিল। কিন্তু এতে দেখা দেয় বিপত্তি।
ধারাবাহিকভাবে সংস্থাটির ভর্তুকি বেড়ে যায়। আবার বাজারমূল্যের সঙ্গে টিসিবির তেলের ব্যাপক মূল্য পার্থক্য তৈরি হয়। এতে ভর্তুকি মূল্যের তেল কালোবাজারে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
এমন পরিস্থিতিতে গত ১০ জুন টিসিবির পর্ষদ সভায় যেকোনো ব্র্যান্ডের প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব গ্রহণ হয়েছিল। এটি সংস্থাটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী স্তর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও অনুমোদিত হয়। সিদ্ধান্ত হয় নতুন অর্থবছর থেকে এই বর্ধিত দাম কার্যকরের।
৫ জুলাই সেই দাম কার্যকরের দিন ছিল। কিন্তু এর আগেই পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলের আন্তর্জাতিক বাজার দাম কমতে শুরু করে। এর প্রভাব পড়ে দেশীয় বাজারেও। পণ্যটির বেসরকারি উৎপাদক ও বিপণনকারীরা সরকারের অনুরোধে মূল্য সমন্বয়ের জন্য সব ধরনের তেলে লিটারে ৪ টাকা দাম কমায়।
সরকার করোনা, শাটডাউন, কোরবানির ঈদ পরিস্থিতিতে ভোজ্যতেলের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ধরে রাখতে চায়। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজার নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী টিসিবি বর্ধিত দাম থেকে সরে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত জুনে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান এ সংক্রান্ত দুইটি চিঠি দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে, যার একটি ছিল দাম বাড়ানো এবং অন্যটি সেই বাড়তি দাম থেকে আগের দামে ফিরে যাওয়া ইস্যুতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি অনুবিভাগ) এ এইচ এম সফীকুজ্জামান বলেন, চিঠি দেয়ার সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় দু্ইটি প্রস্তাবই অনুমোদন করেছে মন্ত্রণালয়। এর মানে হচ্ছে সার্বিক পরিস্থিতিতে আগে টিসিবির তেলে লিটারে ১০ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছিল। এখন একই কারণে বর্ধিত দাম কার্যকর করা থেকে সরে আসা হয়েছে। অর্থাৎ টিসিবির তেলে প্রতি লিটার ১০০ টাকাই বহাল থাকছে।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া জানান, সিদ্ধান্ত পর্যায়ে যেটাই হোক, ভোক্তাপর্যায়ে টিসিবির তেলের দাম আগের মতো প্রতি লিটার ১০০ টাকাই থাকছে। পরে পরিস্থিতি বিবেচনার আগ পর্যন্ত তা বহাল থাকবে।
স্থানীয় উৎস থেকে টিসিবি তীর, ফ্রেশ, পুষ্টি, রূপচাঁদাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন কিনছে। বর্তমানে টিসিবির গুদামে ১ কোটি ২৯ লাখ ৭ হাজার ৮২০ লিটার সয়াবিন তেলের মজুত আছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবি এ তেল ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রি করবে।
বর্তমানে পরিচালন ব্যয় বাবদ ট্রাকসেল ডিলারদের ৫০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে হলে প্রতি লিটারে ৫ টাকা, ৫১ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে হলে ৬ টাকা এবং ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের বাইরে হলে ৭ টাকা কমিশন দিচ্ছে।