জেলার খবর

টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রের দ্বিতীয় দফা অগ্নিকাণ্ডের ১৬ বছর পূর্তি আজ

মোঃ আলা উদ্দিন, দোয়ারা উপজেলা প্রতিনিধি-(সুনামগঞ্জ)

টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রের দ্বিতীয় দফা অগ্নিকাণ্ডের ১৬ বছর পূর্তি আজ

টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রের দ্বিতীয় দফা অগ্নিকাণ্ডের ১৬ বছর পূর্তি আজ। ২০০৫ সালের ২৪ জুন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে দ্বিতীয় বারের মতো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর আগে প্রথম দফা অগ্নিকাণ্ড হয় একই বছরের ৭ জানুয়ারি।

সেই থেকে প্রতিবছর ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন মনে রেখেছে টেংরাটিলাবাসী। ফেলে আসা এক বিভীষকাময় দিনের ভয়াল স্মৃতি টেংরাটিলার প্রতিটি মানুষকে এখনো তাড়া করে বেড়ায়।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি প্রথম দফা অগ্নিকাণ্ডের পর চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বের হতে থাকে গ্যাসের প্রবাহ। বাড়তে থাকে গ্যাসের চাপ। গ্যাসের এই প্রবাহ ও চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে প্রথম বিস্ফোরণের স্থান থেকে ১০০ মিটার পশ্চিম দিকে দ্বিতীয়বারের মতো রিলিফ কূপ খননের কাজ শুরু করা হয়। ১ জুন রাত থেকে এবার এই কূপ খননের কাজ শুরু করে মার্কিন পাকার গ্রুপ।

এসময় রিলিফ কূপের চারপাশে ৭টি আউটলেট বসানো হয়। নতুন করে নিরাপত্তা জনিত কারণে গ্যাসক্ষেত্রের পার্শ্ববর্তী ৭৭ পরিবারকে নিরাপদ দূরত্বে স্থানান্তরিত করা হয়। খননকাজ চলাকালীন সময়েই ২৪ জুন শুক্রবার রাতে রিলিফ কূপে দ্বিতীয় দফা অগ্নি বিস্ফোরণ ঘটে। এবার যেই উদ্দেশ্যে খননকাজ পরিচালনা করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণভাবে ভেস্তে যায়। গ্যাসের চাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

অল্প সময়ই ৭ আউটলেটের মধ্যে ৫টি বালি ও কাদায় বন্ধ হয়ে যায়। মূল রিগের চারপাশ দিয়ে প্রচন্ড বেগে গ্যাস বের হতে থাকে। অভিযোগ রয়েছে খনন কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও নকশার ত্রুটি থাকার কারণে এখানে দ্বিতীয় বার ব্লো-আউট হয়। গ্যাসের চাপের তীব্রতা বেড়ে গেলে কানাডীয়ান গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানী নাইকো এবারও তা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। এরপরই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। জানা যায়, এবার নিরাপত্তার কারণে ইচ্ছাকৃত ভাবেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় দফা অগ্নিকাণ্ডে আগুন প্রায় ২০০-২৫০ ফুটের মধ্যে ওঠানামা করে।

এদিকে দুর্ঘটনার ১৬ বছরেও বন্ধ হয়নি টেংরাটিলার গ্যাস ফিল্ডের গ্যাস উদগীরণ। দুদফা অগ্নিকাণ্ডে পরিবেশ ও জনমানুষের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছিল তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি স্থানীয়রা। অন্যদিকে গ্যাসক্ষেত্রটি দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে অঘোষিত পরিত্যক্ত অবস্থায় অবহেলা অযত্নে পড়ে থাকায় গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ও মালামাল বিনষ্ট হচ্ছে। গ্যাস উত্তোলন আহরণ বন্ধ থাকায় বুদ বুদ আকারে গ্যাস বের হয়ে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।

টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বীরপ্রতীক বলেন, গ্যাস ফিল্ড ট্রাজেডির সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনো আমাদেরকে তাড়া করে বেড়ায়। আমরা বিশ্বাস করি এখনো এখানে অনেক গ্যাস মজুদ রয়েছে। সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আবারো গ্যাসক্ষেত্রটি চালু হবে বলে আশাবাদী। গ্যাসক্ষেত্রটি দ্রুত চালুর দাবি জানাই।

শান্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা জাতীয় কৃষক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘এখনো গ্যাসক্ষেত্রের আশপাশে যেভাবে গ্যাস উদগীরণ হচ্ছে আমাদের ধারণা এখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের সম্ভার রয়েছে। গ্যাসক্ষেত্রটি দ্রুত পুনঃখনন ও এটি চালু করলে গ্যাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।’

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, ‘গ্যাস ক্ষেত্রের ব্যাপারে নতুন কোনো নির্দেশনা নেই। তবে ২৩ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওলজি বিভাগের তিনজন অধ্যাপক ও আটজন শিক্ষার্থীর একটি টিম টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে অবস্থান করে সরেজমিনে পরিদর্শন করছে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button