আরো...

প্রস্তাবিত বাজেটে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে বৈষম্য, হিন্দু শাস্ত্রীয় আইন পরিবর্তনের প্রচেষ্টা

বিজয় চন্দ্র সরকারঃ

প্রস্তাবিত বাজেটে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে বৈষম্য, হিন্দু শাস্ত্রীয় আইন পরিবর্তনের প্রচেষ্টা

দেশের বিভিন্ন স্থানে মঠ মন্দির ভাংচুর ,জমি দখল,হামলা ,খুন লুটপাটের প্রতিবাদে ও রথ যাত্রায় ১ দিনের ছুটির দাবীতে ১৯ জুন ১০২১ রোজ শনিবার সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি নসরুল হামিদ বিপু হলে সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বক্তব্য দেয়।বক্তারা বলেন –

২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ধর্ম মন্ত্রনালয়ের জন্য চলমান প্রকল্প ও অন্যান্য খাতে ১৫,০৫৪.০৩ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। যার মধ্যে সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ২৯০.০৮ কোটি টাকা; যা মোট প্রকল্প বরাদ্দের ১.৯৩ শতাংশ মাত্র। সরকারী পরিসংখ্যানে বাংলাদেশে সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের বাস দেখানো হয়েছে ১১.৮ %।

সে হিসাবে বরাদ্দ থাকার কথা ছিল ১৭৭৬.৩৭ কোটি টাকা। যদিও বাস্তবে এদেশে সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের বাস ১৭% । সে হিসাবে বরাদ্ধ থাকার কথা ২২৫৮.১০ কোটি টাকা। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বৈষম্য কতটা প্রকট তা এই প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে। স্বাধীনতা পুর্ব হতে হিন্দু সম্প্রদায় আওয়ামীলীগকে শতভাগ ভোট দিয়ে আসছে।

অন্য সময়ের বঞ্চনা হিন্দুরা মেনে নিলেও বর্তমান স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি, ধর্মনিরপেক্ষতার দাবীদার দলটির কাছে এমন উপেক্ষা ও বৈষম্যকর আচরন হিন্দু সম্প্রদায় কোন মতেই মেনে নিতে পারছে না।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সীমাহীন বঞ্চনার বিষয় আপনাদের জানা আছে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পরপরই হিন্দুদের জমি কেড়ে নেয়ার জন্য আইন পাশ করে জমিদারী কেড়ে নেয়া হয়। যদিও পশ্চিম পাকিস্থানে জমিদারী অব্যাহত থাকে।

পার্লামেন্টে সংখ্যালঘুদের জন্য ৭২ টি সংরক্ষিত আসন কৌশলে কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর ১৯৬৪ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিত হামলা, খুন ধর্ষণ লুঠপাটে হিন্দুদের ব্যাপকহারে দেশত্যাগে বাধ্য হয়। ১৯৬৯ সালের নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায় ব্যপক হারে

আওয়ামীলীগকে ভোট দেয় স্বাধীন অসাম্প্রদায়িক দেশ পাওয়ার আশায়। এর ফলে পাকিস্থানী গোষ্ঠী একতরফাভাবে হিন্দুদের উপর হামলা, অগ্নি সংযোগ ধর্ষনে মেতে উঠে। এক কোটিরও বেশী মানুষ দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। দীর্ঘ ৯টি মাস ছোট্ট একটি তাবুর নীচে বসবাস করে স্বাধীন দেশে ফিরে আসে।

কিন্তু দুর্ভাগ্য স্বাধীন দেশের প্রথম দুর্গা পুজায় বেশীরভাগ পুজা মন্ডপের প্রতিমা ভাংচুর করা হয়। ১৯৭৩ সালের ১৩ মে ক্ষতিগ্রস্থ রমনা কালি মন্দির বুলডোজার দিয়ে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়। পাকিস্থান সরকারের জারীকৃত মৃত শত্রু সম্পত্তি অর্ডিন্যান্স পূনরায় জারী করা হয়। ১৯৭৪ সালের পহেলা জুলাই অর্পিত সম্পত্তি নামে আইন পাশ করে হিন্দুদের ২৬ লক্ষ একর সম্পত্তি দখল করে নেওয়া হয়; যা আজও হিন্দু সম্প্রদায় ফিরে পায়নি।

একই সংগে বাংলাদেশকে পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ঘোষণা করে ১৯৭৪ সালেই বাংলাদেশকে ওআইসি সদস্য করা হয়, এরই ধারাবাহিকতায় জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম যুক্ত করেন এবং এরশাদ রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম ঘোষণা করেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ৭২ এর সংবিধান ফেরৎ আনার ঘোষনা দিলে হিন্দু সম্প্রদায় পূনরায় আশার আলো দেখতে পায়। কিন্তু তা ছিলো মূলতঃ মরিচিকা।

১৯৯১ সালে নির্বাচন পরবর্তী দেশের দক্ষিনাঞ্চলে ব্যপকভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা লুঠপাট হয়। এরপর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামের রাউজান ফটিকছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নাসির নগর, যশোরের অভিয়নগর, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জের শাল্লা, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর সহ সারাদেশে কিছু সময়ের ব্যবধানে পরিকল্পিত হামলা, খুন, হত্যা প্রচেষ্টা, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর চালিয়ে হিন্দুদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। ফলে স্বাধীনতার প্রাক্কালে ২২% হিন্দু থাকলেও বর্তমানে তা সরকারী হিসাবে ১১.৮% এ নেমে এসেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button