শার্শা-বেনাপোলে বেড়েছে জ্বর-কাশির প্রাদুর্ভাবঃ বাড়ছে করোনা সংক্রমণ
এসএম স্বপন, জেলা প্রতিনিধি-(যশোর)
শার্শা-বেনাপোলে বেড়েছে জ্বর-কাশির প্রাদুর্ভাবঃ বাড়ছে করোনা সংক্রমণ
যশোরের শার্শা বেনাপোলে কয়েক দিনের ব্যবধানে জ্বর, সর্দ্দি ও কাশির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে অধিক হারে। একই সঙ্গে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের সংখ্যাও।
প্রচন্ড রোদ, আবার কখনও বৃষ্টিতে শীতল হাওয়া নিয়ে চলছে আবহাওয়া। আবহাওয়ার এ বিরূপ প্রভাবে জ্বর, সর্দ্দি, কাশি ও নিউমোনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। প্রতিটি বাড়িতে এক-দুইজন জ্বর, সর্দ্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেনই।
অনেকেই করোনা আক্রান্তের ভয়ে পল্লী চিকিৎসকদের পরামর্শে গোপনে চিকিৎসা করছেন। এরপরও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যাদের অধিকাংশ জ্বর, সর্দ্দি, কাশি ও নিউমোনিয়া।
আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। জ্বর, সর্দ্দি ও কাশিতে আক্রান্তরা জানান, আগের তুলনায় এ জ্বরের প্রকোপ অনেক বেশি। জ্বরের সঙ্গে সমস্ত শরীরের মাংসপেশী ও হাড়ের জয়েন্টে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়।
কাশিতে বুকে ব্যথা হচ্ছে। অনেকের শ্বাসকষ্টও দেখা দিচ্ছে। যা প্রাথমিকভাবে করোনার লক্ষণ ভেবে অনেকেই আইসলোশনের ভয়ে, গোপনে পল্লী চিকিৎসকদের স্মরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পল্লী চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়া রোগীদের সংখ্যা গ্রামের বেশি। তবে শহরের লোকজন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে গেলে কেউ কেউ করোনা পরীক্ষা করে আইসলোশন থাকছেন। তবে তার সংখ্যা অনেক কম। আইসলোশনের ভয়ে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না অনেক রোগী।
আর জ্বর-সর্দ্দি-কাঁশিতে আক্রান্তরা আছে উৎকন্ঠায়। ফলে করোনার নমুনা পরীক্ষায় তাদের অনিহা বাড়ছে। এছাড়াও করোনা রোগী ও তার পরিবারকে অনেক স্থানে স্বাভাবিক ভাবে না নেয়ায় এবং পরিবারের সদস্যদের থেকে অন্যরা দূরে সরে যাওয়ায় করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে অনিহা দেখা যাচ্ছে।
বেনাপোল বাজারে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আরমান হোসেন বলেন, জ্বরে শরীরে এমন ব্যথা, আমার জীবনে কখনই দেখি নাই। পুরো শরীরে প্রচন্ড ব্যথা, কাশির কারণে বুকেও ব্যথা অনুভব হচ্ছে। দীর্ঘ ৪-৫ দিন জ্বরে ভুগছি। এখন জ্বর কিছুটা কমলেও কাশি এখনও আছে। সেই সাথে রয়েছে গায়ে ব্যথা।
বেনাপোল পোর্ট থানা গ্রাম ডাক্তার কমিটির সাঃ সম্পাদক ইব্রাহিম শেখ রুবেল বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পূর্বের তুলনায় সর্দি-কাশি-জ্বরের রোগী সংখ্যা বেড়েছে। তাদের অধিকাংশ শ্বাসকষ্ট ও মুখের স্বাদ-গন্ধ নির্ণয় করতে পারছে না। অধিকাংশ রোগীর সিনড্রোম দেখে মনে হচ্ছে করোনা পজিটিভ। কিন্তু করোনা টেস্ট না করায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা যতদূর পারছি চিকিৎসা দিচ্ছি। আর না পারলে বাকিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠাচ্ছি।
বাগআঁচড়া জোহরা মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন,জ্বর সর্দি কাশি নিয়ে ইদানীং বিপুল সংখ্যক মানুষ আসছেন। “আমাদের কাছে করোনাভাইরাস চিহ্নিতকরণের কিট না থাকায় সর্দি, জ্বর বা গলা ব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসা সন্দেহজনক রোগীদের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও যশোর সদর হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।”
ফার্মেসিতে সর্দি-কাশি-জ্বরের ওষুধ বিক্রি ব্যাপক বেড়ে গেছে জানিয়ে বেনাপোল ড্রাগ এসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব বজলুর রহমান বলেন, এখন উপজেলার বেশির ভাগ বাড়িতেই কেউ না কেউ জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত। তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন।
সেই সাথে এভাবে যত্রতত্র রোগীরা খোলামেলা ভাবে ঘুরে বেড়ানোয় করোনা সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা থাকছে। পাশাপাশি ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভারদের করোনা প্রতিরোধক জামা পরে, মালামাল খালাসের কথা থাকলেও, তারা তা না করে বিভিন্ন দোকানপাটে ঘুরে বেড়ানোয়, ভারতীয় ভ্যারিয়েট ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপক শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
তাই যারা সর্দি-কাশি-জ্বরে ভুগছেন তাদেরকে করোনা টেস্টের পরামর্শ দেন চেয়ারম্যান বজলু। সেই সাথে ভারতীয় ড্রাইভারদের যত্রতত্র ঘুরাঘুরি ব্যাপারে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলি জানান, এ পর্যন্ত উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৪৬ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে, যাদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন করোনা টেস্টও করা যাচ্ছে। বন্দর কেন্দ্রিক যাত্রীর কথা ভেবে ১৮ মে করোনা টেস্টের জন্য হাসপাতালে মেশিন বসানো হয়েছে। এখন এখানেই ‘র্যাপিড অ্যান্টিজেন’ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
“এরপরও অনীহার কারণে সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে টেস্টের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। যারা স্বেচ্ছায় টেস্টের জন্য আসছে তাদেরকেই কেবল পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এ সংখ্যাও কম না।”