কৃষি

সুনামগঞ্জ ছাতকে লিচুর বাম্পার ফলন বাজারমূল্যে চাষীরা খুশি

আব্দুছ ছালাম শাকিল, জেলা প্রতিনিধি-(সুনামগঞ্জ)

সুনামগঞ্জ ছাতকে লিচুর বাম্পার ফলন বাজারমূল্যে চাষীরা খুশি

সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকে বাগানের গাছে গাছে ঝুলছে রসালো ফল লিচু। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষীরা এ মৌসুমে লিচু বিক্রি করে লক্ষ-লক্ষ টাকা আয় করেছেন। করোনার কারণে এখানের মৌসুমী ফল লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাটে পাঠিয়ে বিক্রি করা হয়নি।

ফলে ছাতক-দোয়ারার সব হাটবাজারে এ অঞ্চলের উৎপাদিত লিচু বিক্রি হচ্ছে। এখানের উৎপাদিত লিচু দিয়ে ছাতক-দোয়ারার মানুষের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন চাষীরা। প্রতিদিন গড়ে ছাতকবাজার সহ এখানের বাজারগুলোতে কয়েক লক্ষ টাকার স্থানীয় জাতের লিচু বিক্রি হয়।

ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর, গোদাবাড়ী, চানপুর, বড়গল্লা, কচুদাইড়, রাজারগাও, এবং দোয়ারাবাজার উপজেলা সদর ইউনিয়নের লামাসানিয়া, পরমেশ্বরীপুর, বীরসিংহপুর, সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলা ও আলীপুর সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করা হয়ে থাকে। প্রতিদিন গড়ে ছাতক -দোয়ারাবাজার সহ এখানের হাটগুলোতে কয়েক লক্ষ টাকার স্থানীয় লিচু বিক্রি হয়। পুরো মৌসুমে এখানের চাষীরা কোটি টাকার লিচু বিক্রি করেন।

লিচু চাষী মানিকপুর গ্রামের আরব আলী, গোদাবাড়ী গ্রামের আব্দুল কাদির, রাজারগাও গ্রামের আব্দুল মালিক, চানপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়া ও লামাসানিয়া গ্রামের হেলাল উদ্দিন জানান, লাভজনক লিচু চাষে জড়িয়ে এখানের শতাধিক চাষী এখন স্বাবলম্বী। লিচুর ভালো বাজারমূল্য রয়েছে এখানে। চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন আশানুরূপ হয়েছে। ছাতক শহর থেকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে ৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে টিলা বেষ্টিত চৌমুহনী বাজার ও লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত মানিকপুর।

একটু এগুলেই দোয়ারাবাজারের লামাসানিয়া গ্রাম। এসব গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচুর গাছ। বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করেছেন এলাকার শতাধিক পরিবার। বর্তমান সময়ে ছাতক-দোয়ারাবাজারের এ এলাকার লিচু বাগানের গাছে-গাছে ঝুলছে দেশীয় জাতের পাকা রসালো ফল লিচু। যা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। এখানের লিচু বাগান দেখতে প্রায়ই দর্শনার্থীদের ভীড় জমে।

ব্রিটিশ জমিদার আমল থেকেই নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর ও আশপাশ এলাকার টিলাভূমিতে লিচু চাষ শুরু হয়। বেশ কয়েকবছর ধরে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরি করে লিচুর চাষ করা হচ্ছে। লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন-দিন এর পরিধি বেড়েই চলছে। স্থানীয়রা জানান, ব্রিটিশ আমলে গৌরীপুরের জমিদার হরিপদ রায় চৌধুরী ও তার ভাই শান্তিপদ রায় চৌধুরীর কাছারিবাড়ি ছিলো মানিকপুর গ্রামে। এ কাছারি বাড়িতে জমিদারের লোকজন কয়েকটি লিচুগাছ রোপন করেছিলো।

কাছারিবাড়িতে শতবর্ষী তিনটি লিচু গাছ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। কাছারিবাড়িতে বহু আগে গ্রামবাসী জামে মসজিদ নির্মাণ করেছেন। মূলত ওই কাছারিবাড়ি থেকেই গ্রামজুড়ে লিচু চাষ ছড়িয়ে পড়ে। দিনে-দিনে আশপাশ গ্রাম সহ বর্তমান দোয়ারাবাজার উপজেলার কয়েকটি গ্রামেও তা ছড়িয়ে পড়ে। গত ক’বছর ধরে উপজেলা কৃষি বিভাগও লিচু চাষে লোকজনকে উৎসাহী করছে এবং বিদেশী লিচুর চারা চাষীদের মাঝে বিতরণ সহ বিভিন্নভাবে সরকারী সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা দোয়ারাবাজার উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আব্দুল হামিদ জানান, তার নিজের বাড়িতেও লিচুর বাগান রয়েছে। ছাতকে থাকাকালে লিচু চাষে এলাকার মানুষকে উদ্যোগী করেছেন তিনি। লিচু চাষের জন্য এ অঞ্চলের মাটি উপযুক্ত হওয়ার কারণে তিনি সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক সহ কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে চাষীদের সহযোগিতা করেছেন। আগে লিচু চাষ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিলোনা। ফলে রাতে বাদুড়-কটকটি সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বাগানের লিচু খেয়ে ও নষ্ট করে ফেলতো। বর্তমানে বিদ্যুৎ পৌছে গেছে বাগানে-বাগানে।

চাষীরা রাতে লিচু রক্ষায় বাদুড়-কটকটি সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী তাড়িয়ে দিতে পারছে। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে চাষীরা লিচু নিয়ে বাজারে আসতে পারতো না। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। চাষীরা বিভিন্ন হাটে এনে লিচু বিক্রি করতে পারছেন। ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান ও দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসিন জানান, লিচু চাষীদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

অনেককে লিচু চাষে উদ্যোগী করা হয়েছে। তাদের সরকারী সহযোগিতাও দেয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। চাষীরাও পাচ্ছেন ভালো বাজার মূল্য। টিলা বেষ্টিত এ অঞ্চল লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে লিচুর বাগান করতে আগ্রহীদের সরকারি সকল সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানান এ দু’কর্মকর্তা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button