সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তিসহ ছয় দফা দাবিতে রাজপথ যশোরের সাংবাদিকরা
পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে সচিবালয়ে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে হেনস্থাসহ শারিরীক নির্যাতন ও সাজানো মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের ঘটনায় ফুসে উঠেছে গোটা দেশের সাংবাদিক সমাজ।
তারই ধারাবাহিকতায়, রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও নিপীড়নকারীদের বিচারসহ ছয় দফা দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন যশোরের সাংবাদিকেরা।
বুধবার (১৯ মে ২০২১) সকাল ১১টায় প্রেসক্লাব যশোরের সামনে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি কালেক্টরেট চত্বরে এসে শেষ হয়।
এসময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরা স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
৬ দফা দাবি হলো, অবিলম্বে জেষ্ঠ্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিশর্ত মুক্তি, তাঁর বিরুদ্ধে রুজু করা মামলা প্রত্যাহার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযুক্ত অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত, ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ বাতিল ও ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ এর বিতর্কিত ধারাসমূহ বাতিল করা।
যশোরের সাংবাদিকদের সাতটি সংগঠনের (প্রেসক্লাব যশোর, যশোর সংবাদপত্র পরিষদ, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইউজে), সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন যশোর ও টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন) যৌথ উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি একরাম উদ দ্দৌল্লা, প্রেসক্লাব যশোরের সম্পাদক আহসান কবীর বাবু, জেইউজের সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান, যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শেখ দিনু আহমেদ, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন যশোরের সভাপতি মনিরুজ্জামান ও টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন যশোরের পক্ষে জিয়াউল হক।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরা দুর্নীতির খবর প্রকাশ করবে, এটাই স্বাভাবিক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সেই দুর্নীতির খবর প্রকাশ করে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম এ দেশের জনগণের উপকার করেছেন। প্রশাসনের দুর্নীতিবাজের মুখোশ উন্মোচন করে দেশের উপকার করায় তিনি আজ যেভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তা নজিরবিহীন ও ন্যাক্কারজনক।
বক্তারা বলেন, রোজিনা ইসলাম একজন নির্ভীক ও দুর্নীতি সঙ্গে আপোষহীন সাংবাদিক। তার বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করা না হলে অপরাধীরাই উৎসাহিত হবে। তাই অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
বক্তারা প্রখ্যাত সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে ৬ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে কালেক্টরেট চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাাসান টুকুন।
উল্লেখ্য, ১৭ মে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। স্বাস্থ্য সচিবের পিএস সাইফুল ইসলামের কক্ষে ফাইল থেকে নথি সরানোর অভিযোগে তাকে ওই কক্ষে আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে পুলিশ স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের কক্ষ থেকে থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। এরপর মধ্য রাতে তার বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়। এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে।
১৮ মে তাকে আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। তবে আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।