ছাতকে সানি হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য, নারীঘটিত কারণেই খুন হয় সানি, মামলা পিবিআইতে স্থানান্তরের দাবি
আব্দুছ ছালাম শাকিল, জেলা প্রতিনিধি-(সুনামগঞ্জ)
ছাতকে সানি হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য, নারীঘটিত কারণেই খুন হয় সানি, মামলা পিবিআইতে স্থানান্তরের দাবি
সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকে প্রেমের কারণেই নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তরুণ যুবক সানি সরকার (২২) কে। সে পৌর শহরের ৭নং ওয়ার্ডের মন্ডলীভোগ (ঘোষবাড়ী) এলাকার বাসিন্দা কাজল সরকারের একমাত্র ছেলে।
হত্যা মামলার আটক প্রধান আসামী শোয়েব আহমদ (১৯) সুনামগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্ধিতে হত্যার বিবরণ তুলে ধরে। শোয়েব আহমদ উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের মুক্তিরগাঁও গ্রামের ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিনের ছেলে। সানি সরকার হত্যার ঘটনার বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক আনোয়ার মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সানি হত্যার পর প্রেমিকা শিপা আক্তার তার পরিবার নিয়ে শহর ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বহুল আলোচিত সানি হত্যার প্রধান আসামী শোয়েব বিজ্ঞ আদালতে দেয়া জবানবন্ধিতে জানায়, প্রায় দু’বছর ধরে সানি সরকারের সাথে দক্ষিণ মন্ডলীভোগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়ার কন্যা ছাতক সরকারী কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী শিপা আক্তারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
হত্যাকান্ডের প্রায় ৩ সপ্তাহ পূর্বে শোয়েবের সাথে নতুন করে প্রেমের সম্পর্ক তৈরী করে শিপা আক্তার। নতুন এই প্রেমের সম্পর্কে বাঁধা হয়ে দাড়ায় সানি সরকার। বিষয়টি জানতে পেরে সানি ও শোয়েবের মধ্যে একাধিকবার বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এসব দ্বন্দে বুধবার (২৮এপ্রিল) সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে সানি সরকারকে ডেকে নেয় শোয়েব ও তার সহযোগীরা। সেখানে আবারো সানির প্রেমিকা শিপাকে নিয়ে তুমুল ঝগড়া হয় দু’জনের মধ্যে। ঘাতক শোয়েব ও তার সহযোগীরা এক পর্যায়ে সানি সরকারকে বেদড়ক পিটিয়ে জখম করে ফেলে যায়।
তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নেয়ার ৪ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থার সানির মৃত্যু হয়। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় সানি সরকারের পিতা শোয়েবকে প্রধান আসামী করে এজহার নামীয় ৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমেই মামলার ২নং আসামী দক্ষিণ বাগবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ইসলাম উদ্দিনের ছেলে নাইম আহমদ (২০)কে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে সিলেট নগরীর মধুবন মার্কেটের পিছন থেকে প্রধান আসামী শোয়েব আহমদকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। সানি হত্যার প্রতিবাদে আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে বুধবার শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে সর্বস্থরের জনতা এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে। সুনামগঞ্জ শহরেও এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে হিন্দু পরিষদ। সানি হত্যার বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক আনোয়ার মিয়া বলেন, এই মামলার এজহার নামীয় দু’আসামী এখন জেল-হাজতে। হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন হলেও অন্য আসামীদের গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা চলছে।
এদিকে সানি হত্যাকাণ্ডের দিন থেকেই একটি চক্র বিষয়টি নিয়ে আপোষ রফাদফায় লিপ্ত হয়। শেষপর্যন্ত তারা সফল হয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। সানির উপর হামলার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিলো নাঈম আহমদকে। সানির মৃত্যুর পর হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলার প্রধান আসামী শোয়েব আহমদকে সিলেট থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে দাবি করলেও তাকে তার স্বজনরা ছাতক থেকেই পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন বলে জানান তার একাধিক আত্মীয়স্বজন।
আপোস রফাদফার উদ্দেশ্যেই এটি সম্ভব হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এ মামলার বিষয়ে থানা পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক বলে জানান এলাকার লোকজন। কাজল সরকার ও তার স্ত্রী প্রথমে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করলেও এখন তারা নির্বিকার। তারা কোনো সংবাদ মাধ্যমকে এ ব্যাপারে কিছু বলতে নারাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাজল সরকারের এক স্বজন জানান, হত্যার দিন থেকেই একটি চক্র ঘটনাটি আপোসের নামে লক্ষ-লক্ষ টাকার বাণিজ্য করেছে। সঠিকভাবে বাদীকে মামলা করতে দেয়নি তারা। মূল আসামীর মধ্য থেকেই ক’জনকে মামলা থেকে বাদ দিতে হয়েছে। মামলার বাদীকে এখন তার জানমালের নিরাপত্তায় সবকিছু মেনে নিতে হচ্ছে।
স্থবির হয়ে পড়েছে মামলার কার্যক্রম। এভাবে চলতে থাকলে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন বাদী। সুষ্ঠু বিচারের জন্য মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তরের দাবি জানান মন্ডলীভোগ এলাকার একাধিক বাসিন্দা। ছাতক থানার ওসি মোঃ নাজিম উদ্দিন জানান, মামলায় দু’আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে।