বাঁশখালী কয়লা বিদ্যুৎ ট্রাজেডীর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করলেন ডা:জাফর উল্লাহ
এনামুল হক রাশেদী, বাঁশখালী উপজেলা প্রতিনিধি-(চট্টগ্রাম)
বাঁশখালী কয়লা বিদ্যুৎ ট্রাজেডীর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করলেন ডা:জাফর উল্লাহ
গত ১৭ এপ্রিল’২১ ইং চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা-বড়ঘোনায় নির্মানাধীন ১৩২০ মেগা: ওয়া: বেসরকারী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে প্রথমে ৫ জন ও পরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আরো ২ জন সহ মোট ৭ জন শ্রমিক নির্মমভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর সারাদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।
কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে শ্রমিক হত্যাকান্ডের নির্মম ট্রাজেডীর এক সপ্তাহ পর আজ ২৫ এপ্রিল রবিবার বিকাল ৩ টার সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টের ট্রাস্টি ডা: জাফর উল্লাহ’র নেতৃত্বে শক্তিশালী একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, জাতীয় বিদ্যুৎ-গ্যাস-তেল-বন্দর রক্ষা কমিটির আনু মুহাম্মদ এবং গণসংহতি আন্দোলনের জোনাইদ সাকি।
প্রতিনিধি দল পাওয়ার প্ল্যান্টে আসার পথে বাঁশখালীর পুর্ব বড়ঘোনায় নিহত শ্রমিক আহমদ রেজার বাড়িতে গিয়ে তার কবর জেয়ারত করেন এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সাথে সমবেদনা জ্ঞাপন পূর্বক কথা বলেন। পরে প্রতিনিধি দল এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন।
পরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রতিনিধি দল নেতা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা: জাফর উল্লাহ বলেন, ম্যাজিষ্ট্রেটের হুকুম ছাড়া শ্রমিককে পুলিশ গুলি করে হত্যা করায় ঘটনাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রয়োজন। পুলিশ স্বীকার করেছে ম্যাজিষ্ট্রেটের হুকুম ছাড়া তারা শ্রমিকের ওপর গুলি করেছে। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের স্বীকার করার রেকর্ড আছে। পুলিশের সাথে সাথে একটি সিন্ডিকেট বাহিনীও গুলি করেছে। শ্রমিকদের নির্যাতন নিপীড়ন করছে।
ওই সিন্ডিকেট বাহিনীকে খুঁজে বের করতে হবে। নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে, কারণ নিহত ১৮ বছরের শ্রমিকরা আরও ৪০ বছর বেঁচে থাকত। বেঁচে থাকলে বহু আয় রোজগার করত। কয়লা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কিছুই নয়।
পুলিশের গুলিতে নিহত ৭ শ্রমিকের ঘটনা দেখতে এসে বাঁশখালীতে ডা. জাফরুল্লাহ আরো বলেন,,
সরকার পুলিশের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই পুলিশ প্রকৃত ঘটনা মুখ খুলতে পারছেন না। সরকার ১৬ বছরে যে উন্নয়ন করেছে তা গন্ডামারায় ভেসে উঠেছে। এত বড় প্রকল্প অথচ গন্ডামারায় রাস্তাঘাটের বেহালদশা। উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি গন্ডামারার বেহাল রাস্তাঘাটে প্রকাশ পাচ্ছে।
ওখানে বক্তব্য দেয়ার আগে তিনি বিকাল ৩টায় বাঁশখালীর গন্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় যান। কিন্তু বিদ্যুৎ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের দক্ষিণ প্রান্তের সড়ক পথ থেকে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ তার সঙ্গে যাওয়া ৮ সদস্যের টিমকে প্রকল্পে ঢুকতে দেয়নি। ওখানে প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়কারী মো. ফারুক ও বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবিরের সাথে কথা বলে পুলিশের গুলিতে নিহত বাঁশখালীর পূর্ব বড়ঘোনার মওলানা আবু ছিদ্দিকির ছেলে মাহমুদ রেজা (১৯) এর বাড়িতে যান। ওখানে নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানান এবং নিহতের পরিবারের কবর জিয়ারত করেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পক্ষ থেকে ২০০ জন হতদরিদ্র পরিবারকে ত্রাণও প্রদান করা হয়েছে।
প্রকল্পে ঢুকতে বাধা দেয়ার ব্যাপারে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ আমাকে ঢুকতে কতৃপক্ষ বাধা দেয়নি। আমি স্বেচ্ছায় যায়নি। আমি শান্তি চাই, সংঘাত নয়। যেভাবেই হোক উন্নয়ন হলেই হল। তবে পুলিশের গুলিতে শ্রমিক হতাহতের ঘটনায় বিচার হওয়া জরুরী।’
গন্ডামারায় তার সাথে আরও ছিলেন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল,, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াজ আজিজ ওলফাত, রাষ্ট্র চিন্তার সদস্য এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ব্যারিষ্টার সাফিয়া আরমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।