বাঁশখালী এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে পুলিশ কর্মকর্তা আরিফের পুন: যোগদান: জনমনে স্বস্থি
এনামুল হক রাশেদী, বাঁশখালী উপজেলা প্রতিনিধি-(চট্টগ্রাম)
বাঁশখালী এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে পুলিশ কর্মকর্তা আরিফের পুন: যোগদান: জনমনে স্বস্থি
চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নে নির্মানাধিন ১৩২০ মেগা:ওয়া: এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে সম্প্রতি ঘঠে যাওয়া শ্রমিক-পুলিশ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর টানটান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পরিস্থিতির দাবীতে পাওয়ার প্ল্যান্ট পুলিশ ফাঁড়ির আইসি হিসাবে পুনরায় দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয়েছে সদ্য সাবেক চৌকশ পুলিশ পরিদর্শক এস আই আরিফুল ইসলামকে।
এসআই আরিফুল ইসলামের পূন: যোগদানে আস্তার বাতাস বইছে সাধারণ জনমনে, নিভৃত পল্লি গন্ডামারায় কিছুটা হলেও ফিরে এসেছে স্বস্থি। সময়ে সময়ে আলোচনা-সমালোচনায় পুলিশের খারাপ দিকগুলোই বেশি মুখরোচক হয়ে ওঠে। পুলিশ যে জনগণের বন্ধু, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করার পাশাপাশি তারা যে মানবিক কাজের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই তা আমরা ভুলে যাই। দু-একজনের অপকর্মে পুরো পুলিশ বাহিনীকে সমালোচনায় বিদ্ধ করি আমরা।
তবে পুলিশ বিভাগে মানবিক পুলিশ কর্মকর্তাদের ইতিবাচক ও গঠনমূলক কর্মকান্ডে রয়েছে হাজারো সুনামের দৃষ্টান্ত।। করোনা মহামারীর শুরু থেকে আজ অবদি সমগ্র বাংলাদেশে পুলিশের কর্মকান্ড সর্বজায়গায় প্রশংসিত। যারা সাধারণ মানুষকে সহযোগিতার মতো মানবিক কাজগুলোও নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন।এতক্ষণ যার সম্পর্কে বলছিলাম তিনি হলেন গন্ডামারা পুলিশ ফাঁডির পুনরায় সদ্য দায়িত্ব প্রাপ্ত আইসি আরিফুল ইসলামের কথা।
আরিফুল ইসলাম ২৮ নভেম্বর ২০১৮ সালে বাঁশখালী থানায় যোগদান ,পরবর্তিতে ১০ অক্টোবর ২০১৯ সালে গন্ডামারা এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে পুলিশ ফাঁড়িতে আইসি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। দির্ঘ ১৬ মাস দায়িত্ব পালন শেষে ৯ ফেব্রুয়ারী ২১ ইং তাকে বদলি করা হয় আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে।
এই সুদির্ঘকাল গন্ডামারা পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালনকালীন প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি এলাকায় চুরি-সন্ত্রাস বন্ধে অসাধরণ ভুমিকা রেখেছিল চৌকস এই পুলিশ অফিসার আরিফুল ইসলাম। এলাকার যেখানেই যখন কোন ঘটনা –দুর্ঘটনার তথ্য পেয়েছেন, ২৪ ঘন্টাই দায়িত্বের প্রতি সজাগ থাকতেনিএই পুলিশ পরিদর্শক।
জানা যায় এস এস পাওয়া প্ল্যান্টের কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিকের পরম বন্ধু হিসাবে পরিচিত মুখ আরিফুল ইসলাম তার দায়িত্বের বাইরে ও অনেক মানবিক চরিত্র ও ইতিবাচক গুনাবলীর বহি:প্রকাশও ঘটিয়েছেন পাওয়ার প্ল্যান্ট সহ পার্শ্ববর্তি এলাকায়। পাওয়ার প্ল্যান্টে শ্রমিকদের কোন সমস্যা হলে তাৎক্ষনিক ছুঠে গিয়ে নিমিষেই সমাধান করে দিতেন নিজ উদ্যোগে। লকডাউনের সময় পাওয়ার প্ল্যান্টে নানা অসঙ্গতি কর্তৃপক্ষের সাথে বসে সমস্যা সমাধানে মুখ্য ভূমিকা পালন করছিলেন তিনি।
জসিম নামের এলাকার এক যুবক বলেন, জানতাম পুলিশ মানুষের কাঁছ থেকে শুধু টাকা নেয় হয়রানি করে কিন্তু আরিফ স্যার কি পুলিশ না ফেরাস্তা! তা আমি জানিনা। তবে আমার আমার দেখা সেরা অন্য এক মানবিক মানুষ আরিফ স্যার।
এভাবে বলতে বলতে এক পর্যায়ে হঠাৎ কান্না জড়িত কন্ঠে জসিম বলেন,-“ আমার সংসারে অভাব ছিল ভালো একটি পোষাক ও ছিলনা, একদিন আরিফ স্যারের সাথে আমার দেখা তিনি আমার অভাবের কথা বলতেই কিছু টাকা দেওয়ার পাশাপাশি পোষাক ও কিনে দেন।,পরে এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে চাকুরীও দেন এরকম অসংখ্য মানুষের পরম বন্ধু ছিল আরিফ স্যার বলতে ততক্ষণে তার চোখের কোনায় জল টলমল করছিল।
স্থানীয় সাংবাদিক মহিউদ্দিন বলেন আমার জীবনে অনেক পুলিশ অফিসার দেখেছি এরকম মানবিক ও জনদরদী পুলিশ অফিসার অত্র এলাকায় কম দেখেছি। যার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বুদ্ধিদিপ্ত ও প্রজ্ঞাময় মেধা ও পরিশ্রমে দীর্ঘ ১৮ মাস অত্র জনপদের বাসিন্দা সহ এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের হাজার হাজার শ্রমিকের পাশে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। এসময় অত্র এলাকা ও এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে মধ্যে শ্রমিকদের মাঝে দুএকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা কখনো ঘটেনি।
পুনরায় এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ হিসাবে তার যোগদানের খবরে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলার উন্নতির বাতাস বইতে শুরু করেছে। এলকার দোকান পাট রাস্তা ঘাটে চায়ের চুমুকে তার অতিত কর্মকান্ডের আলোচনা চলছে। অনেকেই মন্তব্য করছে ১৭ তারিখ এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে যে মর্মান্তিক ট্রাজেড়ি সংঘঠিত হয়েছে আরিফ সাহেব থাকলে এ অনাকাঙ্খিত দু:খজনক ঘটনা না-ও ঘঠতে পারত, ৫ টি তাজা প্রাণ অকালে ঝড়ে পড়ত না।
এলাকার প্রত্যেকটি আবাল বৃদ্ধ বনিতার সাথে তার নিবিড় পেশাদারিত্ব সস্পর্ক ছিল। ১৭ তারিখের ঘটনায় ২ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে একটি পুলিশের পক্ষ থেকে অপর টি এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টের কর্তৃপক্ষের থেকে। পুলিশের করা মামলায় অজ্ঞতানামা আড়াই হাজার ও এস এস পাওয়ার প্ল্যানের কর্তৃপক্ষের করা মামলায় ২২ জনের নাম দেখিয়ে ১০৫০ জনকে অজ্ঞতানামা আসামী করে মামলা করা হয়েছে। এই নিয়ে এলকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গ্রেপ্তার আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে হাজার হাজার সাধারন মানুষও। স্থানীয় বাসিন্দা জাফর বলেন এ দেশে জম্মগ্রহনই আমাদের পাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন আক্ষেপ করে বলেন শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার আদায়ে আন্দোলন করল মামলা হলো স্থানীদের নামে। কিছু বুঝতে পারছিনা কোথায় যাব তা ও জানিনা। সদ্য দায়িত্ব প্রাপ্ত গন্ডামারা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আরিফুর রহমানের কাঁছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ইতি মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে কোন নিরাপরাধ ব্যক্তি কে হয়রানি করা হবে না জানিয়ে স্পষ্টতায় বলেন ঘটনার পর পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বেশ কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি ও লুটপাট হয়েছে এসব মালামাল উদ্ধারে নিরলস অভিযান অব্যাহত থাকবে, দোষি ও অপরাধীদের ব্যাপারে কোন আপোষ নেই। তবে নিরিহ ও সাধারন মানুষদের আতঙ্কে ভুগার কোন কারন নেই।
উল্লেখ্য: গত ১৭ এপ্রিল এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে প্রথমে ৫ জন পরে মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ২ জন সহ মোট ৭ শ্রমিক নির্মমভাবে নিহত হয়, আহত হয় প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক। ঘটনার দিন স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকায় বেশকিছু গাড়ী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং শ্রমিকদের লিভিং এরিয়ায় নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে শ্রমিক শেড সহ প্রকল্পের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক মুল্যবান জিনিসপত্র লুৎপাত করা হয়।