একুশ সালের নতুন বই -মাইন উদ্দিন আহমেদ
হঠাৎ প্রশ্ন জাগতে পারে, অনলাইনের এ যুগে বইয়ের গুণগান করা মানে কি বিপরীত দিকে দৌড়ানোর চেষ্টা? প্রশ্নটি অন্যরকমও হতে পারে। ডিজিটাল মানুষের আবার মুদ্রিত বইয়ের জন্য আকূতি কেনো? বিপরীত ভঙ্গির দুটো প্রশ্নের কেন্দ্রবিন্দু কিন্তু একটিই। একটা স্মার্টফোনে শতশত বই পড়া যায়। তারপরও কাগজের বইয়ের প্রতি আগ্রহ কেনো? প্রশ্নটা স্বাভাবিক।
মানব জীবনে স্বপ্ন ও বাস্তবের যে সমন্বয় প্রচেষ্টা বিদ্যমান তার মধ্যেই উত্তরটা নিহিত আছে। স্বপ্নে চমুচা খাওয়া যুবকটি মাঝ পথে ঘুম ভেঙ্গে দেখে বালিশের কোনা তার হাতের মুঠোয়! স্বপ্নে পরী অথবা ঘোড়ার পিঠে রাজপুত্রকে দেখে ঘুম ভেঙ্গে অন্ততঃ কাজিনকে হলেও দেখতে চায় মানুষ। এটা হচ্ছে রিয়্যালিটি বা বাস্তবতা।
মানব চরিত্রের এই জটিল প্রক্রিয়ার কারনেই ডিজিটাল যুগের মানুষ বস্তু বইটি ধরে দেখে, একটুখানি পড়ে দেখে। তাই সে এ্যামাজনের বইটি ফী দিয়ে প্রিন্ট কপি নেয়। যা-ই হোক, গতি স্বপ্নের দিকে না কি বস্তুর দিকে তা সময়ই নির্ধারন করবে।
বাস্তবে আমরা কি দেখি? কল্পতরু রোপন করা অথবা সাম্যগীতি গাওয়া অনেক গুরুত্ত্বপূর্ণ লোককেও বাস্তবতার দোকানে পেয়াজ-মরিচ বিক্রি করা শুরু করতে দেখা যায়। মানবতার গান ছেড়ে ধনবান ব্যক্তির প্রশংসাগীতি রচনা করতে দেখা যায়। এগুলো কঠিন বাস্তবতা! সাহিত্য রচয়িতাকে পরিপূর্ণ ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ আসলে করা যায় কি?
প্রশ্নটি অনেক জটিল।
এ বিষয়ে আমরা সুযোগে অনেক বড় গবেষনাকর্ম সম্পাদন করে ফেলার সুযোগ হয়তো পেয়ে যাবো। আপাততঃ দেখা যাক আমাদের হাতে কি আছে এ সংখ্যা ‘নবযুগ’ পত্রিকার জন্য ‘একুশ সালের নতুন বই’।
শামীম আহমদ-এর লেখা বই ‘শেখ হাসিনা ও ঘুরে দাঁড়ানোর বাংলাদেশ’। বাংলাদেশের উন্নয়ন তথ্যের সর্ববৃহৎ বই। দশ খন্ডে সর্বমোট ৫ হাজার পৃষ্ঠা। তৃতীয় সংস্করণ মোড়ক উন্মোচন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, জাতীয় প্রেসক্লাবে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে। বইটির প্রকাশক লেখক নিজেই। বইটি দেশে-বিদেশে অসাধারন সাড়া জাগিয়েছে।
কোয়েল তালুকদার-এর লেখা তিনটি গল্প গ্রন্থের (পূর্ণিমানিশীথিনী-সম, মহুয়া বনে, দেবযানী) পর বের হলো ওনার প্রথম উপন্যাস ‘অপ্রাপণীয়া’। উপন্যাসটি লেখা হয়েছিলো গত লকডাউনের সময়। লেখক বলছেন, “আমি আমার সমস্ত শ্রম ও যত্ন দিয়ে উপন্যাসটি লেখার চেষ্টা করেছি। ”
উপন্যাসের কাহিনিতে ঘর ছাড়া, গ্রাম ছাড়া, দেশ ছাড়া এক তরুণের জীবন আলেখ্য বর্ণিত হয়েছে। যে তরুণ আবার ফিরেও আসে তেত্রিশ বছর পর এই দেশে, তার নিজ গ্রামে। কতো কিছু ঘটেছে তার জীবনে। কতো শহর, কতো দেশ, কতো জনপদ সে ঘুরে বেড়িয়েছে। যাযাবরীয় জীবন ছিল তার। জীবনের কতো মোড়ে মোড়ে কতো মানুষের সে দেখা পেয়েছে কতোখানে। সে যা চেয়েছিল, তা কী সে পেয়েছে? তার জীবনে অপ্রাপ্তিটা বা কী? ‘অপ্রাপণীয়া’ কে, তাওতো এক বিরাট প্রশ্ন। লেখক ভাবছেন, এসবেরই উত্তর দেবে আমার লেখা প্রথম উপন্যাস ”অপ্রাপণীয়া’।
উপন্যাসটি প্রকাশিত হলো মূলত একুশের বইমেলাকে সামনে রেখে। বলতে পারেন এটি বইমেলার উপন্যাস।
‘অপ্রাপণীয়া’ বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর।
প্রকাশ করেছে বাঙ্গালা গবেষণা। মূল্য ২০০ টাকা।
বইটি সরাসরি প্রকাশকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
অনলাইন বুকশপ রকমারি থেকেও সংগ্রহ করা যাবে।
খই প্রকাশন থেকে প্রকাশ হয়েছে কবি ও কথাসাহিত্যিক আফরোজা বানু-এর কিশোরদের জন্য নতুন বই ‘বিজয়ফুল’। এটা একটা গল্পগ্রন্থ। প্রকাশ করেছেন মুসতাক মুকুল, প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোস্তাফিজ কারিগর, কোয়ালিটি হার্ডবাঁধাই মূল্য ১৭০ টাকা।
অনলাইন পরিবেশক রকমারিডটকম। প্রাপ্তিস্থান পাঠক সমাবেশ, টাঙ্গন (কাঁটাবন)। প্রকাশনীঃ খই প্রকাশন।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১-এর জন্য প্রকাশিত হয়েছে রহিমা আক্তার কল্পনার তৃতীয় গল্পের বই ‘সপ্তডিঙ্গা মধুকর’। প্রকাশক – অনন্যা। প্রচ্ছদশিল্পী – ধ্রুব এষ। মূল্য ১৭৫ (একশত পঁচাত্তর টাকা), নির্ধারিত ছাড়ের পর মূল্য ১৩০ টাকা। ‘রকমারিডটকম’-এ বইটি পাওয়া যাবে। মেলা চলাকালীন পাওয়া যাবে ‘অনন্যা’র প্যাভিলিয়নে। উল্লেখ্য, অনন্যা থেকে ২০১৮ সালে প্রকাশিত এই লেখকের ‘কবিতাসমগ্র’ও বইমেলায় অনন্যা-র প্যাভেলিয়ন থেকে সংগ্রহ করা যাবে ২৫% ছাড়কৃত মূল্যে।
অন্বয় প্রকাশ থেকে ছাপা হলো কবি ও কথাশিল্পী শ্রেয়সী শিখা মনির গল্পগ্রন্থ ‘শ্রাবণী আসমান’।
বইয়ের নাম ‘স্মৃতিময় চাটখিল’, লেখক আ ই ম গোলাম কিবরিয়া। লেখকের বেড়ে উঠা জন্মস্থান চাটখিল (নোয়াখালী)।
চাটখিল বাজারেই ওনার শিশু ও কিশোর কাল কেটেছে। চাটখিলের স্মৃতি নিয়ে লেখা বই ঢাকায় একুশের বইমেলা-২০২১ উপলক্ষে প্রকাশ করতে যাচ্ছে মিজান পাবলিশার্স (স্টল নং: ৩১, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)। বইটিতে দেশের একটি এলাকাকে চিত্রিত করা হলেও দেশের সাধারণ ও কৌতুহলী পাঠকদের কথা বিবেচনায় নিয়ে লেখাকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। জীবন যাপনের বাস্তবতা নির্ভর লেখা বই জনপ্রিয় হবে বলে বোদ্ধা মহল মনে করছেন।
বইমেলা অভিমুখে ঝকঝকে অবয়ব নিয়ে এগিয়ে আসছে এক বই, নাম হলো ‘ওঁ থেকে উচ্চারিত’, লেখক কাজী জহিরুল ইসলাম। ১৮ই মার্চ থেকে ঢাকায় বইমেলায় অগ্রদূতের স্টল নাম্বার ৪৪১/৪৪২ এ পাওয়া যাবে। এর আগে প্রকাশক থেকে কিনলে অনেক কম দামে কেনা যাবে।
মুদ্রিত বই কিছু আকর্ষনীয় কথা বহন করছে:- ‘ওঁ থেকে উচ্চারিত’ কাজী জহিরুল ইসলামের ২৫তম কবিতাবই। কবি যখন লেখেন, ‘আগুন দেখি না, শুধু দেখি তার ছায়া।/ ছায়ার ক্ষমতা যে পেয়েছে টের/ কায়ার দহনে তার পোড়ে না কিছুই, না সুখ না দুঃখ।/ সে এক দৃষ্টি-বেহায়া’ তখন পাঠক চমকে ওঠেন।
অল্প কিছু শব্দ, কী যেন শুনিয়ে গেল খুব গোপনে, কোথায় যেন নিয়ে গেল। ছায়াই কি সব, এই ইহকাল? এ-কোন দৃষ্টি-বেহায়া? এই গ্রন্থে আছে পরিণত চিন্তার স্ফুরণ। ছোটো ছোটো কথা কিন্তু ধারণ করে আছে সুবিশাল এক একটি ভাবনা। গ্রন্থে সন্নিবেশিত ১০০টি কবিতা মানবতা ও আধ্যাত্মিকতার এক সুবৃহৎ ক্যানভাস। কবি বলেন, ‘বুকের তাপে উঠছে বেড়ে সাপ/ অন্ধকারের রূপ দেখেছি/ কোন সাহসে গিলবে আমায় অস্বীকারের পাপ?’ এমন সব সাহসী পঙক্তিগুচ্ছের সম্ভার এই গ্রন্থ, বস্তুজগত ও আধ্যাত্মিকতার এক অনিবার্য সেতু। প্রতিটি কবিতার জন্য অসাধারণ সব ড্রয়িং করেছেন শিল্পী কাজী রকিব। যা গ্রন্থটিকে এক ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
নবুয়ত প্রাপ্তির মতো কবুয়ত প্রাপ্তির ঘটনা একজন প্রকৃত কবির জীবনে ঘটে যায়। তখন কবি নিজে আর কিছু লেখেন না, কেউ তাকে দিয়ে লেখায়। এই গ্রন্থের ১০০টি কবিতা একজন কবুয়তপ্রাপ্ত কবির স্বর্গীয় অনুভূতির প্রকাশ। সেই অনুভূতি-নিঃসৃত শব্দরাজী আরো রহস্যময় হয়ে উঠেছে শিল্পী কাজী রকিবের তুলির আঁচড়ে।
২০২১ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে আফসার ব্রাদার্স সাহাদত হোসেন খান-এর তিনটি বই প্রকাশ করেছে। বইগুলো হলো: (১) ধর্ম সমাজ ও রাজনীতি, (২) প্রাচীন মিশর ও (৩) সমকালীন বিশ্ব রাজনীতি।
‘ধর্ম সমাজ ও রাজনীতি’ শিরোনামে বইয়ে যেসব লেখা যোগ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক, টেকনাফে পুলিশের গুলিতে মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড এবং ঢাবির ভিপি নূরুল হক নূর বিষয়ক বিতর্ক ইত্যাদি। ২০১৯ সালে মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীকে নিয়ে তোলপাড় হয়। বইটিতে তার প্রসঙ্গ যোগ করা হয়। আরো আছে হেজবুত তাওহিদের কর্মকাণ্ড। দেওবন্দ ও তাবলীগের কর্মকাণ্ড নিয়েও বইটিতে আলোচনা আছে।
‘প্রাচীন মিশর’ বইটিতে তৎকালিন রাজাদের নাম উচ্চারিত হয়েছে যৌক্তিক ভাবেই বারংবার। এ তালিকায় ফারাও স্নেফেরু থেকে ৬১ জন রাজাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে মাত্র ৩৯ জন রাজার নাম পাঠযোগ্য।
তুরিন কিং লিস্ট রাজাদের নামের আরেকটি তালিকা। তুরিন কিং লিস্ট ‘তুরিন রয়্যাল ক্যানন’ নামেও পরিচিত।
মিশরকে জানার জন্য বইটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য
‘সমকালীন বিশ্ব রাজনীতি’ সম্পর্কে লেখক বলছেন: বইয়ের কিছু লেখা কয়েক বছর আগের। সেগুলো বিভিন্ন সময় ঢাকার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল। তাই লেখাগুলোকে সময়োপযোগী করতে হয়েছে। বাদবাকিগুলো একেবারে নতুন।
যেমন-চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি, ২০২০ সালে লাদাখে চীন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ, ফ্রান্সে বিশ্বনবীর (সা:) ব্যঙচিত্র অঙ্কন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইসরাইল প্রীতি, যুক্তরাষ্ট্রের নয়া প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে প্রত্যাশা এবং ইরানি বিজ্ঞানীদের মৃত্যু।