কপিলমুনি ৬ গ্রামের মানুষ পানিবন্ধির আশংকায়; মাঠখালী খালকে বাঁচানোর দাবি
পাইকগাছা প্রতিনিধি-(খুলনা)
কপিলমুনি ৬ গ্রামের মানুষ পানিবন্ধির আশংকায়; মাঠখালী খালকে বাঁচানোর দাবি
উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নে ৬টি গ্রাম ও একাধিক মৌজার পানি সরবরাহের একমাত্র মাধ্যম মাঠখালী খালটির অবস্থা খুবই করুন।
বর্তমান খালটিকে গলা টিপে সোতায় পরিনত করা হয়েছে। গড় প্রায় ৯০ ফুট চওড়ার এই খালটিকে শাসন করে এখন মাত্র প্রায় ১৫ ফুট চওড়া রাখা হয়েছে। ফলে সেচ কাজে চরম ব্যাঘাত সহ বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ হয়ে পানিবন্ধি হওয়ার আশংকায় রয়েছে এ জনপদের হাজার হাজার মানুষ। খালটিকে বাঁচিয়ে রাখতে জরুরী পদক্ষেপ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের কাছে ফরিয়াদ জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
গণ দরখাস্তের অভিযোগে বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখাযায়, মাঠখালী থেকে কামারাবাদ ওয়াপদা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার খালটির মাত্র ১৫ ফুট রেখে ১০ ফুট চওড়া নতুন কেয়ারের রাস্তা নির্মান করা হয়েছে। আর এ রাস্তা নির্মানের ফলে এলাকাবাসীর ভাগ্যদেবী এই খালটিকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও পুরাতন কেয়ারের রাস্তাটি সংস্কারের জন্য পৃথক দুটি প্রকল্প বরাদ্দ দেয়া হলেও তা সংস্কার না করে বরং খালের বুকচিরে নতুন কেয়ারের রাস্তা নির্মান করায় বিস্মিত ও বিক্ষুব্ধ হয়েছেন এলাকাবাসী।
কাজিমুছা গ্রামের আজিজুল গাজী জানান, খালের পাড় বরাবর বহু সংখ্যক প্রভাবশালী জমি মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় নতুন কেয়ারের রাস্তা নির্মান করা হয়েছে। মালথ গ্রামের আজিজুল গাজী জানান, খালটি সংকীর্ণ করে রাস্তা নির্মানের ফলে খালের সিংহভাগ প্রায় শতাধিক বিঘা সরকারী মুল্যবান খাস জায়গাগুলো স্ব স্ব জমি মালিকদের দখলে চলে গেছে। বিনিময় তাদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে হাজার হাজার টাকা।
কাজিমুছা গ্রামের সিরাজুল জানান, খালটি এলাকার মানুষের জন্য আশির্বাদ স্বরুপ। শুধু পানি নিষ্কাশন নয়, এলাকার হতদরিদ্র মানুষ এই খালের মাছ ধরে জীবন জিবিকা নির্বাহ করতো। একই গ্রামের খায়রুল জানান, জনস্বার্থ বিরোধী এ কাজে প্রতিবাদ করলে রাস্তা নির্মান প্রকল্পের সভাপতি ও ৬ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মিন্টু মোড়ল হামলা ও মামলার ভয় দেখান। ফলে এলাকাবাসী এ কাজে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
জানাযায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পুরাতন কেয়ারের রাস্তাটি সংস্কারের জন্য পৃথক দুটি প্রকল্প বরাদ্দ দেয়। ২০১৯ সালে প্রথম প্রকল্পটি ইউপি সদস্য মোঃ আলাউদ্দীন গাজী পুরাতন কেয়ারের রাস্তাটি সংস্কার প্রকল্পের সভাপতি হিসাবে ওয়াপদা থেকে মাঠখালী বিল অভিমুখে ১২ চেইন নতুন কেয়ারের রাস্তা নির্মান করেন। ২০২০ সালে বাকি প্রায় ২ কিলোমিটারের বেশি পুরাতন রাস্তাটি সংস্কারে প্রকল্প সভাপতি হিসাবে দ্বায়িত্ব পায় ইউপি সদস্য মিন্টু মোড়ল।
খালটিকে সরু করে পুরাতন রাস্তা বাদদিয়ে নতুন কেয়ারের রাস্তা নির্মান বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মোঃ আলাউদ্দীন গাজী জানান, আমার প্রকল্পে যতটুকু রাস্তা নির্মান করেছি তা টেকসই ও খালদিয়ে পানি নিষ্কাশনে কোন অন্তরায় হবে না। তিনি আরও জানান, পুরাতন কেয়ারের রাস্তাটি পার্শ্ববর্তী জমি মালিকরা কেটে দখলে নেয়ার ফলে রাস্তার অস্তিত্ব ছিল না বিধায় খালের মধ্যদিয়ে নতুন রাস্তা নির্মান করতে হয়েছে।
ইউপি সদস্য মিন্টু মোড়ল জানান, খালের মধ্যে কোন রাস্তা করা হয়নি এবং খাস জমি দখলদারদের কাছ থেকে কোন আর্থিক সুবিধা নেয়া হয়নি। পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে তিনি বলেন, খালটি খননের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানানো হয়েছে। এদিকে এলাকাবাসী জানান, খালটির সাথে আমাদের বাঁচা মরার সম্পর্ক। তাই এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর গণ দরখাস্ত দিয়েছি। দ্রুত ব্যাবস্থা না নিলে মানববন্ধন সহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করবেন তারা।