জেলার খবর

ছাতক রেলওয়েতে চলছে হরিলুট গঠিত হচ্ছে তদন্ত কমিটি, প্রতিকার নেই

আব্দুস ছালাম শাকিল, জেলা প্রতিনিধি-(সুনামগঞ্জ)

ছাতক রেলওয়েতে চলছে হরিলুট গঠিত হচ্ছে তদন্ত কমিটি, প্রতিকার নেই

সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক রেলওয়েতে শুরু হয়েছে হরিলুট। এখানের সরকারি সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এসব বিষয়ে একাধিক সংবাদ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। লুটপাট, বাসা-বাড়ি অবৈধভাবে দখল ও রেলওয়ের ভূমি দখলের বিষয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও বিভিন্ন কারণে এসব ফাইল বন্দি হয়ে পড়ে থাকে। রেলওয়ের (সিএসপি) ৭ টি বাসা ও (বিআর) ১৮ টি বাসা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে গ্যাস-বিদ্যুৎ সহ সরকারি মালামাল ব্যবহার করছে বহিরাগতরা।

আর এসব বাসা-বাড়ির ভাড়া নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে রেলওয়ের প্রধান অফিস সহকারী সুরঞ্জন পুরকায়স্থ, এলডিএ মাহমুদ আলম সহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। তারা রেলওয়ের পাথর বিক্রি, জমি ভাড়া, বাসা ভাড়া ও রেলওয়ের ভোলাগঞ্জ কোয়ারির পাথর ও বালু বিক্রি করে প্রতি মাসে লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

কর্মচারী তাজুল ইসলাম, দিলোয়ার হোসেন, আবু তাহের (২)’র বিরুদ্ধে একাধিক বাসা দখল করে ভাড়া দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এলডিএ মাহমুদ আলম সম্প্রতি বদলি হয়ে সিলেটে যোগদান করেন। কিন্তু সিলেটে অফিস কামাই করে ছাতকেই অবস্থান করছেন দিনের পর দিন। ছাতকের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তার গঠনকৃত লুটপাটকারী চক্রের নেতৃত্বে এখনো রয়েছেন এই দাপুটে কর্মচারী।মাঝে’মধ্যে সিলেটে অফিস করলে বসবাস করেন সিলেটের অফিসার্স রেস্ট হাউজের তৃতীয় তলায়।

ছাতক রেলওয়ের ২২ টি বাসার ভাড়া ভোগ করেন সিলেটের ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ক সুপারভাইজার শহীদুল হক ও এলডিএ মাহমুদ আলম। রেলওয়ের আফজালাবাদ ছাতক সেকশনের মধ্যবর্তী রেলব্রীজ নং-২৯ থেকে ৩১ পর্যন্ত রেলওয়ের উচ্ছেদকৃত ভূমিতে আবারো স্থাপনা নির্মাণ করতে বিভিন্ন স্থাপনা মালিকদের কাছ থেকে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন তারা। গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্ট রেল ও সড়কপথের মধ্যবর্তী ঝুকিপূর্ণ উচ্ছেদকৃত ভূমিতে আবারো দ্রুত গতিতে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন দালানকোঠা।

ছাতক রেলওয়ে বিভাগকে এভাবেই লুটেপুটে খাচ্ছে রেলওয়ের একটি সিন্ডিকেট চক্র। এ সুবাদে বহিরাগতরাও রেলওয়ের ভূমি ও বাসা দখল করতে সুবিধা পাচ্ছে। রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মাসোহারা দিলেই সরকারি সুযোগ-সুবিধা সহ মিলে যাচ্ছে একটি বাসা। ছাতক রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (অঃদাঃ) কাজী হাবিব উল্লাহ, ফোরম্যান (ইলেক) মাহবুবুল আলম ও আই ডব্লিউ আবুল কালাম আজাদ ছাতকে যোগদানের পর থেকেই অফিসার্স রেস্ট হাউজে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। পত্র-পত্রিকায় এ ব্যাপারে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।

কিন্তু তারা এ পর্যন্ত বহাল তবিয়তেই রয়েছেন। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই ছাতক রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে প্রধান সহকারী সুরঞ্জন পুরকায়স্থ ও এলডিএ মাহমুদ আলমের মধ্যে ঘুষের টাকা নিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় মাহমুদ আলম প্রধান সহকারীকে লাঞ্চিত করেন। এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে সুরঞ্জন পুরকায়স্থ একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আহসান জাবির উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য-সিএসপি) ও উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (ইলেক-বিআর)কে দিয়ে ২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এপর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি।

এদিকে রেলওয়ের বরাদ্দকৃত বাসার আংশিক স্থাপনা ভেঙ্গে খালাসি তাজুল ইসলাম টিনসেড ঘর তৈরি করে সরকারি পানি-বিদ্যুৎ, গ্যাস ব্যবহার করছেন। এ ব্যাপারে ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তৎকালীন উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য-সিএসপি) আব্দুল নূর।

বিভাগীয় মামলা ও হয়েছে । এর কোনো সুরাহা এখনো হয়নি। কি ম্যান রাজু সূত্রধর (বদলীকৃত) বাসা জোর দখল নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে রিপোর্ট হয়েছে। বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী (অঃদাঃ) তদন্ত কমিটিও গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটির কোনো কার্যক্রম নেই। নিরাপত্তা প্রহরী মিজানুর রহমান বিআর/১৬-জি (স্পেশাল এস টাইপ) বাসা, লাইনম্যান দেলোয়ার হোসেন বিআর/৬-এ এবং বিআর/৬-বি (এ-টাইপ) বাসা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন।

এসব বাসা বর্ধিত করে সরকারি গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সহ ভাড়া দিচ্ছেন তারা। এসব বাসা দাপ্তরিক ভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য একাধিক পত্র দেয়া হলেও বাসাগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। রেলওয়ের সাবেক এইএন মুজিবুর রহমানের নামীয় প্রথম শ্রেনীর বাসাটি তালা ভেঙ্গে এখন দখলে নিয়েছেন উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (অঃদাঃ) আবুল কালাম আজাদ।

১৭ ফেব্রুয়ারী বিকেলে প্রধান অফিস সহকারী সুরঞ্জন পুরকায়স্থ সিএসপি’র সিরাজ মিয়া, আবু তাহের ও তাজুল ইসলামকে নিয়ে বাসার তালা ভেঙ্গে সরকারি মালামাল সহ বাসাটি দখল করেন তিনি। সাবেক এইএন মুজিবুর রহমান মৌখিকভাবে বাসার বরাদ্দ নিলে এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠে।

তার বদলীর পর সরকারিভাবে তালাবদ্ধ থাকা বাসাটি বিনা বরাদ্দে আবারো দখল করলেন আবুল কালাম আজাদ। এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি নিয়ম-নীতি ছাড়াই বাসা দখল, কোয়ারি ও রেলওয়ের জমি দখল নিয়ে ভাড়া এবং বিক্রি করছে।

যে যেভাবেই পারছে চালাচ্ছে লুটপাট। সিলেট থেকেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখানের লুটপাটে জড়িত রয়েছে। রেলওয়ের গুদামে রক্ষিত কোটি টাকা মূল্যের মালামাল একাধিকবার চুরি হয়েছে। এসব চুরির ঘটনায়ও এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত বলে স্থানীয়দের ধারণা।

রেলওয়ে ও আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা জানান, এখানের হরিলুটের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন। ছাতক রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (অঃদাঃ) কাজী হাবিব উল্লাহ লুটপাটের একাধিক বিষয় অস্বীকার করলেও বাসা-বাড়ির জটিলতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button