বেনাপোলে ৫৭০ বছরের প্রাচীন নিতাই গৌর মন্দির রক্ষার দাবি।
যশোরের বেনাপোল সীমান্তে অবস্থিত ৫৭০ বছরের প্রাচীন নিতাই গৌর মন্দিরকে বাঁচিয়ে আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে মন্দিরটি রক্ষায় প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে আইনি সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ মন্দিরের সাথে ধর্মীয় গুরু ও পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি বিজড়িত। তবে মন্দির পরিচালনা পরিষদের দাবি মন্দিরের নতুন ভবন আধুনিকায়নে পুরানোটি বাধ্য হয়ে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ভারতের একেবারে সীমান্ত ঘেষা গ্রাম বেনাপোল। বেনাপোল বাজারের সন্নিকটে প্রায় তিন একর জাইগায় অবস্থিত হরিদাস ঠাকুরের তীর্থস্থান। এই তীর্থ স্থানে রয়েছে নিতাই গৌর মন্দির। যা ৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে টাকি নিবাসি জমিদার শ্রী সুর্যকান্ত রায় চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেন। এ জাইগায় রয়েছে ৫শ’ বছরের প্রাচীন মাধুবি লতা আর বিরল শ্রেণির তমাল বৃক্ষ। রয়েছে হরিদাস ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত তীর্থ স্থান।
আরও জানা গেছে, এ অঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আর দর্শণীয় স্থান বলতেই মানুষ এ জাইগাটি চেনেন। প্রতিবছর বিশেষ বিশেষ দিনে ধর্মীয় উৎসবে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় এখানে। এছাড়া এ তীর্থ স্থানটিতে গড়ে ওঠা প্রাচীন মন্দির আর বৃক্ষ দেখতে প্রতিদিনই আসেন সব ধর্মলম্বীর দর্শণার্থীরা। সাম্প্রতি প্রাচীন এ গৌর মন্দিরটির পাশে নতুন একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়। এ মন্দিরের পাশে অনান্য স্থাপনা বেড়ে যাওয়ায় পুরানে মন্দিরটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন মন্দিরের পরিচালনা পরিষদ। এতে মন্দির রক্ষায় বিভিন্ন দপ্তরের সহায়তা চেয়েছে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি অংশ।
মন্দিরের আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মন্দিরটির সাথে স্থানীয়দের অনেক স্মৃতি। এই মন্দিরটা এখনও অনেক মজবুত। সংস্কার করলে বহুদিন টিকবে। এটাকে বাঁচিয়ে নতুন ভবনের উন্নয়ন কাজ করলে ভালো হতো। মহাপুরুষ আর পূর্বপুরুষের স্মৃতিচিহ্ন ধুলো মাখা শৈশব-কৈশোর বিলিন হয়ে যাচবে এটা ভাবতেই তাদের খারাপ লাগে। কিন্তু কী করবেন তারা?
স্থানীয়রা জানান, এটা হিন্দু-মুসলিমসহ সব অসাম্প্রদায়িক মানুষের মিলনস্থল। কোনও অতিথী আসলে তাদের পাটবাড়ির ঐতিহ্য দেখাতে নিয়ে যায় অনেকে। এখান থেকে যদি পুরাতন ঐতিহ্য বিলিন হয় তাহলে দর্শণার্থীদের আগ্রহ কমে যাবে।
বেনাপোল সীমান্তের ছোটআঁচড়া পাটবাড়ি মন্দীরের পুরোহিত শ্রী শ্রী শ্যামা পতা জিও বলেন, ‘আমরাও আধুনিকায়নের পক্ষে। তবে পুরাতন ইতিহাস, ঐতিহ্য ধ্বংস করে নয়। সরকার যখন কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে দেশের ঐতিহ্য রক্ষা করছে, তখন এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় স্মৃতি বিজড়িত এমন একটি ধর্মস্থান ভেঙে ফেলা হবে। মন্দিরটা সংরক্ষণ করা গেলে সবার জন্য ভালো হতো। মন্দির রেখেই প্রয়োজনে বিকল্প প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন করা যেতে পারে।’
বেনাপোল পাটবাড়ি মন্দীর কমিটির সভাপতি তাপস বিশ্বাস বলেন, ‘মন্দিরটি অনেক পুরাতন ও জরাজীর্ণ। ডিজিটাল দেশ গড়তে সবখানে উন্নয়ন কাজ চলছে। তাই এখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে ভাঙা পড়ছে পুরাতন মন্দিরটি। তবে অন্যান্য স্থাপনা বা প্রাচীন বৃক্ষের কোনও ক্ষতি হচ্ছে না।’
বেনাপোল পাটবাড়ি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফনীভূষণ পাল বলেন, ‘পুরাতন মন্দির ভাঙার সিদ্ধান্ত কারও ব্যক্তিগত না। অনেক অবিভাবকদের সাথে পরামর্শ করে উন্নয়ন কাজের সার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন মন্দিরের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে পুরাতন মন্দির ভাঙা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু কিছু মানুষ অভিযোগ তুলেছেন তাই বিষয়টি নিয়ে আবারও আলোচনা হতে পারে। কিছু দিনের মধ্যে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টচার্য বেনাপোলে আসবেন, তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’
বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, ‘নিজস্ব সীমানার মধ্যে অবকাঠামো ভাঙা-গড়া মন্দির কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়। এ বিষয়ে পৌরসভার হস্তক্ষেপ করার সুযোগ কম। তবে একই সম্প্রদায়ের একটি অংশ যেহেতু মন্দিরটি রক্ষায় আবেদন জানিয়েছেন। তাই পুরানো মন্দির রেখে উন্নয়ন কাজ করা যায় কিনা- সেটা বিবেচনা করতে কমিটিকে অনুরোধ করা হয়েছে।’
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পুলক কুমার মন্ডল জানান, ‘ব্যস্ততার কারনে বিষয়টি এখনও সেভাবে দেখতে পারিনি। কয়েকদিনের মধ্যে একটি কমিটি করে তদন্ত করে দেখা হবে।’