সুনামগঞ্জ ধর্ষণের অভিযোগে ৩ জন কে যাবত জীবন।
আব্দুছ ছালাম শাকিল, জেলা প্রতিনিধি-(সুনামগঞ্জ)
সুনামগঞ্জ ধর্ষণের অভিযোগে ৩ জন কে যাবত জীবন।
সুনামগঞ্জে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা পৃথক তিনটি মামলার তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে, যা নির্যাতনের শিকার নারী ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাবেন।
গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এ রায় দেন।
একই সময় অপর একটি অহরণ মামলার চার আসামিকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।
তিনটি ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষণের শিকার তিন জনের মধ্যে দুই জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে।
ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হল- দিরাই উপজেলার জগদল গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে আব্দুল বাতির ওরফে বাতেন, ছাতক উপজেলার গনক্ষাই গ্রামের মৃত কানু বিশ্বাসের ছেলে কাঞ্চন বিশ্বাস ও জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীধরপাশা গ্রামের মৃত মোক্তার আলীর ছেলে সুমন মিয়া ওরফে স্বপন।
এদিকে, অপহরণ মামলায় ১৪ বছর কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্তরা হল- ছাতক উপজেলার আইন্দারগাঁও গ্রামের সুন্দর আলীর ছেলে জালাল উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, আবু রায়হানের ছেলে সাজল মিয়া ও মৃত সাইফুর রহমানের ছেলে অজুদ মিয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দিরাই উপজেলার জগদল গ্রামে চাচার বাড়িতে ২০০৭ সালের ৩ মার্চ রাত ১ টার দিকে গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে আব্দুল বাতির ওরফে বাতেনের ধর্ষণের শিকার হন এক নারী (২০)। পরে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে নির্যাতিতা নারীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কালক্ষেপণ করে ধর্ষণকারী। পরে ভিকটিম গর্ভবতী হয়ে পড়লে ভিকটিম দিরাই থানায় মামলা করেন। এক যুগের বেশি সময়ের বিচার কার্যক্রম শেষে আসামি বাতেনকে যাবজ্জীন কারাদণ্ড দেন আদালত।
এদিকে, ২০১৪ সালের ১৬ আগস্ট ছাতক উপজেলার গনক্ষাই গ্রামে পেয়ারা খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে প্রতিবেশীর সাত বছর বয়সী এক শিশুকন্যাকে ধর্ষণ গ্রামের মৃত কানু বিশ্বাসের ছেলে কাঞ্চন বিশ্বাস। এই ঘটনায় ছাতক থানায় কাঞ্চনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ওই শিশুকন্যার পিতা। সাত বছর বিচার কার্যক্রম শেষে ৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়ার পর কাঞ্চনকে যাবজ্জীন কারাদণ্ড দেন আদালত।
অপরদিকে, ২০০৯ সালে সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা থানার খাজাখালু গ্রামের ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে অপহরণ করে জগন্নাথপুর উপজেলা সদরে নিয়ে এসে আবাসিক হোটেলে রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে জগন্নাথপুর উপজেলর শ্রীধরপাশা গ্রামের মৃত মোক্তার আলীর ছেলে সুমন মিয়া ওরফে স্বপন। পরের দিন ভিকটিমকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে স্থানীয় জনতা স্বপনকে আটক করে কিশোরীর পরিবারকে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ভিকটিমকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় স্বপনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
বিচার প্র্রক্রিয়া শেষে পর্যাপ্ত পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণাদি সমর্থিত হওয়ায় তিনটি ধর্ষণ মামলার ওই তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেইসাথে প্রত্যেককে এক লাখ জরিমানা প্রদানের আদেশ দেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো গুরুতর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আদালতের প্রত্যাশা।
মামলা চারটিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রতিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট নান্টু রায়।
তিনি জানান, আদালতের এই রায়ে সকল ভিকটিম ও তাদের পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।