শিক্ষাঙ্গন

(গদ্যকবিতা)

নিউজ জাতীয় বাংলাদেশ

(গদ্যকবিতা)

আন্ডারল্যান্ড
— মাইন উদ্দিন আহমেদ

মনোভ্রমণ সদা সুখের হয়না–
দুঃখের স্টেশনগুলো খুব আটকে রাখে।
বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে জন্মাবতরণ
কাঁধে বেল্টওয়ালা ইংলিশ প্যান্ট পরে
চার-পাঁচ বছরের শিশুটির গ্রামে গমন,
এরপরের ইতিহাস মধুর হতে পারতো
কিন্তু ভালো মানুষ হতে যে সব শিশুদের
মাতা-পিতা দেন উপদেশ সদা-সর্বদা
ওরা খুব কষ্ট পায় সমাজের হাতে।
আমার ভ্রমণতো খুব দীর্ঘ নয়
তবে অনেকে বলে, “আপনি মানুষ ক’জন,
এতো কাজ কেমনে করেন!”
মনে মনে গেলাম আবু তোরাব নগর
যেখানে পড়েছিলাম ছেলেবেলায়
কিন্তু স্কুলের চেয়ে কবরগুলো বেশী
শীতল-নীরব দৃষ্টিতে তাকালো
আওয়াজ এলো, “আমি মিজান,
আব্বা সহ শুয়ে আছি এখানে।”
আমাদের পুরান বাড়ীর কাছাকাছি
আসতে যেনো শুনলাম,
মোটেই শব্দ না করে কেউ বললো,
“এই যে এখানে আমরা শায়িত
তোমার দাদা-দাদী আরো অনেকে
একটি শিশুও আছে আমাদের সাথে
তোমার বোন, আরেক জন বরিশালে।”
মেরাজের গতিতে মন ছুটে গেলো ভাটরা
সেখানে নানা-নানী মামা-মামী অনেকে ঘুমাচ্ছেন।
আমাদের বাড়ীর কোনায় আসতেই শুনলাম
এক শিশু বলছে, “মামা, আমি এখানে, যেতে চেয়েছিলাম তোমার কাছে কিন্তু
চলে এলাম এখানে।”
ডাক্তারের ভুল ঔষধে মরে গিয়েছিলো সে।
ওর পাশে শুয়ে আছেন মাতা, পিতা ও ভাই,
অভিমানে হয়তো বলেনি কথা!
বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসতেই
বেপারী বাড়ীর কবরস্হানের কাছে
মনে হলো, কিবরিয়ার বাপ জেঠা,
লুৎফর রহমান মাষ্টার সাহেব
আব্বাকে বলছেন, “ফাতেমা জিন্নার
মিছিল করবো আমরা, ছেলেটাকে দাও।”
আরেকটু এগুতেই স্টেশান মাষ্টার জেঠা,
সাকীর আব্বা, খুশী হয়ে যেন বলে উঠলেন,
“কেমনে ঢুকলি অবজারভারে?”
তখন মুরুব্বীদের নাম জানতে চাওয়া
অনেক বড় বেয়াদবী বলে গণ্য হতো।
আরেকটু এগুতেই যেন কানে এলো
সারেং জেঠার আন্তরিক গলা
নূর মোহাম্মদের উচ্চ কন্ঠ
বাঁশের বাঁশির সুর– কিন্তু দেখলামনা কাউকে!
জীবিতের মতো যারা এখন আছে সমাজে
অনেককে ছায়া এবং মৃতের মতো
মাঝেমাঝে দৃষ্ট হলো।
বড় রাস্তায় উঠলাম
কদ্দূর যাবার পর কোন দিকে যেনো
সফিকের গলার আওয়াজ পেলাম,
আরেকটু যাবার পর যেন কথা বলে ওঠে
মফিজ উল্লা ভাই–
বাজারে গেলে শুনলাম আরেক কন্ঠ
জাহাঙ্গীরের আব্বা, কাশেম ডিলার সাহেবের!
আমি হতভম্ব হয়ে চারদিকে তাকালাম
শতশত প্রাণহীন মানুষ হাঁটছে
কলরব করছে, অনেক কিছু করছে
কিন্তু বিবেক বললো, “এরা মৃত– বেঁচে থেকেও
না থাকার মত গন্তব্যহীন এবং মন্তব্যহীন,
কথা বলে দেখো হা করে চেয়ে থাকবে,
কি বলতে হবে কি করতে হবে
ওরা জানেনা কিন্তু করে অনেক কাজ
বলে অনেক কথা।”
আমি মনগাজী বেপারী বাড়ীর কাছে
কবরস্হানের পাশে দাঁড়ালাম,
“আসসালামুআলাইকুম ইয়াআহলাল কুবুর” বললাম।
মন বলে উঠলো, চারিদিকে এতো কবর!
জীবিত মানুষেরা কই?
সবই কি মৃত মানুষ?
পৃথিবীতে সংখ্যা বেশী কার–
মৃত না জীবিত মানুষের?
জীবিত মানুষদেরতো কিছু একটা পরিসংখ্যান আছে, মৃতদের খবর কি?
বলা হয়, এখনতো আর নবী আসবেননা
আসবে শুধু কবি।
কে যেনো বললো, “এই যে মিয়া, শোনেন,
ছেলেবেলায়ও ছিলেন বোকা,
বড় হয়েও রয়ে গেলেন বোকা–
আর জীবনভর খেয়ে গেলেন ধোঁকা,
শোনেন–
পৃথিবীতে তথাকথিত জীবিত লোকের চেয়ে
মৃত লোকের সংখ্যা অনেক বেশী
ভাবতেই পারবেননা এতো বেশী–
বিজ্ঞজনেরা বলেন, পৃথিবীতে নেই
এমন কোন স্হান যা কবর নয়।
পৃথিবীতে কিছু দেশ আছে নাম হলো নেদারল্যান্ড,
আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ফিনল্যান্ড
তেমনি মৃতদের একটা দেশ আছে
নাম যার আন্ডারল্যান্ড; না, না, ওয়ান্ডারল্যান্ড না, আন্ডারল্যান্ড।
পরিসংখ্যান আছে তবে কত তাদের প্রকৃত জনসংখ্যা
তা আপনাদেরকে জানানো নিষেধ আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার করবেননা চেষ্টা কখনো, কাজ হবেনা, তাছাড়া পৃথিবীর কম্পিউটারে তা
পারবেননা করতে ধারন, কখনোই কোনভাবেই!
***

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button