শিক্ষাঙ্গন

লটারির ভর্তি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জবি প্রতিনিধিঃ

লটারির ভর্তি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত ১৭ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই ছুটি সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। আটমাসেরও দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটাই ব্যহত হয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে এবার পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষা নেবে না সরকার। আর ছুটির কারণে এইচএসসি পরীক্ষাও নেওয়া যায়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে। বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে এসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরবর্তী শ্রেণিতে উঠানো হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের। শুধু বাকি ছিলো প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন বিদ্যালয়ে ভর্তির সিদ্ধান্ত। করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে সরকার এবার ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীকে নতুন বিদ্যালয়ে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন স্কুলগুলোতে প্রথম শ্রেণির মতো সব শ্রেণিতেই লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর লটারিসহ একাধিক প্রস্তাব দিয়েছিল। একটি প্রস্তাব ছিল অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা, আরেকটি ছিল বেশি দিনে পরীক্ষা নেওয়া। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এসব প্রস্তাবের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ভর্তির প্রস্তাব গ্রহণ করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশের স্কুলগুলোয় প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় পরীক্ষার মাধ্যমে। আর নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফলের (জিপিএ) ভিত্তিতে। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে নবম শ্রেণিতে এবার জেএসসি ও জেডিসির ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নেই।

এবার ক্যাচমেন্ট এরিয়া (বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা) ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ স্কুলের আশপাশের এলাকার শিক্ষার্থীদের এখন ৫০ শতাংশ ভর্তি করা হবে। এত দিন আশপাশের এলাকার ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হতো। এ ছাড়া এবার ঢাকা মহানগরের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় পছন্দের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। এত দিন একেকটি গুচ্ছের মধ্যে একটিতে পছন্দ করতে পারত শিক্ষার্থীরা। এখন একটি গুচ্ছের পাঁচটি পছন্দক্রম দিতে পারবে। এতে করে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে, ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমবে, শিক্ষার হার বাড়বে। পূর্বে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়ায় অনেকটা বৈষম্য হত। কারণ এতে করে কেবল ভালো মেধাবী শিক্ষার্থীরাই সেরা সেরা বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেত। কিন্ত এবার লটারির ভর্তি পরীক্ষায় মেধাবী ও কম মেধাবী সকল শিক্ষার্থীরাই যে কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। এক্ষেত্রে শিক্ষায় সকল প্রকার বৈষম্য দূর হবে। এতে করে শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

ঢাকা মহানগরের সরকারি মাধ্যমিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লটারির ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় পছন্দের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। এতদিন একেকটি গুচ্ছের মধ্যে একটি পছন্দ করতে পারতো শিক্ষার্থীরা। এখন একটি গুচ্ছের পাঁচটি বিদ্যালয় পছন্দ দিতে পারবে তারা। ঢাকা মহানগরীতে ৩৮টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি বিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাদা তিনটি শাখা যুক্ত আছে (ফিডার শাখা নামে পরিচিত)। তিন ভাগে ৯ দিনে ঢাকার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার বিকল্প প্রস্তাবও রয়েছে। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক স্তরেও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ফলে এসব বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অভিভাবকদের আগ্রহ বেশি। বিদ্যালয়গুলোকে মোট তিনটি ভাগে ভাগ করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এসব বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত মোট আসন আছে সাড়ে ১১ হাজারের মতো। সুতরাং শিক্ষার্থী ভর্তির হয়রানি অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা যায়।

করোনার ঝুঁকি থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে এ লটারি পদ্ধতি বেছে নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি জোর দিয়েই সরকার এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। যা সত্যিই প্রশংসনীয়। লটারির মাধ্যমে ভর্তির কারণে শিক্ষার্থী ভর্তিতে এবার সাম্য তৈরি হবে। ভর্তিতে এবার বৈষম্য থাকছে না। সন্তানের ভর্তি লটারিতে সব অভিভাবকের উপস্থিত হওয়ার সুযোগ না থাকলেও তাদের ভেতরের পাঁচ থেকে সাতজনকে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে। তাদের ভর্তিচ্ছু সব অভিভাবকের প্রতিনিধি হিসেবে ভর্তি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যার দরুন লটারিতে ভর্তির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে।

ভালো মানের স্কুল কম থাকায় রাজধানী ঢাকায় হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি স্কুলে খালি আসনের চেয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির আকাঙ্ক্ষায় প্রচণ্ড চাপ থাকে। সেজন্য প্রতিযোগীও বেশি হয়। তাই ভর্তির ক্ষেত্রে লটারির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে রাজধানীর নামকরা মাত্র কয়েকটি স্কুলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে তাদের উপস্থিতিতে লটারি কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উক্ত সিদ্ধান্তটি বেশ কার্যকরী ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য। এটি সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ সরকারের উপর আস্থা রাখবে। বর্তমানে স্থবির হয়ে থাকা শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল করতে লটারির ভর্তি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
উপ দপ্তর সম্পাদক,
বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button