বেগমগঞ্জ থেকে বিক্রি হওয়া শিশু ৫ দিন পর সেনবাগ থেকে উদ্ধার।
মোঃ ফখর উদ্দিন,নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
বেগমগঞ্জ থেকে বিক্রি হওয়া শিশু ৫ দিন পর সেনবাগ থেকে উদ্ধার।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার মীরওয়ারিশপুর গ্রাম থেকে নাজিমুল ইসলাম প্রকাশ তামিম নামে ২ বছর ৯ মাস ৪ দিন বয়সী এক শিশুকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করার ৫ দিন পর সেনবাগ থেকে উদ্ধার করেছে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ।
টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে বিক্রির অভিযোগে ক্রেতা ও বিক্রেতা নানা-নানী এবং দুই দালাল সহ ৬জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার দিবাগত রাত থেকে রোববার (১৫ নভেম্বর) সকাল পর্যন্ত সেনবাগ থানা পুলিশের সহযোগীতায় বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে।
আটককৃতরা হচ্ছেন ক্রেতা সেনবাগ উপজেলার উত্তর শাহাপুর গ্রামের আবু তালেব (৩৮), সালমা আক্তার (২৫), আবুল খায়ের (৬৫) দালাল জামাল উদ্দিন (৩৮) এবং বিক্রেতা লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার দক্ষিণ টুমচর গ্রামের নানা আলা উদ্দিন (৪৫) ও নানী নিলুফা বেগম (৪০)।
গ্রেফতারকৃতদের রোববার বিকালে নোয়াখালী বিচারিক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
পুলিশ ও শিশুর মা জানান, শিশু নাজিমুল ইসলাম তামিম বেগমগঞ্জের মীরওয়ারিশপুর এলাকায় নানা-নানীর কাছে ভাড়া বাসায় থাকে। শিশুটির মা একজন কর্মজীবী মহিলা। ২০১৭ সালে তার প্রথম বিবাহ হয়।
এরপর ২০২০ সালে ওই স্বামীর সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।পরবর্তীতে পারিবারিক ভাবে তার দ্বিতীয় বিবাহ হয়।বর্তমান স্বামীর সাথে বিবাহের পর আগের সংসারের ছেলে তামিমকে তার নানা-নানীর নিকট রেখে বর্তমান স্বামীর সাথে বাস করতে শুরু করেন।
এক পর্যায়ে শিশুটির ভরণ পোষণ করতে না পারায় নানা-নানী শিশুটিকে সেনবাগ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের উত্তর সাহাপুর গ্রামের নিঃসন্তান আবু তালেব এবং সালমা বেগমের নিকট দত্তক দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু শিশুটির মা তার ছেলে তামিমকে দত্তক দিতে অস্বীকার করে।তার দ্বিতীয় স্বামীর সংসারে নিয়ে যেতে চায়।
কিন্তু আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণামূলক ভাবে শিশুর মায়ের কাছ থেকে থেকে একশত টাকা মূল্যের তিনটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়।
পরবর্তীতে গত (১১ নভেম্বর) শিশুটির মা ফেনীর বর্তমান স্বামীর বাসা থেকে তার প্রথম সংসারের ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেগমগঞ্জে পিতার ভাড়া বাসায় আসে। ওই দিন আশপাশের লোকজন তাকে টাকার বিনিময়ে ছেলেকে বিক্রি করার অপবাদ দিতে থাকে।
উক্ত বিষয়ে তিনি তার পিতা-মাতাকে জিজ্ঞাসা করলে তারা ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে বিক্রি করার কথা তারা স্বীকার করেন।
পরবর্তীতে ওই নারী পিতা-মাতার নিকট ছেলের সন্ধান লাভে ব্যর্থ হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় অভিযোগ করলে থানা পুলিশ শিশুটির নানা-নানীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে বিক্রির কথা স্বীকার করেন।
এরপর তাদের দেওয়া তথ্যমতে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ সেনবাগ থানার পুলিশের সহযোগীতায় সেনবাগ উপজেলার ৬নং কাবিলপুর ইউনিয়নের উত্তর শাহাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে।
বেগমগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান শিকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা হয়েছে। মামলার আলোকে আসামিদের রোববার বিকেলে নোয়াখালী বিচারিক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।