নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে শামীম ওসমানের আর্শীবাদে কারা।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে ঘুরে ফিরে পৌরবাসীর মাঝে আলোচনায় নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান।
পৌরবাসীর অনেকেই মনে করছেন যার ভাগ্যে জুটবে শামীম ওসমানের আশীর্বাদ তিনিই হতে যাচ্ছেন পৌরসভার পরবর্তী মেয়র। যদিও এই ধারণার পেছনের কারন ও যুক্তিও রয়েছে বেশ জোরালো।
গত পৌর নির্বাচনে শামীম ওসমানের পরোক্ষ অবস্থান ছিল বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান ভুঁইয়ার দিকে। যে কারনে নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বীর পরাজয়ের মাধ্যমে জয়ী হোন সাদেকুর রহমান ভূঁইয়া। এবারের নির্বাচনেও এমপি শামীম ওসমানের সঙ্গে আওয়ামীলীগের চার পরোক্ষ প্রত্যাশীর যোগাযোগ রয়েছে বলেও জানাগেল।
একই সঙ্গে পৌরবাসীর মাঝেও এও ছড়িয়েছে স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সহধর্মিনী ডালিয়া লিয়াকতের পেছনেও শামীম ওসমানের সবুজ সংকেত রয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই পৌরবাসীর মাঝে নানা গুঞ্জন ও গুজব ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। যে যার মত করে পৌরবাসীর মাঝে শামীম ওসমানের বিষয়টি ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
কিন্তু জেলার অনেক নেতাদের সূত্রে জানাগেছে, শামীম ওসমানের সঙ্গে যারাই আপাতত যোগাযোগ করছেন তাদের সবাইকেই নির্বাচনী মাঠে থাকার কথা বলছেন। সবাইকেই তিনি দোয়া করে দিচ্ছেন। কিন্তু নির্বাচন নাগাদ তিনি কি ভুমিকা নিতে যাচ্ছেন সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠবে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভুমিকার উপর।
কারন নির্বাচনে কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী উপজেলা আওয়ামীলীগ সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠাবে।
তার আগে পৌর আওয়ামীলীগের সঙ্গে বৈঠক করে জেলা আওয়ামীলীগের পরামর্শক্রমে কেন্দ্রে এক বা দুইজন কিংবা ততোধিক মনোনয়ন প্রত্যাশির নাম কেন্দ্রে পাঠাবে। প্রস্তাবের বাহিরেও যার যার মত করে কেন্দ্রে নাম পাঠাতে পারেন। নৌকার প্রার্থী যেই হোক এক্ষেত্রে যদি ড্যামী প্রার্থী হিসেবে কম জনপ্রিয় কোন প্রার্থীর নাম আওয়ামীলীগ থেকে কেন্দ্রে পাঠানো হয় তাহলে ধরে নেয়া যাবে শামীম ওসমানের আশীর্বাদ রয়েছে ডালিয়া লিয়াকতের দিকেই।
কারন ডালিয়া লিয়াকতের সুযোগ করে দেয়ার চেষ্টা এখানে স্পষ্ট হয়ে যাবে। যদি শক্ত কোন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয় তাহলে বুঝা যাবে নৌকার পক্ষেই রয়েছেন শামীম ওসমান। বিশেষ কারন জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা বর্তমানে শামীম ওসমানের নিয়ন্ত্রণে।
এদিকে নির্বাচনী মাঠে নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশা নিয়ে কাজ করছেন গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী। গত নির্বাচনের পূর্বে আমিনপুর মাঠে বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমানের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছিলেন এমপি শামীম ওসমান ও স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা।
কিন্তু নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের আওয়ামীলীগের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুুর ভগ্নিপতি অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী। অনেকেই জানিয়েছেন বর্তমানে এমপি শামীম ওসমান ও এমপি বাবুর মাঝে সুসম্পর্ক রয়েছে। ফজলে রাব্বীও তার নির্বাচনী প্রচারণায় শামীম ওসমান ও এমপির বাবুর ছবি ব্যানারে ব্যবহার করছেন।
ওই নির্বাচনে রাব্বীর পক্ষেই ছিলেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। যে কারনে নিজেদের রাজনৈতিক লড়াইয়ের কারনে পরোক্ষভাবে নৌকার বিরোধীতাই করেছিলেন শামীম ওসমান ও লিয়াকত হোসেন খোকা। তাদের সঙ্গে ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম।
শেষ পর্যন্ত জয়ী হোন ২০১১ সালে বিএনপি-জামাত সমর্থিত প্রার্থী ও গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক চেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান। ওই নির্বাচনের পর থেকে সোনারগাঁও পৌর নির্বাচনে শামীম ওসমান একটি বিরাট ফ্যাক্টর সেটা স্পষ্ট হয়ে যায় পৌরবাসীর মাঝে। যে কারনে এখন শামীম ওসমানের ভুমিকার দিকে তাকিয়ে আছেন পৌরবাসী।
এদিকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন ২০১১ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত পরাজিত মেয়র প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান।
সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন তাকে নিয়ে সরাসরি নির্বাচনী মাঠে না নামলেও জানাগেছে তাদের সুদৃষ্টি রয়েছে গাজী মজিবুর রহমানের দিকে। অনেকেই জানান গাজী মজিবুর রহমানও বিভিন্ন নির্বাচনী বৈঠকে হাসনাত পরিবারের জন্য দোয়া প্রার্থনা করছেন। এতে বুঝা যাচ্ছে গাজী মজিবুর রহমানের পক্ষেই থাকছেন কায়সার ও মোশারফ হোসেন। যদিও মাহফুজুর রহমান কালামের অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়।
নির্বাচনী মাঠে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ছগীর আহাম্মেদ। তাকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে পৌরসভার দানবীর শিল্পপতি সিআইপি ফেরদৌস ভুঁইয়া মামুন। গত ৬ নভেম্বর তার বাড়িতে পৌরবাসীকে নিয়ে মতবিনিময় সভায় মামুন ভুঁইয়া বলেছেন, ‘শামীম ওসমান আমাদের বটগাছ, এমপি সেলিম ওসমানও আমাদের ছায়া দিয়েই রাখেন।’ ছগীর আহাম্মেদও নির্বাচনী প্রচারণায় শামীম ওসমানের ছবি ব্যবহার করছেন।
তবে পৌরসভায় নারী মেয়র প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি নাসরিন সুলতানা ঝরাও বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বদরুন্নেছা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তার পক্ষে জোরালো ভুমিকা রাখতে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার।
সেই সঙ্গে রাজধানীতে সক্রিয় রাজনীতি করায় তিনিও লবিং করছেন। একই সঙ্গে তিনিও স্থানীয় আওয়ামীলীগের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করছেন। তবে তিনি কোন বলয়ের প্রার্থী হিসেবে নয়, তিনি আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয় নারীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন।
পরিশেষে সোনারগাঁও পৌরবাসি মনে করেন আমাদের উন্নয়ন ও আধুনিক পৌরসভা গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান মহাজোটের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সহধর্মিনী যদি সোনারগাঁয় পৌরসভার মাতা হিসাবে আসেন তাহলে এমপি খোকা তার সহধর্মিনীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সচেষ্ঠ থাকবেন,সোনারগাঁয়ে এমপি বলেন।