কপিলমুনিতে জেলা পরিষদ সদস্য নাহার আক্তারকে সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ ও মানহানীর চেষ্টা।
এ কে আজাদ, পাইকগাছা উপজেলা প্রতিনিধি-(খুলনা)
কপিলমুনিতে জেলা পরিষদ সদস্য নাহার আক্তারকে সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ ও মানহানীর চেষ্টা।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিতে জেলা পরিষদ সদস্য নাহার আক্তারের ক্রয়কৃত সম্পত্তি থেকে তাকে উচ্ছেদ ও সম্মানহানির চেষ্টা করছে প্রতিপক্ষ সাত্তার গোলদার। শুধু তাই নয়, প্রভাবশালী সাত্তার গোলদার নিজের ক্ষমতা জাহির করে আদালতের ১৪৪ ধারার ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে জেলা পরিষদ সদস্য নাহার ঘটনার আলোকে কপিলমুনি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে উক্ত পরসম্পদ লোভী সাত্তার গোলদারের বিচার দাবিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র ও চলমান পরিস্থিতির কথা।
তিনি বলেন, আমি সম্প্রতি একটি অফিসগৃহ নির্মাণের জন্য পাইকগাছা উপজেলার মামুদকাটি বাজার কেন্দ্রীক নজরুল জোয়ার্দার এর ভোগ দখলীয় দোকান ঘরসহ একখন্ড সম্পত্তি ক্রয় করি। এরপর স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ সহ আমার প্রতিপক্ষ সাত্তার গোলদারের উপস্থিতিতে আমিন দ্বারা মাপজোপ করিয়া আমার দখল বুঝিয়ে দেন জমি মালিক নজরুল জোয়ার্দার। এমতাবস্থায় পাকা পিলার দ্বারা জমির আইল সীমানা নির্ধারণ পুর্বক সেখানে ভোগদখল করাকালে পার্শ্ববর্তী প্রভাবশালী জমিমালিক সাত্তার গোলদার আমাকে দখল থেকে উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
বর্তমানে সাত্তার গোলদার একটি ষড়যন্ত্র মুলকভাবে ১৪৪ ধারার মামলা করেই আমার আইল সীমানা নির্ধারণের সীমানা পিলার রাতের আঁধারে তুলে ফেলে ১৪৪ ধারার অাদেশ নিজেই ভঙ্গ করেছে। একইভাবে চরম শান্তিভঙ্গের পায়তারা করছে। এমতাবস্থায় উক্ত জায়গার বিরোধকে কেন্দ্র করে আইন শৃঙ্খলার অবনতির আশংকা রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,
শুধু এখানেই ক্ষ্যান্ত নয়, প্রকারন্তরে আমাকে নিয়ে অশ্লীল ভাষা ব্যাবহার সহ আমার সম্মানহানির অপচেষ্টা করে যাচ্ছে সাত্তার ও তার সহযোগীরা যা অত্যান্ত দুঃখজনক। আমি জেলা পরিষদের সদস্য হিসাবে নির্বাচনে জয়লাভের পর অনেকে আমাকে প্রতিপক্ষ ভেবে বিরোধিতা বা অপপ্রচার করে আসছে। সাত্তার গোলদারের অপপ্রচার তারই অংশ।
ইতোমধ্যে সাত্তার গোলদার আমাকে নিয়ে অতিসম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে আমাকে সম্মানহানির অপচেষ্টা করেছে। যা সম্পুর্ণ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মুলক। আমি তার এহেন সংবাদ সম্মেলন ও কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সাথে সাথে আমি উক্ত সম্পত্তির প্রাপ্য বা হকদার কিনা তার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ন্যায় সঙ্গত বিষয়টি স্ব স্ব পত্রিকার মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টি দানে প্রকাশের জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
প্রকৃত ঘটনার আলোকে জেলা পরিষদ সদস্য নাহার আক্তার আরো জানান, উপজেলার মাহমুদকাটি এলাকার আব্দুস সাত্তার গোলদার শরিকদের ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মুল্যবান পজিশান ভোগ করছে। মামুদকাটি বাজারস্থ মুল্যবান পজিশান তার নিজ দখলে নিয়ে শরীকদের সাথে জবরদস্তি করে আসছে। তিনি জানান, কোন এক সময় সেখানে জবরদখল করে নিয়ে দোকানঘর নির্মান করে শরীক ভাইবোনদের বঞ্চিত করে তাদের নিন্মমানের জমি দেখিয়ে দিচ্ছে। এবং তাদেরকে বাহুবল প্রয়োগ করে ফাঁকি দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, আমিও তদরুপ তার কর্তৃক ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের শিকার।
তপশীল সম্পত্তির বিবরনে তিনি বলেন, আমার বৈধ ও ক্রয়কৃত সম্পত্তির কাগজপত্রের বর্ণনার আলোকে আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, পাইকগাছা উপজেলার মামুদকাটি মৌজার সাবেক খতিয়ান নং ১২৯ এর আটআনা অংশে মোট ১.১০ শতক জমি উজির আলী গোলদারের নামে চুড়ান্ত রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এরপর বিআরএস ৯৬ খতিয়ানে উজির
আলীর নামে উক্ত জমির রেকর্ড চুড়ান্ত করা হয়।
উজির আলীর মৃত্যুঅন্তে ২ পুত্র সবুর গোলদার ও আমার প্রতিপক্ষ সাত্তার গোলদার ও ৩ কন্যা মমতাজ বেগম, সকিনা বেগম ও সরবানু খাতুনকে রেখে যান। যে সম্পত্তির পজিশান সমানভাবে বণ্ঠন হওয়ার কথা। কিন্তু ধুর্ত ও দুর্ধর্ষ সাত্তার গোলদার উক্ত জমির পজিশান জোরপূর্বক দখল করে দোকান নির্মান করে পজিশান গুলি দখলে নিয়েছে। আপন ভাই সবুর গোলদারের পজিশানগুলি আত্মসাত এর পায়তারা করছে। তার আপন ভাই সবুর গোলদার বিগত ০৯/১২/০৪ তারিখে দু’পুত্র আলতাফ হোসেন গোলদার, আতাউর রহমান গোলদার টুটুল ও ভাগনে নজরুল ইসলাম জোয়াদ্দার কে দানপত্র মুলে উক্ত ৪৭৫ দাগের সম্পত্তি তুল্যাংশে হস্তান্তর করেন। এরপর ভাগনে নজরুল ইসলাম উক্ত জমির মিউটেশন করে রেকর্ড প্রস্তুত করেন। যাহার নামজারী কেস নং(। ×-।)/২০১৮-১৯। যাহা গত ২৯/১১/১৮ তারিখ আদেশে উজির আলী গোলদারের নাম ও অংশ হতে কর্তন পুর্বক নজরুল ইসলাম জোয়াদ্দারের নামে আরএস ৯৬ খতিয়ানের ৪৭৫ দাগের মধ্যে ০.০১৬৬ শতক জমির রেকর্ড প্রস্তুত হয়।
উক্ত ০.০১৬৬ শতক সম্পত্তি নজরুল জোয়ার্দারের কাছ থেকে খরিদা সুত্রে প্রাপ্ত হয়ে আইল সীমানা নির্ধারণ পুর্বক সেখানে ভোগদখল করাকালে প্রতিপক্ষ সাত্তার গোলদার আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উক্ত সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের পায়তারা করে চলেছে। উল্লেখ্য যে, আমি উক্ত সম্পত্তি ন্যায্য মুল্যে ক্রয় করার কারণে সে ক্ষুব্ধ হয়ে ষড়যন্ত্র মুলকভাবে মিথ্যা মামলা ও কাহিনী উপস্থাপন করে আমাকে দখলচ্যুতি ঘটানোর অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি সাত্তার গোলদার বাহুবলে আমার দখলে থাকা দোকানঘর জবরদখল করার হুমকি প্রদান করলে আমি গত ১৩ সেপ্টম্বর সাত্তার ও তার ছেলেকে আসামী করে পাইকগাছা থানায় একটি অভিযোগ করি। যার নং-৬৩৫। যার প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ বিষয়টি মিমাংসার স্বার্থে তাকে নোটিশ করলেও তারা সেখানে হাজির হয়নি। পরবর্তীতে আমি নিরুপায় হয়ে আদালতে সাত্তার সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারার একটি মামলা করি।
সে ক্ষেত্রে আদালত আমলে নিয়ে স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এবং আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে আমার সাইনবোর্ড সহ আইল সীমানা পীলার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় সাত্তার বাহিনী।
জেলা পরিষদ সদস্য প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি কি উক্ত জমি জবর দখল করেছি? নাকি আমার বৈধ কাগজপত্র আছে?
বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।