বিএনপি ৬৪ জেলার পর ঢাকায় কর্মসূচি দেবে
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। তবে আন্দোলনের প্রথম ধাপেও কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না দলটি।
বিএনপি ও তার মিত্ররা আগামী ২০ মে থেকে চার পর্বে দেশের সব জেলায় সমাবেশ করার পরিকল্পনা করেছে। এরই মধ্যে আগামী ১৩ মে ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।
দলটির নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে বুধবার (১০ মে) রাতে সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকও ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, চার পর্বে প্রতি শনিবার এই কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রতি পর্বে ৮ বিভাগসহ বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে ১৬টি করে সমাবেশ হবে। সে ক্ষেত্রে কোনো বিভাগে একই দিন দুই জেলায়ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা যে দাবি দিয়েছিলাম, সরকার সেই দাবিতে কর্ণপাত করেনি, বরং একপাক্ষিকভাবে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে লোডশেডিং, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের মূলবৃদ্ধির কোনো সমাধান করতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৩ মে ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। সেই সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
এর আগে বিএনপি জানিয়েছিল ঈদের পর যুগপৎ আন্দোলনের বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করছে তারা। আন্দোলনের মিত্ররা নতুন কর্মসূচি হিসেবে ঢাকা থেকে বিভিন্ন বিভাগের উদ্দেশে রোডমার্চের প্রস্তাব দিলেও তা বাস্তবায়ন করা নিয়ে সংশয়ে ছিল দলটি। এ ছাড়া এখন হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যেতেও চায় না তারা।
তবে স্থায়ী কমিটির সভায় প্রথম ধাপে জেলা পর্যায়ে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে একমত হন দলের নীতিনির্ধারকরা। এর দুদিন পর সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে নতুন ওই কর্মসূচির প্রাথমিক ছক চূড়ান্ত করল বিএনপি। এভাবে আরও কিছুদিন গণতানুগতিক কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা ও দেশি-বিদেশি সমর্থন আদায় করতে চায় দলটি। এরপর চূড়ান্ত পর্যায়ে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মী এনে ঢাকায় বড় জমায়েত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এ পর্যায়ে ঢাকামুখী রোডমার্চ, লংমার্চ কিংবা ঢাকা ঘেরাওয়ের মতো বড় কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে।
এর আগে কর্মসূচি ঠিক করতে গত মঙ্গলবার রাতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে বিএনপি। রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। বৈঠকে নতুন কর্মসূচি হিসেবে মিত্র জোট ও দলের দেওয়া বিভিন্ন প্রস্তাবনা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। এতে কর্মসূচির একটি পথরেখা তৈরি করা হলেও চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন কবে শুরু হবে তা ঠিক করেননি দলের নীতিনির্ধারকরা।
তবে শিগগিরই বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রাথমিকভাবে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন বলে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, গণতন্ত্র মঞ্চে ভাঙন, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালনসহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগে সর্বাত্মক আন্দোলনে না-যাওয়ার পক্ষে নীতিনির্ধারকরা। তারা চান আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার পর সেসব নিয়ে জনগণের মধ্যে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য মাঠ প্রস্তুত করা। এজন্য নতুন কর্মসূচি হিসেবে ঢাকার বাইরে কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। সরকারবিরোধী আন্দোলনের এই ধাপে জেলাপর্যায়ে নিয়মতান্ত্রিক গতানুগতিক কর্মসূচি দেওয়া হবে। এরপর চূড়ান্ত পর্যায়ে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় এনে বড় ধরনের জমায়েত করার পরিকল্পনা করেছে দলটি।
আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আন্দোলন একটা ঢেউয়ের মতো। এটা কখনও ওঠে, কখনও নামে। জনগণের পরিপ্রেক্ষিত বুঝে আন্দোলনটা করতে হয়। আন্দোলনের যারা অংশীদার আছেন, শরিক দলগুলো আছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা চূড়ান্ত আলোচনার পর্যায়ে এসেছি। শিগগিরই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
জানা গেছে, বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণাপত্র হিসেবে গণতন্ত্র মঞ্চের দেওয়া ৩৫ দফা খসড়া রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বিএনপি তাদের ১০ দফা ও ২৭ দফা থেকে সরতে চায় না। বিএনপি তার সব দফা অটুট রেখে গণতন্ত্র মঞ্চের দাবিগুলোও অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। এতে গণতন্ত্র মঞ্চ সম্মত হলে তবে যৌথ ঘোষণা প্রস্তুত হবে।
১০ ও ২৭ দফার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে সারা দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে সেমিনার করা হয়েছে এবং পুস্তিকা আকারে ঢাকায় বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে বিতরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জনমত গড়ে উঠেছে বলেও মনে করে বিএনপি।
এদিকে বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জোট গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে গণঅধিকার পরিষদের বের হওয়ার বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তারা জানান, এতে আন্দোলনে প্রভাব পড়বে না। স্থায়ী কমিটির সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের মনোমালিন্যের ফলশ্রুতিতে এটি হয়েছে। কিন্তু তারা যুগপৎ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত থাকবে।’
আগামী ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদতবার্ষিকী। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। শিগগিরই এর কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি।