জাতীয়

বইমেলা শুধু মেলা নয়, এটা একটা মিলন মেলা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বইমেলা শুধু বইমেলা নয়। এটা একটা মিলন মেলা। করোনার কারণে ঘরবন্দী থাকার কষ্ট অনেকটাই দূর হবে বইমেলায় এসে।
অমর একুশে বইমেলা-২০২২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এবারের বইমেলা উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

প্রধানমন্ত্রী এসময় বলেন, বই না পড়লে মনে হয় কী যেন হলো না, কি যেন জানলাম না। এই মেলা হচ্ছে আমাদের প্রাণের মেলা, কোনো কারণে এই মেলা হতে না পারলে আমাদের সকলেরই খারাপ লাগে।
তিনি বলেন, একটি জাতি সব সময় উন্নতি করতে পারে যদি তার ভাষা-সংস্কৃতিক উন্নতি হয়। আমাদের প্রতিটি আন্দোলনে আমাদের সংস্কৃতি সেবীদের অবদান রয়েছে। কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সংস্কৃতিসেবী প্রত্যেকেই কিন্তু আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং আমাদের অর্জনের পেছনে অবদান রেখে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি জাতি সব সময় উন্নতি করতে পারে, যদি তার ভাষা-সংস্কৃতির উন্নতি হয়। আমাদের প্রতিটি আন্দোলনে আমাদের সংস্কৃতিসেবীদের অবদান রয়েছে। কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সংস্কৃতিসেবী প্রত্যেকেই কিন্তু আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং আমাদের অর্জনের পেছনে অবদান রেখে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা যেমন আমাদের আনন্দের ভাষা, তেমনি প্রতিবাদেরও ভাষা। বাংলা ভাষার পরিচিতি বাড়াতে ডিজিটাল প্রকাশনা করতে হবে।

নিরাপত্তার অজুহাতে এখন আর আগের মতো বইমেলায় ঘুরতে পারেন না বলে এসময় আক্ষেপ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি সব সময় বইমেলায় গিয়েছি। সেখানে বইয়ের স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেচি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হবার পর বিষয়টিতে ছন্দপতন ঘটে। নিরাপত্তার অজুহাতে এখন আর বইমেলায় ঘুরতে পারি না।
তিনি বলেন, করোনা মাহামারীর কারণে বইমেলা শুরু করতে দেরি হলো। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে বইমেলা শুরু হয়। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে এই মেলা শুরু হলো ১৫ ফেব্রুয়ারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা একাডেমিতে আমরা বইমেলা আয়োজন করে আসছি। এটা আমাদের প্রাণের মেলা। পাকিস্তান সরকার আরবি ও রোমান ভাষায় বাংলা লেখার প্রচলন করতে চেয়েছিল। আমি বলবো, বাংলা যেমন আমাদের আনন্দের ভাষা তেমন আমাদের প্রতিবাদেরও ভাষা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি মহকুমায় আগে মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। এখন আর সেটা দেখা যাচ্ছে না। এটি করা দরকার।
তিনি বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা আমরা করে দিয়েছি। এখন হৃদয়ের খোরাক জোগাতে হবে। এটা সাহিত্য-সংস্কৃতির মাধ্যমে হবে। এজন্য মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জেলায় জেলায় করা উপযুক্ত হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনের দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলনে শহীদ ও জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধার জানান।
তিনি বলেন, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় এবারের বইমেলা দেরি করে শুরু করতে হল। যারা বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৭ সালে করাচিতে এক সভায় বাংলাকে মাতৃভাষার স্বীকৃতি দিতে আহ্বান জানানো হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যে আন্দোলন করা হবে, এর সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুই দিয়েছিলেন। পাকিস্তান কখনোই আমাদের ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে চায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ তারিখে বইমেলা শুরু হয়েছে। তবে আমার ইচ্ছা এই মেলা ১৭ মার্চ পর্যন্ত চালানো। আশা করছি সবাই স্বাস্থ্য-সুরক্ষা মেনে বইমেলায় আসবেন। সবাই টিকা নেবেন। মাস্ক পরে সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাংলাকে পরিচিত করাতে বিভিন্ন ফন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিজিটাল প্রকাশনা করতে হবে। আধুনিক এই প্রকাশনা বাদ দিলে চলবে না।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
৩৮তম এ বইমেলা চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য- ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’।
ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে বইমেলা শুরু হওয়ার রীতি থাকলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার বইমেলা শুরু হচ্ছে মাসের মাঝামাঝিতে। এই বইমেলা ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। এছাড়া মহান একুশে ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গায় বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় মোট ৩৫টি প্যাভিলিয়নসহ একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট; মোট ৫৩৪ টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬ টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button