কৃষি

জেনে নিন ধনিয়া পাতা চাষ পদ্ধতি

রনজিত কুমার পাল (বাবু) স্টাফ রিপোর্টারঃ

জেনে নিন ধনিয়া পাতা চাষ পদ্ধতি

কম সময়ের মধ্যে মসলা ফসল উৎপাদনে ধনিয়া উল্লেখযোগ্য। ধনিয়া রবি ফসল হলেও এখন প্রায় সারা বছরই এর চাষ করা যায়। ধনিয়ার কচিপাতা সালাদ ও তরকারিতে সুগন্ধি মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ধনিয়ার পুষ্ট বীজ বেঁটে বা গুঁড়া করে তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

যা আছে ধনিয়ায়ঃ- ধনিয়া একটি পুষ্টিকর মসলা। প্রতি ১০০ গ্রাম ধনিয়া পাতায় ৩.৩ গ্রাম আমিষ, ৪.১ গ্রাম শর্করাসহ ক্যারোটিন (ভিটামিন ‘এ’) ৬ হাজার ৭২ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন ‘বি২’ বা রিবোফ্লাভিন ০.১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-‘বি’ ১৩৫ মিলিগ্রাম, আয়রন ২০.১ মিলিগ্রাম ও ক্যালসিয়াম ২৯০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়।

মাটি ও আবহাওয়াঃ- সব রকমের মাটিতেই ধনের চাষ করা যায়। তবে বেলে দো-আঁশ থেকে এঁটেল দো-আঁশ মাটি ধনে চাষের জন্য উপযোগী। ধনে আবাদের জন্য পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকতে হবে।

জাতঃ- ধনিয়ার পাতা উৎপাদনকারী জাতের মধ্যে বারি ধনিয়া-১ বেশ ভালো ফলন দেয়। এছাড়াও রয়েছে লালতীরের সুগন্ধা, এলবি-৬০ ও এলবি-৬৫। লালতীরের ধনিয়ার জাতগুলো সারা বছরই চাষ করা যায়। এই জাতগুলো রঙ উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের, সুগন্ধযুক্ত ও দেরিতে ফুল উৎপাদনকারী অর্থাৎ অনেকদিন ধরে পাতা উৎপাদন করে।

বপনের সময়ঃ- স্থানীয় দেশি জাতের ধনিয়া রবি মৌসুম ছাড়া আগাম চাষ করা যায় না। রবি মৌসুমের জন্য আশ্বিন-কার্তিক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে ধনিয়ার বীজ বপন করতে হয়। তবে এর পরেও ধনিয়ার বীজ বপন করা যায়।

জমি তৈরিঃ- মাটি ও জমির প্রকারভেদে ৪ থেকে ৬টি চাষ ও মই দিতে হয়।

বীজ বপনঃ- বীজ বপনের আগে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক মিশিয়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। এতে বীজ শোধন ও বীজের ত্বক নরম হয়ে অঙ্কুরোদ্গমের সহায়ক হয়। জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরে এবং সমান করার পর ১ মিটার প্রস্থের বেড তৈরি করতে হয়। বেডে ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে সারিতে বীজ ছিটিয়ে বুনে দিতে হয়। বেডে সারি বরাবর একটি রশি টেনে রশি ধরে হাতের আঙুল বা একটি কাঠি দিয়ে ২-৩ সেন্টিমিটার গভীর করে নালা করতে হয়। নালায় বীজ ফেলে হালকা মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। প্রতি শতকে ৭০ থেকে ৮০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। এই পরিমাণ বীজে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ধনিয়া গাছ পাওয়া যায়।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ- ধনে চাষের জন্য মাঝারি উর্বর মাটিতে হেক্টরপ্রতি ১৫০ থেকে ৩০০ কেজি ইউরিয়া, ১০০ থেকে ২০০ কেজি টিএসপি, ৮০ থেকে ১০০ কেজি এমপি এবং ৭ থেকে ১০ টন গোবর সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর, সমুদয় টিএসপি ও অর্ধেক এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর চারা রোপণের এক সপ্তাহ আগে মাদার দিয়ে মিশিয়ে রাখতে হবে। এর পর চারা রোপণ করে সেচ দিতে হয়। ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক এমপি সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর ৮ থেকে ১০ দিন পর প্রথম কিস্তিতে এবং চারা লাগানোর ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর বাকি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ- পাতা ফসলের ক্ষেত্রে চারা গজানোর ১০ থেকে ১৫ দিন পর প্রতি সারিতে ৫ সেন্টিমিটার পরপর একটি চারা রেখে অন্যগুলো তুলতে হবে। বীজ ফসলের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ সেন্টিমিটার পরপর একটি চারা রাখতে হবে। নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার এবং মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। প্রতিবার সেচের পর জমির ‘জো’ আসামাত্র মাটির জটা ভেঙে দিলে গাছের শিকড় প্রচুর পরিমাণে আলো-বাতাস পাবে, ফলে গাছের বৃদ্ধি সহজ ত্বরান্বিত হবে। ধনে গাছ জমির পানি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই জমাকৃত অতিরিক্ত সেচের পানি বা বৃষ্টির পানি ২ থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যেই নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ- বীজ বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর পাতা সংগ্রহ শুরু করা যায়। পরবর্তী সময়ে মাসখানেক ধরে এ সংগ্রহ চালিয়ে যাওয়া যায়। এতে ১ শতক জমিতে ১৫ থেকে ২০ কেজি পাতা পাওয়া যায়। আবার বীজ সংগ্রহের জন্য গাছ রেখে দিলে এবং বীজ যখন সম্পূর্ণভাবে পাকে কিন্তু গাছ প্রায় সবুজ থাকে তখন বীজ সংগ্রহ করলে ৮ থেকে ১০ কেজি বীজ পাওয়া যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button