আন্তর্জাতিক

চরম বিদ্যুৎ সংকটে অন্ধকারে পুরো লেবানন

লেবাননে বিদ্যুৎ নেই। মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে সারাদেশ এখন বিদ্যুতের অভাবে অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, দেইর আম্মার এবং জাহরানিতে অবস্থিত দেশটির সবচেয়ে বড় দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

বিদ্যুতের গ্রিড ‘শনিবার দুপুর ১২টার সময় সম্পূর্ণ অচল হয়ে গেছে’ এবং আগামী বেশ কয়েকদিনের আগে সেগুলো আবার চালু করা সম্ভব হবে না বলে সরকার জানিয়েছে। গত ১৮ মাস ধরে লেবানন বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং দেশটিতে জ্বালানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

অর্থনৈতিক সংকটের ফলে দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। দেশটিতে মুদ্রা সংকট তৈরি হয়েছে এবং রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আকারে বিক্ষোভ প্রতিবাদ চলছে।

দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাপক ঘাটতির ফলে বিদেশি জ্বালানি সরবরাহকারীদের কাছ থেকে জ্বালানি কেনার অর্থও দেশটির কোষাগারে নেই।

লেবাননের অনেক মানুষকে জীবনধারণের জন্য এখন ডিজেলচালিত ব্যক্তিগত জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। কিন্তু জ্বালানি সংকটের ফলে ক্রমশ এসব জেনারেটর চালানোও ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ ছাড়া জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড অচল হয়ে পড়ায় সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য এসব জেনারেটরও এখন যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য নয়। বেসরকারি ভিত্তিতে সরবরাহ চালু রাখতে যারা জেনারেটরের ব্যবসা করেন, তারাও বলছেন- জ্বালানি সংকটের কারণে তাদের সেবাও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

এমনকি শনিবার গোটা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেও লেবাননের মানুষ বেশিরভাগ সময়ই দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ পাচ্ছিলেন। লেবাননের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিও এক বিবৃতিতে দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেবার খবর নিশ্চিত করেছে। এই দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র একসাথে লেবাননের ৪০শতাংশ বিদ্যুতের জোগান দিত।

জানা যাচ্ছে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে এই দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেবার ফলে বিদ্যুতের নেটওয়ার্ক ‘পুরো অচল’ হয়ে গেছে এবং ‘এই মুহূর্তে সেগুলো আবার চালু করার কোন সম্ভাবনাই নেই’।

আল-জাজিরা খবর দিচ্ছে যে উত্তরাঞ্চলীয় হালবা শহরে রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানির দপ্তরের বাইরে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ত্রিপলি শহরের বাইরে টায়ারে আগুন দিয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।

আগস্ট ২০২০য়ে বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের প্রভাব মোকাবেলায় দেশটি এখনো হিমশিম খাচ্ছে। ওই বিস্ফোরণে মারা যায় ২১৯ জন এবং আহত হয় আরও ৭ হাজার।

বৈরুত বন্দরে ওই বিস্ফোরণের পর সরকার পদত্যাগ করেছিল। ফলে দেশটিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। পূর্ববর্তী সেই সরকার পদত্যাগ করার এক বছরেরও বেশি সময় পর সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন নাজিব মিকাতি।

ঘাটতি মোকাবেলার লক্ষ্যে গত মাসে হেজবোল্লাহ গোষ্ঠী ইরান থেকে জ্বালানি এনে দেয় লেবাননে। হেজবোল্লাহ বিরোধীরা তখন বলে যে, গোষ্ঠীটি তাদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য জ্বালানি সংকটে সাহায্য করেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button