অর্থ ও বাণিজ্য

শীতের আগেই বাজারে অস্বস্তি

শীত শুরুর আগেই বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দামে মিলছে না স্বস্তি। রাজধানীর অধিকাংশ সবজি বাজারে ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ স্পষ্ট। ডিমের দাম কমলেও মাছ, মাংস আর তেলে বিরাজ করছে অস্বস্তি। এদিকে, দেড়শ টাকা হাঁকিয়েছে গাজর, মরিচ, টমেটোর দাম।

আজ (শুক্রবার, ৮ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে আগাম শীতকালীন সবজি উঠছে। তাই দামও একটু বেশি। তবে শীত শুরু হলে এ দাম আর থাকবে না। তখন সাধারণ ক্রেতার নাগালেই থাকবে সবজির দাম। মাংসের দামে অস্বস্তি থাকলেও দাম বাড়ার যুক্তি দিচ্ছেন না বিক্রেতারা।

মিরপুর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, আড়াইশ গ্রাম মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। মরিচের ঝালের সঙ্গে ক্রেতাদের কপালে চিন্তার ভাজ ফেলছে পেঁয়াজ। পেঁয়াজের দাম এরইমধ্যে ৭০ টাকায় উঠে গেছে।

দেশি ছোট রসুনের কেজি ৬০ টাকা হলেও দেশি বড় রসুন ৮০ টাকা। কিন্তু ইন্ডিয়ান রসুনের দাম দেড়শ’ টাকা। সাদা ও লাল আলুর কেজি ২৫ টাকা। ভর্তার জন্য জনপ্রিয় জাম আলু ৪০ টাকা আর দেশি ছোট ঝুরি আলু ৩০ টাকা কেজি।

কচুর মূলেই যেন ভরসা দেখছেন ক্রেতারা। কেজিতে ২৫ টাকায় মিলছে এ সবজি। এদিকে, ধনেপাতা দেড়শ টাকা কেজি হলেও ১০০ গ্রামের দাম ২০ টাকা।

লেবুর হালি ২০ টাকা, মাঝারি সাইজের লাউ ৩০ টাকা, জালি কুমড়া ২৫ টাকা পিস, করলা ৫০ টাকা কেজি, পটলের কেজি ৩৫, শসার কেজি ৪০, বেগুনের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। গতকালও বেগুনের কেজি ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

ঢেড়সের দাম ৫০ টাকা কেজি। শিমের ঝাঁজ কমেছে, কেজিতে মিলছে ৮০ টাকায়। কাঁকরোল ৫০, ধুন্দল ৪০, কাঁচকলার হালি ৩০ টাকা। মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকা। ফুল কপির দাম এখনো আকাশ ছোঁয়া। ২০ গ্রাম ওজনের একটি ফুলকপির দাম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা।

ক্রেতা মনসুর আলী বলেন, কচু, আলু, শাক ছাড়া কিছু খাওয়ার উপায় নেই। এগুলো বাদে সব কিছুর কেজি ৫০ টাকার উপরে। লাল শাক ১৫ টাকা আটি, ডাটা ২০, পুই শাকের আটি ৩০, কচু শাক ১০, পাটশাক ১৫ টাকা।

মাছের বাজারেও অস্বস্তি স্পষ্ট। নদীর চিংড়ির কেজি ৭০০ টাকা। তবে বড় সাইজের চিংড়ির দাম আরো বেশি- ৮০০ টাকা। লাল চিংড়ি ৪৪০ টাকায় মিলছে।

চাষের ট্যাংরা মাছ ৪৬০ টাকা। রুই দিন দিন যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে যাচ্ছে, এক থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আইর মাছ ৬০০, বোয়াল ৪৫০, কাতল ৪০০ টাকা।তেলাপিয়া ১৪০ টাকা কেজিতে মিললেও নদীর সরপুঁটি ৪০০ টাকা, তবে চাষের দেশি সরপুঁটি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছ বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৫ দিন আগেও রুই-কাতলা মাছের দাম ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা ছিল। এখন কেজিতে ৭০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

গাজর, মরিচ, টমেটোর দাম কেন কেজি প্রতি দেড়শ টাকা- জানতে চাইলে বিক্রেতা সুরুজ মিয়া জানান, মরিচের সরবরাহ কম অনেক দিন। তাই দাম কমছে না। তবে টমেটোর দাম গতকালও ছিল ১১০ টাকা। কিন্তু আজ আড়ত থেকে কিনতে হয়েছে ১৩০ টাকা কেজি।

দেশি গাজরের সরবরাহ ও সংরক্ষণে অসুবিধা উল্লেখ করে এ সবজি বিক্রেতা বলেন, হাইব্রিড গাজর বিক্রি করতে হচ্ছে দেড়শ টাকা কেজি।

পাশেই কাদের গোস্ত বিতান নামক দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সাইনবোর্ডে দাম লিখে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতিকেজি ৫৬০ টাকা, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি বি‌ক্রি হ‌চ্ছে ১৫০ টাকা। বেড়েছে পাকিস্তানি ককের দাম। ১৫ দিন আগেও ২৭০ টাকায় মিললেও তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৩১০ টাকা কেজিতে। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১৫ টাকায়। আর দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা দরে।

তবে ডিমের দাম কমেছে। একই দোকানে ডিম (লেয়ার) প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়, যা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। দেশি মুরগির ডিম ডজন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ১৬০ টাকা।

শরিফুল হক নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে ডিমের দাম এখনো বেশি। সবজিতেও স্বস্তি পাচ্ছি না। তেলের দামের ব্যাপারে নাই বা বললাম। মাছের দামও বেড়েছে। সব কিছুই যেন ক্রেতার নাগালের বাইরে যাচ্ছে।

মো. জলিল মিয়া নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা মাছ কিনতে এসে বলেন, সপ্তাহে শুক্রবারেই বাজার করি। আমার মতো অনেকেই বাজার করতে আসেন। সেটারই যেন সুযোগ নেওয়া হচ্ছে। সব কিছুতেই দাম বেশি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button