জাতীয়

জাতীয় পার্টির মহাসচিব হওয়ার দৌড়ে ৬ নেতা

জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মারা যাওয়ায় জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব কে হচ্ছেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু শনিবার সকালে মারা যান। কয়েক ঘণ্টা না পেরোতেই দলের ভেতরে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। মহাসচিব হতে আগ্রহীরাও বেশ তৎপর হয়ে ওঠেন। গত দুই দিনে দলীয় কার্যক্রমে বাড়তি সক্রিয়তার পাশাপাশি তারা গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করছেন।

যে কোনো মুহূর্তে মহাসচিব পদে নাম ঘোষণা হতে পারে—এমনটি ধরে নিয়ে আগ্রহীরা বিরামহীন লবিয়িং-তদবিরও করছেন। তবে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বাবলুর মৃত্যুতে দল ঘোষিত তিন দিনের শোক কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগে মহাসচিব পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তিন দিনের শোক কর্মসূচি শেষ হচ্ছে আজ সোমবার। সে ক্ষেত্রে দুই-এক দিনের মধ্যেই নতুন মহাসচিব নিয়োগ দিতে পারেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। পার্টির গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চেয়ারম্যান একক সিদ্ধান্তেই মহাসচিব নিয়োগ দিতে পারেন।

পরবর্তী মহাসচিব নিয়োগের বিষয়ে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের গতকাল রবিবার রাতে বলেন, ‘সময়মতো মহাসচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে আমি একটা কথা খুব ক্লিয়ার বলে দিতে চাই, চেয়ারম্যান ও মহাসচিব হচ্ছেন পার্টির ফেস (চেহারা)। চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের ইমেজের (ভাবমূর্তি) ওপরই পার্টির ইমেজ নির্ভর করে। যাকে মহাসচিব করলে দেশের মানুষ খুশি হবেন, এরকম কাউকেই করা হবে। যার বিরুদ্ধে মনোনয়ন ও পদ-পদবি বিক্রির অভিযোগ নেই এবং শিক্ষিত, তাকেই মহাসচিব করা হবে। অতীতে কারো কারো বিরুদ্ধে মনোনয়ন ও পদ বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল, এ নিয়ে পার্টির ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদি সেরকম কাউকে মহাসচিব করা হয়, তাহলে দলের নেতাকর্মীরা ও দেশের মানুষ বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখবে।’

জাপার নতুন মহাসচিব পদে আলোচনায় রয়েছেন দলটির কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি। এছাড়া দলটির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী গোলাম মসিহর নামও দলের নেতাদের কারো কারো মুখে শোনা যাচ্ছে। তবে জি এম কাদেরের গতকাল রাতের কথোপকথন পর্যালোচনা করলে এবং অন্য কোনো কারণ না থাকলে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেই একজনকে মহাসচিব পদে দেখা যেতে পারে।

রুহুল আমিন হাওলাদার জাপার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় মহাসচিব ছিলেন। তিনি নিজে মহাসচিব হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ ব্যক্ত না করলেও দলের নেতাকর্মীদের একাংশ তাকে মহাসচিব হিসেবে পেতে চায়। দীর্ঘ সময়ে দলের প্রতি অবদান, সাংগঠনিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার বিচারে এই অংশ তাকে মহাসচিব করার পক্ষে। দলের প্রতি আনুগত্য, দুঃসময়েও দল ছেড়ে না যাওয়া, নিয়মিত সাংগঠনিক তত্পরতা এবং ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সম্পর্কের বিচারে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার পক্ষেও দলের একাংশ এককাট্টা। করোনাকালেও সংগঠনকে সক্রিয় রাখতে ঢাকা, খুলনা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন সাহিদুর রহমান টেপা। দলের তরুণ নেতাদের কাছেও তার বাড়তি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে মহাসচিব পদে তাকে নিয়োগের পক্ষেও শক্তিশালী মত রয়েছে। এছাড়া দলে অপেক্ষাকৃত নবীন হলেও সংসদে ও টিভি টকশোতে গঠনমূলক বক্তব্যের জন্য একধরনের ভাবমূর্তি রয়েছে গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর, দলের নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যও তার জন্য প্লাস পয়েন্ট।

এদিকে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে দলটির সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা মাসুদা এম রশীদ চৌধুরীর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনে একজনকে মনোনয়ন দেবে জাপা। সংরক্ষিত নারী আসনে জাপার কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, এ নিয়েও দলে আলোচনা রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উপদেষ্টা ও তার স্ত্রী শেরিফা কাদেরের। এর বাইরেও সাবেক একজন নারী এমপি মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন। উল্লেখ্য, মাসুদা রশীদ চৌধুরী গত ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button