নোয়াখালীতে অস্ত্রধারী কেচ্ছা রাসেল ও ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন গ্রেফতার
মোঃ ফখর উদ্দিন, নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
নোয়াখালীতে অস্ত্রধারী কেচ্ছা রাসেল ও ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন গ্রেফতার
নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সেই আলোচিত অস্ত্রধারী কেচ্ছা রাসেল (৩১) ও তার প্রতিপক্ষের ইউপি চেয়ারমান নজরুল ইসলাম শাহীন চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে নোয়াখালী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেফতারকৃত নজরুল ইসলাম শাহীন (৪৩) উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অপরদিকে, গ্রেফতারকৃত শহীদ উল্যাহ ওরফে কেচ্ছা রাসেল (৩০) উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের করালিয়া এলাকার মৃত সফি উল্যার ছেলে।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আটককৃতদের নোয়াখালী চিফ জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হবে। এর আগে তাকে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন থেকে শাহীন চেয়ারম্যানকে ও উপজেলার চরহাজারী ইউনিয়ন থেকে কেচ্ছা রাসেলকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
একাধিক সূত্র জানায়, কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বিবাদমান দ্বন্দ্বে কাদের মির্জার বিপক্ষে অবস্থান নেয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন।
দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের জের ধরে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।এতে মির্জার অনুসারীরা ১০-১৫টি মামলায় আসামি করে তাকে। ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন মির্জা বিরোধী বলয়ের অন্যতম নেতা। তার গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ এবং বুধবার সকালে মুছাপুর ইউনিয়নের একাধিক স্থানে তার গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তার অনুসারীরা।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়,গত ৮ মাস ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার সত্য বচনের নামে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতাদের ফেসবুক লাইভে এসে চরিত্র হরণ শুরু করে।
কাদের মির্জার এসব জঘন্য মিথ্যাচারের জের ধরে উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে অন্তঃকোন্দল সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে কাদের মির্জার সাথে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অনুসারী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মির্জানুর রহমান বাদলসহ তার কর্মী সমর্থদের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি হামলা-মামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় কাদের মির্জার সাথে উপজেলা আওয়ামীলীগের মূল ধারার নেতৃবৃন্দ না থাকলে ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে উঠে অস্ত্রধারী শহীদ উল্যাহ ওরফে কেচ্ছা রাসেল (৩০) ও আনোয়ার হোসেন ওরফে পিচ্ছি মাসুদ (ডাকাত)।
কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ হয়ে এ দুই অস্ত্রধারী প্রতিপক্ষদের ওপর হামলা একই সাথে নিজের আখের গোছাতে ছিনতাই,চাঁদাবাজি, মাদক কারবারে বেপরোয়া ভাবে মেতে উঠে। গত ১৩ মে বিকেল ৫টার দিকে বসুরহাট পৌরসভার করালিয়া দোকান ঘরে কেচ্ছা রাসেল ও ডাকাত মাসুদ অস্ত্র হাতে প্রতিপক্ষকে ধাওয়া ও গুলি ছোঁড়ে। পরে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীকে ধাওয়া করে গুলি ছোঁড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ভিডিও চিত্রটিতে দেখা যায় গুলির পর পিচ্ছি মাসুদ হাতে থাকা পিস্তল কোমরে রাখেন। কেচ্ছা রাসেল প্রতিপক্ষকে গুলি ছোঁড়ের এবং কিছুক্ষণ সেখানে অস্ত্র হাতে ঘোরাঘুরি করেন। ওই হামলা ও গুলির ঘটনায় ৫ জন আহত হয়েছিলেন। পরে কোম্পানীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি গুলির কার্তুজ উদ্ধার করে।
এছাড়া কেচ্ছা রাসেল ও ডাকাত মাসুদ একাধিক আওয়ামীলীগ নেতার ওপর হামলার ঘটনা ঘটায় এবং স্থানীয় সাংবাদিক প্রশান্ত সুভাষ চন্দের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় তার বাড়িতে গিয়ে বসত ঘরে ঢুকে হামলা চালায়।গত ৩ আগস্ট রাত ৮টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগিনা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু ও স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ সদস্য ফখরুল ইসলাম রাহাতকে বাসা থেকে ধরে এনে হত্যার হুমকি দেয় কেচ্ছা রাসেল।
তবে ভিডিওতে ভাইরাল হওয়া অপর অস্ত্রধারী পিচ্ছি মাসুদ ওরফে ডাকাত মাসুদ বসুরহাট বাজারে,থানার সামনে এখনো কোমরে অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। অস্ত্র হাতে তার ভিডিও ফেসবুক ভাইরাল হলেও এখনো সে পুলিশের হাতে অধরা।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো.শহীদুল ইসলাম দুই আসামিকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় পরবর্তীতে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।