জাতীয়

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মদিন আজ

‘বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা রেনু। এক মহীয়সী নারীর প্রতিকৃতি। তিনি ছিলেন স্বামী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা ও আত্মবিশ্বাসের উৎস। বঙ্গমাতাকে ছাড়া বঙ্গবন্ধুর পক্ষে গোটা জীবনে এত সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হতো না। বঙ্গমাতাকে ছাড়া বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসম্পূর্ণ। বঙ্গমাতাকে পাশে পেয়েই বঙ্গবন্ধু পূর্ণতা পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রেরণা দানের পাশাপাশি এ দেশের সুদীর্ঘ সংগ্রামের ফসল আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। বাংলার ইতিহাসে জাতির সংগ্রামী নেতৃত্ব সৃষ্টিতে নীরবে-নেপথ্যে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন বঙ্গমাতা।’

৯১তম জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিবিদরা এমনইভাবে মূল্যায়ন করেছেন জীবনে-মরণে জাতির পিতার সহধর্মিণী, সহযাত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে। তারা আরও বলেন, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে দীর্ঘ ২৪ বছরের লড়াই-সংগ্রামের প্রতিটি পদক্ষেপ ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে জাতির পিতার নেপথ্যের শক্তি, সাহস ও বিচক্ষণ পরামর্শক হয়ে আছেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

আজ রোববার (৮ আগস্ট) বঙ্গমাতার ৯২তম জন্মদিন। এবারই প্রথম দেশপ্রেম, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সাহসিকতা, ত্যাগ ও অনুপ্রেরণার বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিবসকে ‘ক’ শ্রেণীর জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। তাই সরকারী ও বেসরকারীভাবে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি আগামীকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবেন এ দেশের সুদীর্ঘ সংগ্রামের ফসল মহার্ঘ্য স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসে অনন্য ভূমিকা পালনকারী মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে।

বঙ্গমাতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ইতোমধ্যে রাজধানীর সব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোহনায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে লাগানো হয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারসহ ইতিহাস সংবলিত ডিজিটাল ব্যানার। ঐতিহাসিক ধানমন্ডির ৩২ নম্বর জাতির পিতার বাসভবনের চারিদিকে, বনানী কবরস্থানের সামনেসহ রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লায় শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে টানানো অসংখ্য পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন। সরকারী ও বেসরকারীভাবে বঙ্গমাতার জন্মদিন পালনে নেয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি।

সরকারীভাবে নারীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছরই প্রথম স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা, গবেষণা, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন এবং রাজনীতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচজন বিভিন্ন নারীকে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক’ প্রদান করা হবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

এ বছর যারা পদক পাচ্ছেন : ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মমতাজ বেগম (মরণোত্তর), ‘শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া’ ক্ষেত্রে টাঙ্গাইলের জয়া পতি (মরণোত্তর), ‘কৃষি ও পল্লীউন্নয়ন’ ক্ষেত্রে পাবনার কৃষি উদ্যোক্তা মোছাঃ নুরুন্নাহার বেগম, ‘রাজনীতি’ ক্ষেত্রে কুমিল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ জোবেদা খাতুন পারুল এবং ‘গবেষণা’ ক্ষেত্রে নেত্রকোনার লেখক ও গবেষক নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ)। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী পদকপ্রাপ্তদের ১৮ ক্যারেট মানের ৪০ গ্রাম স্বর্ণদ্বারা নির্মিত পদক, পদকের রেপ্লিকা, চার লাখ টাকার চেক ও সম্মাননাপত্র তুলে দেবেন।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছে মূল অনুষ্ঠানের। প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রোববার (৮ আগস্ট) সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন’ এবং ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক প্রদান’ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক বিতরণ করবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

এছাড়া নারীদের আর্থিক সহায়তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বঙ্গমাতার জন্মদিনে ৬৪ জেলায় চার হাজার অসচ্ছল নারীকে সেলাই মেশিন ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই হাজার নারীকে দুই হাজার টাকা করে মোট ৪০ লাখ নগদ অর্থ প্রদান করা হবে।

সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও প্রাণঘাতী করোনায় যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচী। আওয়ামী লীগের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আগামীকাল সকালে বনানী কবরস্থানে বঙ্গমাতা শহীদ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কোরান খতম, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। সকাল সাড়ে ১০টায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির উদ্যোগে দলের বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘বাঙালীর মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং এক হাজার করোনা যোদ্ধা চিকিৎসকদের মাঝে বিশেষ উপহার সামগ্রী বিতরণ।

এছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগসহ অন্য সংগঠনগুলোও আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং অসহায়-দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্য ও করোনা প্রতিরোধী সামগ্রী বিতরণসহ নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশেই কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি আজ রোববার (৮ আগস্ট) শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবেন মহীয়সী নারী জাতির পিতার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button