আন্তর্জাতিক

চীনের উহানে ফের বেড়েছে করোনা সংক্রমণ

চীনে নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অতিসংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তিন শতাধিক সংক্রমণ গত দশ দিনে শনাক্ত করা হয়েছে। নতুন করে বিধিনিষেধও আরোপ করা হচ্ছে। চীনের যে নগরী হতে করোনাভাইরাস প্রথম ছড়িয়েছিল, সেই উহান নগরীতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, উহানে মোট সাতজনের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে।

ডেল্টার কারণে চীন খুব ঝুঁকির মধ্যে আছে কীনা তা নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে আশঙ্কা প্রকাশ করছে। চীনের গণমাধ্যমে এখন করোনার প্রাদুর্ভাবই শিরোনাম দখল করে আছে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় একজন বিশেষজ্ঞ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

করোনার বিস্তার ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন শহরে নতুন করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। কোটি কোটি মানুষকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। চীনে কত মানুষ পুরোপুরি টিকা পেয়েছে তা স্পষ্ট নয়, তবে চীনা কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, এ পর্যন্ত ১৬০ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।

এখন চীনের মোট ১৫টি প্রদেশ ও পৌর এলাকায় কোভিডের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি এলাকার সংক্রমণই চীনের পূর্বাঞ্চলীয় জিয়াংশু প্রদেশের নানজিং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করা হচ্ছে।

চীনে নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য কর্তৃপক্ষ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এবং সেখানকার পর্যটন মৌসুমকে দায়ী করছে। তবে চীনে শনাক্ত হওয়া সংক্রমণ অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো বেশ কম।

কিন্তু গত বছর প্রথম সেদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার পর এই প্রথম এত বেশি সংখ্যায় এবং এত বেশি এলাকায় সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই দফায় প্রথম কোভিডের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল নানজিং বিমানবন্দরে। রাশিয়া থেকে আসা বিমান পরিস্কারের কাজ করেছিলেন যে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা, তারাই প্রথম আক্রান্ত হন। এরপর চীন দ্রুত শহরটির ৯২ লাখ মানুষের সবাইকে পরীক্ষা করেন এবং স্থানীয়ভাবে লকডাউন জারি করেন।

কিন্তু এই সপ্তাহান্তে চীনের হুনান প্রদেশের জাংজিয়াজি শহরে বেশ কিছু সংক্রমণ ধরা পড়ে। মনে করা হয়, নানজিং এর কিছু মানুষ সেখানে গিয়েছিলেন এবং তাদের মাধ্যমেই সেখানে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখন শহরের একটি থিয়েটারে যে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ গিয়েছিলেন, তাদের সবাইকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। একটি রিপোর্টে বলা হচ্ছে, এই থিয়েটারে একদিনের প্রদর্শনীতেই প্রায় দুই হাজার মানুষ যোগ দিয়েছিলেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, নগরীর আকর্ষণীয় স্থানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং পর্যটকদের শহর ছাড়ার আগে কোভিড টেস্ট করতে বলা হয়েছে।

জাংজিয়াজি নগরীকে এখন চীনের করোনাভাইরাসের নতুন ‌‘গ্রাউন্ড জিরো’ বলে বর্ণনা করেছেন চীনের শীর্ষ এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঝং নানশান। নতুন দফা করোনার সংক্রমণ এখন বেইজিং পর্যন্ত পৌঁছেছে। সেখানে স্থানীয়ভাবেও কিছু সংক্রমণ ঘটেছে।

যেসব এলাকায় করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেসব এলাকার সঙ্গে বেইজিং এর সব ধরনের বিমান, বাস এবং অন্যান্য ভ্রমণের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজধানীতে সব ধরনের পর্যটকদের বেইজিং ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেবল জরুরি কাজের বেলাতেই কোভিড টেস্ট নেগেটিভ হলে শহরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।

উত্তরের হেনান প্রদেশের জাংজু শহরেও সংক্রমণ ঠেকাতে জোর চেষ্টা চলছে। এই শহরে মারাত্মক বন্যার পাশাপাশি করোনাভাইরাসও ছড়িয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button