জেলার খবর

বাঁশখালীর উপকুলীয় গন্ডামারা ইউনিয়নসহ পাহাড়ি ঢলে লন্ডভন্ড বিস্তির্ন এলাকা

এনামুল হক রাশেদী, বাঁশখালী উপজেলা প্রতিনিধি-(চট্টগ্রাম)

বাঁশখালীর উপকুলীয় গন্ডামারা ইউনিয়নসহ পাহাড়ি ঢলে লন্ডভন্ড বিস্তির্ন এলাকা

একরাতের টানা অতিবৃষ্টিতেই চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে বাঁশখালীতে ৭টি ছরার (পাহাড়ি ঝর্ণা) অন্ততঃ ৫২ স্পটে ভাঙনে ৩৬ গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি, শাক-সবজি ক্ষেত, মৎস্য খামার, পোল্ট্রী ফার্ম পাহাড়ি ঢলে ভেসে কোটি কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজিবন।

সবাইকে হতবাক করে দিয়ে উপকুলীয় গন্ডামারা ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষও এবার পানিবন্দি হয়ে নাকাল হয়ে পড়েছে জনজিবন, যা ছিল শতবছরের ইতিহাস ভাঙ্গা এক রেকর্ড।

৩০ জুন’২১ ইং বুধবার দিবাগত রাতের টানা অতিবৃষ্টিতেই বাঁশখালীর উপকুলীয় গন্ডামারা ইউনিয়ন সহ পাহাড়ী এলাকার মানুষ এ ক্ষয়-ক্ষতি এবং বিপর্যস্ত জনজিবনের সম্মুখিন হয়েছে।

উপকুলীয় গন্ডামারা ইউনিয়নে শুধু ঘন বর্ষা নয় সাইক্লোন জলোচ্ছাষের মত প্রাকৃতিক বৈরীতায়ও অত্র এলাকার হাজার হাজার জনতা কখনো জলাবদ্ধতার সম্মুখিন হয়নি, যত বৃষ্টিই হউক, সাগরের যত উচ্ছতায় জোয়ারের পানি ঢুকুক, ভাটার টান পড়ার সাথে সাথেই নেমে যেত সব পানি, বর্তমান সীমাহীন যন্ত্রনাময় জলাবদ্ধতার জন্য সবাই অত্র এলাকায় প্রতিষ্টিতব্য দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প ১৩২০ মেঃওঃ এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টের অপরিকল্পিত ল্যান্ড ফিলিং ও ড্রেনেজ সিস্টেমকেই দায়ী করছে।

গন্ডামারা পশ্চিম বড়ঘোনায় বিভিন্ন রাস্তা পানির নিচে ডুবে থাকার ফলে গ্রামীন জনসাধারনের দুর্ভোগ ও ভোগান্তির পাশাপাশি পাওয়ার প্ল্যান্ট সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের চলাচল সহ নিত্যপণ্য আনা নেওয়ায় দারুনভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে পাওয়ার প্ল্যান্ট সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মারাত্বকভাবে অার্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হবে বলে জানিয়েছে।

১ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টি না হলেও বিকাল পর্যন্ত গন্ডামারা, পশ্চিম বড়ঘোনা সহ পাহাড়ী গ্রামগুলোর বাড়ির উঠান, ঘরের বারান্দা হাঁটুর অধিক পানিতে ডুবে থাকায় ৫ শতাধিক পরিবারে চুলায় আগুণ জ্বালাতে পারেনি পরিবারের গৃহিনীরা। বুধবার রাতভর গ্রামবাসী ঘুমাতে পারেনি পাহাড়ি ঢলের তান্ডবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে আত্মীয় স্বজনদের দেয়া খাবারে কোনরকম দিন কেটেছে পানিবন্দি এসব পরিবারের। পাহাড়ী এলাকায় অনেকের পোষা হাঁস মুরগী পানিতে ভেসে মারা গেছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। গন্ডামারা, পশ্চিম বড়ঘোনা, শিল্কুপ, জলদি, চাম্বল, পুঁইছড়ী, শেখেরখীল, নাপোড়ায় প্রায় দুই শতাধিক পুকুর প্লাবিত হয়ে লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। ২ হাজার একর শাক-সবজি ক্ষেত ৫/৬ ফুট পানির নিচে পাহাড়ি ঢলে ডুবে থাকার পর পাহাড়ি ঢল চলে গেলেও পলি মাটি জমে এবং পানির আঘাতে ক্ষেতের গাছ মরে যেতে শুরু করেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাঁশখালী পৌরসভার বাহার উল্লাহ পাড়া, কেবল কৃষ্ণ মহাজন পাড়া, মহাজন পাড়ায় জলদি ছরার পাড়, চাম্বল ও নাপোড়ায় চরার পাড় ভেংগে ৩ শতাধিক ঘর, ৩২টি পুকুর, ১২টি গ্রামীণ রাস্তার ওপর দিয়ে ৪/৫ ফুট পরিমান পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে। কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ৭টি। ওখানকার পরিবারের লোকজন গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালেও ঘরে ডুকতে পারেনি।

পাহাড়ি ঢলে পলি জমে আছে ঘরের ভিতর। উঠানে হাঁটুর অধিক পানি। স্বজনদের বাড়ি-ঘরে আশ্রয় নিলেও কাঁচা ঘর পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত থাকায় ভেংগে পড়ার আতংকে রয়েছে। জলদী ছরার অধিকাংশ এলাকায় প্রভাবশালীরা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় ছরা দিয়ে পাহাড়ি ঢল প্লাবিত না হয়ে ছরার পাড় ভেংগে বসতভিটা ও রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে প্লাবিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসীদের অনেকেই। অবৈধ দখলদার বিরোদ্ধে কোন জনপ্রতিনিধি কোনধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্থানীয় দুর্ভোগ লেগেই আছে।

পুঁইছড়ি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের নাপোড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢল পুরো গ্রাম জুড়ে ভয়ংকর তান্ডব চালিয়েছে। পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে, আস্ত নাপোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়কের ৬০ হাত লম্বা একটি অংশ, মীরপাড়া ব্রিজের সম্মুখের বিশাল অংশের মাটি, ব্রাহ্মণপাড়া টেক ব্রিজের বিশাল অংশের মাটি, মীর পাড়ার নুরুল আবছারের বিছবিল্লাহ মৎস্য খামারের ১২ লাখ টাকার মাছ, জসিম উদ্দিন পোল্ট্রি ফার্মের সাড়ে ৩ হাজার মুরগীসহ ফার্ম ডুবে গেছে। ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শের আলী আলী বলেন, আমার ৫২ বছর বয়স এখন।

এই বয়সে আমি কখনও পাহাড়ি ঢলের এরকম তান্ডব দেখিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা গত বছর ৬২ লাখ টাকা দিয়ে নাপোড়া ছরা খননের কাজ করেছে। ওই খনন কাজের কোন স্মৃতিচিহ্ন নেই। সব ভেসে গেছে।
বিছমিল্লাহ মৎস্য খামারের মালিক নুরুল আবছার বলেন,আল আরাফাহ ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা লোন নিয়ে মৎস্য খামার করেছি। কিন্তু পাহাড়ি ঢলে সব মাছ ভেসে গেছে। এমনকি মৎস্য খামারের বিশাল অংশ পাহাড়ি ঢলে ভেসে আসা বালিতে ভরে গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকায় সুপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পুরো গন্ডামারা ইউনিয়ন সহ পাহাড়ি ঢলে বাঁশখালী পৌরসভা, পুঁইছড়ি, শীলকূপ, চাম্বল, শেখেরখীল, বৈলছড়ি ও কালীপুর ইউনিয়নের ৩৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

বাঁশখালী উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আবুল কালাম মিয়াজি বলেন, ‘বাঁশখালীর বিভিন্ন গ্রামে পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের লিখিত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের প্রতিবেদন দেখেই চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button