জেলার খবর

বাঁশখালীতে কথিত স্টেডিয়াম নির্মাণের মিথ্যা প্রচারনা চালিয়ে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রয় করছে ভূমিদস্যুরা

এনামুল হক রাশেদী, বাঁশখালী উপজেলা প্রতিনিধি-(চট্টগ্রাম)

বাঁশখালীতে কথিত স্টেডিয়াম নির্মাণের মিথ্যা প্রচারনা চালিয়ে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রয় করছে ভূমিদস্যুরা

চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায় স্টেডিয়াম নির্মাণের নামে বিস্তির্ন পাহাড় কেটে লক্ষ লক্ষ টাকার মাটি বিক্রি করছে পাহাড় খেকো ভূমি দস্যুরা। এলাকাবাসীদের অভিযোগ পাওয়ার পর বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে পাহাড় কাটা। উপজেলার বৈলছড়ি ইউনিয়নের জঙ্গল চেচুরিয়া গ্রামের খোদাল্যা পাড়া সংলগ্ন একটি বিশাল খাস পাহাড় কেটে ফেলছিল পাহাড় খেকোরা ভুমিদস্যুরা। পাহাড় কাটায় জড়িত ব্যক্তিদেরকে ২৭ জুন’২১ ইং রবিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ৩০ ফুট উঁচু বিশাল পাহাড় সরকারি খাস। পাহাড়ের শিরোভাগেই প্রায় ৪৪০ শতক জায়গা জুড়ে বিশাল সমতল অংশ নিয়ে মাঠ। পাহাড়, পাহাড়ের পাদদেশ ও পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় বসবাসরত গ্রামের যুবকরা ঐ বিশাল সমতল ভূমিকে খেলার মাঠ হিসেবেই ব্যবহার করে আসছিল দির্ঘদিন থেকে।

ঐ পাহাড়েই শকুনের নজর পড়ে পাহাড় খেকো ভূমিদস্যুদের। যুবকদের ক্রিড়াপ্রীতিকে কৌশলে নিয়ে প্রতারণাপুর্বক গ্রামের পাহাড় খেকো ভূমি দস্যুরা রটিয়ে দেন যে, এটা সরকারিভাবে স্টেডিয়াম নির্মাণের আদেশ হয়েছে। সরকারি প্রকল্পও বরাদ্দ হয়েছে। পাহাড়ের সুউচ্চ অংশ কেটে করা হবে বিশাল স্টেডিয়াম। স্টেডিয়াম নির্মানের ভূঁয়া আদেশ প্রচারের মূল হোতা হচ্ছেন, মন্জূরুল আলম নামের স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতা। এ রিউম্যার ছড়িয়েই পাহাড় কাটা শুরু করে মন্জুরুল আলম।

২৬ জুন শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১০টি ড্যাম্পার ট্রাকে অন্ততঃ ২২০ গাড়ি মাটি বিক্রি করেছেন এই পাহাড় খেকো চক্র। বিশাল স্কেভেটর দিয়ে কাটা হয়েছে মাঠের বড় একটা অংশের মাটি। প্রতি গাড়ি মাটি বিক্রয়ে আদায় করেছেন ১৮০০ টাকা। এসব মাটি নিয়ে যাবার সময় গ্রামের মেটোপথ ভেংগে চূড়মার হয়ে গেছে।

পাহাড় কাটাতে জড়িত মঞ্জুরুল আলম মুঠোফোনে বলেন, ‘ সরকারি ভাবে স্টেডিয়াম করার জন্য আমি একটি সরকারি প্রকল্প পেয়েছি তাই পাহাড় থেকে মাটিগুলো সরানো হচ্ছে। এখানে আমি মাটি বিক্রয় করছি না। এলাকার স্বার্থে স্টেডিয়াম নির্মাণ করছি।’ এছাড়া কোন দফতরের প্রকল্প, কত টাকা বরাদ্দ, কোন কাগজপত্র আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন সদুত্তর দেননি। বরঞ্চ বলেন, পাহাড় কেটে অন্যায় করিনি, ইউএনও সাহেব বলেছে তাই আপাতত বন্ধ রেখেছি। ইউএনও সাহেবের সাথে বৈঠকের পর পাহাড় কাটা না কাটার ব্যাপারে সিন্ধান্ত নেব।

বৈলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কফিল উদ্দিন বলেন, ‘ কোন ধরণের স্টেডিয়াম নির্মাণের সরকারি বরাদ্দ হয়নি। মঞ্জুরুল আলম নামের ওই ব্যক্তি মাটি বিক্রয়ের জন্য পাহাড় কাটছে। জনগণের প্রতিরোধ সামলাতে ভুয়া স্টেডিয়াম নির্মাণের কথা বলছে সে।’

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন,‘গ্রামবাসীর অভিযোগ পেয়েই আমি বিষয়টি সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র ওপর দায়িত্ব অর্পণ করছি।’
সহকারি কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন,‘পাহাড় কাটা বন্ধ করে দিয়েছি। পাহাড় কাটায় জড়িতরা যেহেতু ঘটনাস্থলে নেই তাই তাদের ২৭ জুন, রবিবার ইউএনও স্যারের কার্যালয়ে হাজীর হতে বলেছি। এরপরই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button