ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ্য মানসিক প্রতিবন্ধী ভ্যান চালক মোস্তাক এক বছরেও পাইনি কোন সরকারী সাহায্য
আবদুল্লাহ আল মামুন, মনিরামপুর উপজেলা প্রতিনিধি-(যশোর)
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ্য মানসিক প্রতিবন্ধী ভ্যান চালক মোস্তাক এক বছরেও পাইনি কোন সরকারী সাহায্য
গত বছর বাংলাদেশ ও ভারতে আঘাত হেনেছিল সুপার সাইক্লোন আম্পান। এতে প্রায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল এবং শতশত মানুষকে করেছিল গৃহহীন। অনেকের বসতঘর সম্পূর্ণ ধ্বংশ হয়ে গিয়েছিল। তালিকা করে সরকার ক্ষতিগ্রস্থদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করেছে। কিন্তু এ আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ মণিরামপুরের মানসিক প্রতিবন্ধী ভ্যানচালক মোস্তাক মোড়ল পাইনি কোন সহযোগিতা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বরের কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও ঝড়ে পড়ে যাওয়া তার কুঁড়েঘর মেরামতের জন্য পাইনি কোন সরকারী সাহায্য।
মণিরামপুরের খানপুর ইউনিয়নের মাছনা গ্রামের মৃত তারাচাঁন মোড়লের পুত্র মোস্তাক মোড়ল। সে কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ৩/৪ শতাংশ জমির উপর একটি কুঁড়েঘরে পুত্র, পুত্রবধু ও নাতি-নাতনি নিয়ে সেখানেই তার বসবাস। তিনি একজন মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও ভ্যান চালিয়ে সে জীবিকা নির্বাহ করে।
ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয়-তা দিয়ে কোন রকম জীবন যাপন করে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পানে তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। মাথা গোজার একমাত্র কুঁড়েঘরটি ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেখানে আর বসবাস করার উপযোগী নেই। তাই বাধ্য হয়েই-পরিবার-পরিজন নিয়ে পাশেই এক প্রতিবেশির পরিত্যাক্ত ঘরে বসবাস করতে হচ্ছে। নিজের ঘরটি কখন ভেঙ্গে পরবে সেটা নিয়েই তার দুঃচিন্তার শেষ নাই।
সরেজমিন জানতে চাইলে কান্না জড়িতে কন্ঠে মোস্তাক বলেন, আম্পানের তান্ডবে তার ঘরটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। একদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে আয় রোজগার অনেক কম, দু’মুঠো খাবার জোটেনা। তার উপর কয়েকদিন হলো ঋন নিয়ে কেনা জীবিকার একমাত্র বাহন ভ্যানগাড়ীটার ব্যাটারী নষ্ট হয়ে গেছে। তবু অনেক কষ্ট করে ব্যাটারী বিহীন ভ্যানগাড়ীটি পায়ে চালিয়ে সামান্য কিছু আয়-রোজগার করার চেষ্টা করি। এভাবেই খেয়ে-না খেয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি।
এ অবস্থায় ঘর মেরামত করবো কিভাবে? চেয়ারম্যান-মেম্বরসহ অনেকের কাছে সাহায্য সহায়তা চেয়েছি-কিন্তু কেউ সহযোগিতা করেনি। এখন আমার পক্ষে ঘরটি মেরামত করা কোন ভাবেই সম্ভব না। যদি আপনারা বলে আমাকে কিছু সাহায্য এনে দিতে পারেন তাহলে বড়ই উপকৃত হতাম।
মোস্তাকের পুত্র শফিকুল ইসলাম ও পুত্র বধু শেফালী খাতুন বলেন, আমরা ১০ টাকা চালের কার্ড করার জন্য অনেকের গিয়েছি, কিন্তু আমরা এত দরিদ্র হওয়া সত্তে¡ও আমাদের সে কার্ডও হয়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী ও সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য হাজিরা খাতুন ও বলেন, মোস্তাকের নাম ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হয়েছিল-সেটা আসলেই তারা পেয়ে যাবে এবং সামনেই তাদের ১০ টাকা চালের কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।
জানতে চাইলে খানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ বলেন, আমাদের পরিষদ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হয়েছিল। তালিকাভূক্ত প্রায় সকলে কিছু কিছু সহযোগিতা পেয়েছে। কিন্তু মোস্তাক মোড়লের নাম তালিকাভূক্ত হয়েছিল কি-না সেটা জানা নেই। তবে এখন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে।