শিব শব্দটির অর্থ কি?
শিব শব্দের অর্থ মঙ্গল। তাই প্রতিটি মঙ্গলময় জিনিস বা ব্যাক্তিত্ব হল শিবস্বরূপ। আর মঙ্গলকে আশ্রয় না করে কয়জন বাঁচতে পারে? তাই শিব সবারই আশ্রয়স্থল। তেমনি শিব ব্যাক্তিত্বের ব্যাক্তি মঙ্গলময় ও আশ্রয়দাতার প্রতিক।
শিবের শম্ভু নামের তাৎপর্য কি?
তার আরেক নাম শম্ভু। শম মানে কল্যাণ এবং ভূ-ধাতু মানে হওয়া। যিনি কল্যাণরূপী হয়ে আছেন বা মূর্ত্ত কল্যাণ, তিনিই শম্ভু।কিভাবে প্রাণীগনের কল্যান করতে হয় তা তার আচরণে নিয়ত প্রকাশিত। আবার এই কল্যান করার পথে অনেক রকম বাধাবিঘ্ন এসে হাজির হয় বহু ঘাত-প্রতিঘাত আসে কারণ শুভ কাজে শতেক বাধা। সেই সব বিরুদ্ধশক্তি জয় করার ক্ষমতা একমাত্র শিব-ব্যাক্তিত্ব ব্যাক্তি স্বভাবজাত গুন কারণ তার উদ্দেশ্য মঙ্গলসাধন।সেই ব্যাক্তিত্বের ব্যাক্তি সব রকম বাধাবিঘ্ন কে জয় করার ক্ষমতা রাখে। সংসারের বিভিন্ন টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যে হলাহল রূপী অমঙ্গল ওঠে একমাত্র তিনি তা গ্রহণ করেন যাতে সংসার বিষমুক্ত থাকে। শিব মূর্তিতে শিবের নীলকন্ঠ তারই প্রতিক।
শিবের ভূতেশ নামের তাৎপর্য কি?
তাহার নাম ভূতেশ, ভূতভাবন।এখানে ভূত মানে “কাল” অর্থ্যাৎ যিনি বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎতেও থাকবেন। তাইতো তিনি ভূতনাথ অর্থ্যাৎ জীব আত্মা যা চিরন্তন সত্য ও শাশ্বত তার প্রভু।
নন্দী এবং ভৃঙ্গী তাৎপর্য কি?
সর্বক্ষণের জন্য মহাদেবের কাছে আছে দুটি অনুচর- নন্দী এবং ভৃঙ্গী। এরা কিসের প্রতিক? নন্দী শব্দের উৎপত্তি নন্দ ধাতু থেকে মানে আনন্দ আর ভৃঙ্গী এসেছে ভৃ-ধাতু থেকে মানে ভরণ, পোষণ ও ধারণ করা। আর এটা তো স্বাভাবিক যে মঙ্গল যাবে সেখানে তার প্রিয় অনুচর আনন্দ, ভরণ, পোষণ ও ধারণ সেখানে চলে যাবে।নন্দীর আগমনের সাথে সাথে পাই প্রেরণা অর্থ্যাৎ মানুষের মধ্যে বেড়ে ওঠা সহ্য, ধৈর্য্য ও অধ্যবসায়ের গুণরাজি।অপরপক্ষে ভৃঙ্গী হল কারক। সংসারে-সমাজে চলতে হলে মানুষের এইসব ব্যাক্তিত্ব থাকা একান্ত প্রয়োজন নইলে তার কপালে সাফল্য জুটবে না।
শিব কেনো যোগেশ্বর?
সর্বযোগের অধিপতি মহাদেব, তাই তার আরেক নাম যোগীশ্বর বা যোগেশ্বর।সকল বোধ দর্শন ও জ্ঞানতার অধিগত। সেইজন্য তার অপর নাম পশুপতি অর্থ্যাৎ জ্ঞান ও দর্শনের অধিপতি। পশু বলতে আমরা সাধারণত বুঝি জন্তু বা ইতর প্রাণী কিন্তু পশু শব্দের একটি ব্যুৎপত্তি আছে দর্শনার্থক পশ-ধাতু থেকে অর্থ্যাৎ সবিশেষ-ভাবে যিনি সব কিছু দর্শন ও বোধ করতে পারেন তিনিই পশু। সেইজন্য শিবের পশুপতি নামের মধ্যেকার পশুশব্দটি সাধারণ চলিত অর্থে নয় বরং প্রজ্ঞাবান বাক্তিত্বের বিশিষ্ট অর্থে প্রযুক্ত।
শিবপূজার বেলপাতা অপরিহার্য্য কেনো?
কারণ বেলগাছের পত্র সুমিস্ট গন্ধ ও ভেষজগুণা বলীযুক্ত। প্রাচীনকাল থেকে আর্যরা আয়ুর্বেদে বেলপাতার ব্যবহার করে আসছে এমন কি চরক, সুশ্রুতের গ্রন্থে বেলপাতার ব্যাবহার উল্লেখ আছে। তাই প্রাচীনত্ব, সুমিস্ট গন্ধ ও ভেষজগুণা বলীযুক্ত এই বৈশিষ্ট্যের জন্য বেলপাতা গুরুত্বপূর্ণ।
শিব কেনো বৈদ্যনাথ?
সুস্থদেহ ও মন নিয়ে কিভাবে সপরিবেশ বেঁচে থাকা যায়, সে-চলার কৌশল শিবের অধিগত। তাই তার অপর নাম বৈদ্যনাথ। বৈদ্য তিনিই যিনি বিদ্যমানতার মরকোচগুলি জানেন যা জীবনকে অসুস্থ করে তোলে, তার কারণ অপসারণ করে জীবনকে সুস্থ ও সুস্থ করে তোলে তাকে বৈদ্য বলে। মঙ্গলময় শিবের মধ্যে বৈদ্যনাথত্ব স্বতঃ উৎসারিত থাকে।