শার্শায় ভেটেরিনারি সেবাকে জরুরীসেবা হিসাবে ঘোষণার দাবি খামারীদের।
এসএম স্বপন, যশোর জেলা প্রতিনিধি-ঃ
শার্শায় ভেটেরিনারি সেবাকে জরুরীসেবা হিসাবে ঘোষণার দাবি খামারীদের।
করোনা পরিস্থিতিতে মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে খামারীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে যশোরের শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি অফিসের ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্টরা। এদিকে দেশের সংকটময় মুহুর্ত্যে উদ্যোক্তাদের দোরগোড়ায় গিয়ে সেবা পরিধি অব্যাহত রাখতে ভেটেরিনারি হাসপাতালকে ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার দাবি জানিয়েছে খামারীরা।
করোনার দূর্যোগময় মুহুর্ত্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লোকবল সঙ্কটে থাকার পরও উদ্যোক্তাদের দুয়ারে সার্বক্ষণিক সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্টরা। সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তারা এলাকার গবাদিপশু, হাঁস, মুরগীকে সেবা দেওয়ার পরও চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্মতৎপরতা। করোনা ভাইরাস সৃষ্ট দূর্যোগ চলাকালে প্রতিদিন অসংখ্য প্রান্তিক খামারী তাদের গবাদি প্রাণিগুলোকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে। চিকিৎসা, টিকাদান, কৃত্রিম প্রজনন, জরুরি পরামর্শসহ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা খামারীদের ও অফিস টাইম ব্যতিত অন্যান্য সময়েও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে ডাক্তাররা। এছাড়াও উদ্যোক্তাদের খামারগুলো সরেজমিন পরিদর্শন সাপেক্ষ চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। চলমান করোনার দূর্যোগে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত প্রাণী সম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের এই সেবা পরিধিকে দ্রুত জরুরী চিকিৎসা সেবার আওতায় লিপিবদ্ধকরণে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
পোল্ট্রি খামারী আক্তারুজ্জামান বলেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে খামারীতো প্রায় শেষ। কারণ ডিমের দাম একেবারেই সর্বনিন্ম, আর তাছাড়া খাবারের দামটাও খুবই বেশি। খামারী যদি সব শেষ হয়ে যায় তাহলে ডিমের যে পুষ্টি সেটা কোথা থেকে আসবে, খামারীরা যদি না বাঁচে। আর বিশেষ করে সরকারের যে প্রানি সম্পদ অধিদপ্তরের ভ্যাকসিনটা আমরা যদি সঠিক সময়ে পাই তাহলে আমাদের খুব ভাল হয়। প্রানি সম্পদ অধিদপ্তর থেকে এসে আমাদের সঠিক চিকিৎসাটা দেয়, সঠিক ভ্যাকসিন ওষুধপালাগুলো যদি দেয় তাহলে আমাদের খুব ভাল হয়। ২৪ ঘন্টা যদি অফিস খোলা থাকলে যখন যাব ওষুধ পাব চিকিৎসাটা পাব এইটাই আমাদের দাবি।
পোল্ট্রি খামারী আশরাফুল হোসেন বলেন, করোনা প্রতিরোধে দেহের দুধ মাংস ডিম এগুলোর প্রয়োজন। কিন্তু এগুলো যোগান দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
গরু খামারী রিজভী আহম্মেদ বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা যারা ক্ষুদ্র খামারী তারা অনেক সমস্যার সম্মূখীন হচ্ছি। আমাদের তাই খামারগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হয় বিশেষ সার্জনদের যদি পরামর্শগুলো আমরা পাই। সেইক্ষেত্রে আমরাও একটু সুবিধা পাই। একটা গরু কিভাবে আমরা পরিচর্যা করব, বাছুর হওয়ার আগে পরে তাদের পরামর্শ পেলে আমরা খুবই উপকৃত হতে পারি। যদি ২৪ ঘন্টার ভিতরে আমরা ভেটেরিনারি সার্জন বলেন বা ডাক্তার বলেন তাদেরকে যদি আমরা আমাদের খামারে পাই বা ২৪ ঘন্টা তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগের সুযোগ পাই সেইক্ষেত্রে আমরা খুবই উপকৃত হতে পারি।
গরু খামারী তারিফ আহম্মেদ বলেন, প্রাণি সম্পদের ২৪ ঘন্টা যদি খোলা থাকে ডাক্তাররা। তাহলে মানুষের ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টা খোলা থাকলে যেমন আমাদের বড় একটা সমস্যা হলে আমরা সেখানে চলে যাচ্ছি এবং সেবা পাচ্ছি। আমাদের গরুর ক্ষেত্রে যদি ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে তাহলে প্রানি সম্পদের একটা ডাক্তারকে রাত্রে নিয়ে আসতে পারলাম। তারাও আসতে পারে তাই আমি ভেটেরিনারি হাসপাতালকে ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার দাবি করছি।
গরু খামারী নাসির উদ্দিন বলেন, দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মাছ মাংস ডিম দুধ বেশি খেতে হবে। আর এটা উৎপাদন করে বৃদ্ধি করতে হবে। প্রানি সম্পদ অফিস থেকে খামারীদের সাথে সব সময় যোগাযোগ থাকলে উৎপাদন বেশি হবে এবং আমরা উপকৃত হব। আমরা চাই প্রানিসম্পদের অফিসের সেবাটা ২৪ ঘন্টা চালু থাক।
শার্শা উপজেলা প্রণিসম্পদ অফিসের এলএসপি আবুল হাসান বলেন, করোনার কারণে আমরা ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অফিস করি এবং সেবা দেওয়া খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। করোনার কারণে অফিস জরুরী হিসেবে করার আমরা দাবি করছি। যাতে আমরা মানুষের পাশে ২৪ ঘন্টা সেবা দিতে পারি, আমরা যেন ২৪ ঘন্টা সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারি, ভেটেরিনারি ডিপার্টমেন্ট খোলা থাকে এবং নিয়োজিত থাকে।
শার্শা উপজেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মাসুমা আখতার বলেন, সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক আমরা দুধ, ডিম ও মাংস উৎপাদনে চিকিৎসা সেবাসহ সকল কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। প্রাণীসম্পদ বিভাগকে অনতিবিলম্বে জরুরীসেবা হিসাবে স্বীক্কৃতি প্রদান এবং পর্যাপ্ত জনবল কাঠামো নিশ্চিত করতে পারলে আমরা দেশকে পর্যাপ্ত প্রাণীজ আমিষের যোগান দিতে পারব।
ভেটেরিনারি চিকিৎসাকে জরুরী হিসাবে ঘোষণা করলে খামারীরা সব সময় প্রয়োজনীয় সেবা পাবে এমনটাই মনে করেন ভূক্তভোগীরা।