বগুড়ায় অবশেষে হিন্দুতরুণীকে চিংরির পরিবর্তে গরুর মাংস পরিবেশনের বিষয়ে মিমাংসা
বিকাশ চন্দ্র, বগুড়া প্রতিনিধিঃ
বগুড়ায় অবশেষে হিন্দুতরুণীকে চিংরির পরিবর্তে গরুর মাংস পরিবেশনের বিষয়ে মিমাংসা
গত ২০শে মে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় বগুড়া শহরের অভিজাত বিপনী বিতান রানার প্লাজা’র অর্ভুন্তরে ‘সম্পাস ডাইন’ নামে একটি চাইনিজ রেস্তরাঁয় বগুড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বী এক তরুণীকে চিংড়ির মাছের মালাইকারীর সাথে গরুর মাংস মিশিয়ে খাওয়ানোর অভিযোগ উঠে। ওই রাতেই ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যপক তোড়পাড় শুরু হয়।
জানা যায়, বগুড়া শহরের নবাববাড়ি সড়কে ব্যবসায়ী সাইরুল ইসলামের মালিকানাধীন আধুনিক বিপনী বিতান রানার প্লাজা। সেখানে সম্পাস ডাইন নামে একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁয় অভিজাত পরিবারের সদস্যরা খাওয়া-দাওয়া করে থাকেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার সনাতন ধর্মাবলম্বী অনন্য দাস বৃষ্টি নামে এক তরুণী বন্ধুদের সাথে নিয়ে ওই রেস্তরাঁয় দুপুরের খাবার খেতে আসেন। তিনি ওয়েটার আনন্দীকে ফ্রাইড রাইস ও চিংড়ি মালাইকারীর অর্ডার করেন। খাওয়ার সময় হিন্দু তরুণী দেখতে পান চিংড়ির সাথে গরুর মাংস মেশানো হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ওই তরুণী প্রতিবাদ করেন এবং বমি করে ফেলেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণী কান্নাকাটি করছেন, তিনি সম্পাস ডাইন’এর কর্তৃপক্ষের কাছে তাকে গরুর মাংস খাওয়ানোর প্রতিবাদ করেন। তিনি এ ব্যাপারে তিনি কন্দনরত অবস্থায় কৈফিয়তও চান। তখন রেস্তরাঁর কর্মরত লোকজন বলেন, তারা জানতেন না তিনি (তরুণী) হিন্দু। তারা এ ঘটনায় সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হন এবং তরুণীকে শান্ত করার চেষ্টাও করেন। ঘটনাটির ভিডিওটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে জেলা প্রসাশন, থানা প্রসাশন বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের জেলা কমিটির প্রতিনিধি বিকাশ স্বর্নকার, বাংলাদেশ পুজা উদযাপনের জেলা সভাপতি দিলিপ দেব সহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে ব্যপক তোলপাড় সৃষ্টি হয় দেশ সহ দেশের বাহিরেও।
উক্ত ঘটনার পর বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের জেলা টিম বিকাশ স্বর্নকার,ছোটন চক্রবর্তী সহ ঘটনাস্থল সহ গিয়ে মানষিক নির্যাতিতার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ভিকটিমকে সান্তনা সহ আইনগত পদক্ষেপের আশ্বাস প্রদান করেন।
তারা মনে করেন এ ঘটনা শুধু একটি রেস্টুরেন্টের চিত্র নয়; সমগ্র দেশের চিত্র। বগুড়া পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ ও সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার তালুকদার অপর এক বিবৃতিতেও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
বগুড়া সদর থানার সেকেন্ড অফিসার জানান, ফেসবুকে এক হিন্দু তরুণীকে চিংড়ির তরকারির সাথে গরুর মাংস খাওয়ানের ভিডিও দেখতে পান। শুক্রবার রাতে শহরের রানা প্লাজার ৭তম তলায় সম্পাস ডাইনের ওয়েটার শহরের কলোনী এলাকার আনন্দিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। এছাড়া দুপচাঁচিয়ার ওই তরুণীকেও ডাকা হয়েছে। তারা অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বগুড়া জেলা পুজা উদযাপনের সভাপতি দিলিপ দেব বলেন, আমি ফেসবুক ওপেন করার পর থেকে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরাফিরা করছিল। পরে পুরা বিষয়টি জানতে পারলাম। তবে বিষয়টির নিন্দা জানায়। পরে উভয়ের উপস্তিতিতে সম্নানজনক ভাবে মিমাংসা হয়। নিচে ওই তরুণীর অনুভুতি বিষয় দেওয়া হল। নমস্কার।
আমি অনন্য বৃষ্টি, আমি গুছিয়ে কিছু বলতে পারিনা। এলোমেলো হয়ে যাই বলতে বলতে। বিশেষ করেতো ওত লোকজন আর ক্যামেরার সামনে আরো। তাই স্ক্রিপ্ট লিখে নিছিলাম নিজের মত করে, এক পর্যায়ে স্ক্রিপ্ট অনুযায়ীও বলে শেষ করতে পারিনি। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে ভিডিওটা দেখার এবং লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইল আমার সাথে গত ২০-০৫-২০২১ তারিখ বৃহস্পতিবার Shompas Dine, রানার প্লাজা, বগুড়াতে যে ঘটনা ঘটেছিলো ইতিমধ্যে সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে আপনারা অনেকেই অবগত আছেন।
এরকম ঘটনা আমাদের দেশের আনাচে কানাচে অহরহ প্রতিনিয়ত হচ্ছে। এরকম ঘটনা নতুন কিছুনা আমাদের দেশে। আমার মত অনেক দাদা-দিদিই যারা বাইরে খাওয়া দাওয়া করেন তারা হয়তো কোন না কোন পর্যায়ে এরকম ঘটনার স্বীকার হয়েছেন।
আমি প্রতিবাদ করেছি এবং আপনাদের কল্যাণে সেটা আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। আপনারা দ্রুতটার সাথে ভিডিওটা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ভেদাভেদ ভুলে একত্রে এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। যার দরূণ আমাদের কমিউনিটির বড় বড় নেতৃবৃন্দ, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের খুব সহজেই নজরে পড়ে। মুহূর্তের মাঝেই আমাকে ফোন করে, ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও বার্তা দিয়ে পাশে থেকেছেন।
আপনারা এভাবে এগিয়ে না এলে এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনার কোন প্রতিবাদই হত না। এজন্য আপনাদের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। আমি চাই ভবিষ্যতেও আমাদের হিন্দু সমাজের সাথে হয়ে যাওয়া যেকোন অন্যায় গুলোর ব্যাপারে আপনারা আবার একত্র হয়ে প্রতিবাদ করবেন। এখন আপনাদের কঠোর প্রতিবাদের দরুন ঘটনার দিন মাঝরাতেই বগুড়া সদর থানার পুলিশ গিয়ে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ও সেই মহিলা ওয়েটারকে গ্রেফতার করে এবং মালিক বরাবর একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়।
তাদেরকে একদিন একরাত আটকে রেখেছিলো। মহিলাটির একটি শিশু বাচ্চা ছিলো, সে সারাক্ষণ মা মা বলে থানা হাজতে কাঁদছিলো ব্যাপারটি সত্যিই আমাকে অনেক নাড়া দিয়েছে।
পরবর্তীতে বগুড়ার স্থানীয় হিন্দু নেতৃত্ববৃন্দ,মানবাধিকার কর্মি ও ভোক্তা অধিকার, সাংবাদিকরা আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং তাদের উপস্থিতিতে সবাই মিলে এক বৈঠক হয় গত রাতে রেস্টুরেন্টে মালিককে সাথে নিয়ে। সেই বৈঠকে হোটেল মালিক জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন এবং পরবর্তীতে আর এধরণের কাজ যাতে কখনো না হয় সেব্যাপারে লিখিত দিয়েছে। এছাড়াও তারা রেস্টুরেন্টে নিজস্ব তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনা ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত সে ব্যাপারে ক্ষতিয়ে দেখবে এবং সেই মহিলা ওয়েটারকে আপাতত বহিষ্কার করা হইছে।
রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ঘটনাটির জন্য বারংবার অনুতপ্ত। আর আমাদের সনাতন ধর্ম যেহেতু সহনশীলতার শিক্ষা দেয়। তাই আমি অনুতপ্তকে ক্ষমা করাই বাঞ্চনীয় মনে করেছি। এবং তাদের অনুরোধ করেছি, আপনার রেস্টুরেন্টে যে ঘটনা ঘটেছে এরকমটি যেন সারা বাংলাদেশে আর কোথাও না ঘটে এব্যাপারে সকল রেস্টুরেন্টে ও হোটেল মালিকদের প্রতি আহবান জানাতে। ভোক্তা অধিক।