জেলার খবর

ছাতক রেলওয়েতে দূর্নীতির তদন্তে উপ-সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত টিম

আব্দুস ছালাম শাকিল, জেলা প্রতিনিধি-(সুনামগঞ্জ)

ছাতক রেলওয়েতে দূর্নীতির তদন্তে উপ-সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত টিম

ছাতকে রেলওয়ে বিভাগের নির্বাহী প্রকেীশলীর দপ্তরে দূর্নীতির একটি অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি বৃহস্পতিবার তদন্ত কার্যক্রম চালিয়েছে।

রেল মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব (প্রশাসন-৪) মীর আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত টিম সকাল থেকে সরজমিনে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। ছাতক রেলওয়ে শাখার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কর্মরত প্রধান সহকারীসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে রেলওয়ে সিআরবি পূর্বাঞ্চল চট্রগ্রাম বরাবরে দেয়া একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়। তদন্ত টিমে রয়েছেন ঢাকা রেল ভবনের পরিচালক (পরিবহন) মোঃশফিকুর রহমান ও উপ-পরিচালক (ভু-সম্পত্তি) আবিদুর রহমান। উচ্চপর্যায়ের এ টিমের তদন্তে এখানে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল।

অভিযোগে যার নাম অভিযোগকারী হিসেবে উল্লেখ রয়েছে তিনি অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, এ অভিযোগ তিনি করেন নি। তিনি তদন্ত টিমের কাছে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। এদিকে এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে যে সাংবাদিক একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন তিনিও তদন্ত টিমের কাছে দু’টি লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে সংগৃহিত তথ্য থেকে সংবাদ প্রকাশ করেছেন তিনি। সংগৃহিত তথ্যের মধ্যে ক’টি অনলাইনের নিউজ পোর্টালের কথা বলা হয়েছে।

এসব অনলাইনেও নিউজ করেছেন ওই সাংবাদিক। সংবাদে উল্লেখিত অভিযুক্তদের ব্যবসা, ট্রাক-কার, বাড়ির মালিক, টিএলআর-কোয়ারী বিষয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের কোনো প্রমাণাদি তার কাছে নেই বলে তিনি লিখিত বক্তব্য দেন। এতে অভিযোগ, নিউজ সহ সবকিছুই একটি চক্রের পূর্বপরিকল্পিত ও সাজানো বলে স্থানীয় ও রেলওয়ে বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধারণা।

অভিযুক্ত ৩ জনের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) আব্দুল নূর, প্রধান অফিস সহকারী সুরঞ্জন পুরকায়স্থ ও মোটর চালক মাহবুবুর আলম। এর মধ্যে উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) আব্দুল নূর কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, ছাতক রেলওয়ের একটি চক্র তৎসময়ের এলডিএ’র নেতৃত্বে রেলওয়ের বাসাবাড়ি দখল, জমি দখল, কোয়ারী দখল, পাথর বিক্রি, রেলওয়ের সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছিলো। তাদের এসব অপকর্ম ঢাকতে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-নিবেদন ও সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে তারা।

রেলওয়ের এক কর্মচারী খুন হওয়ার পর ১০ জন টিএলআর নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। তাদের বেতন-ভাতা এখনো আসেনি। তবে টাকা না আসলেওটিএলআর’র টাকা আত্মসাতের বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদে প্রকাশিত হয়। লিখিত বক্তব্যে তিনি এ সবে জড়িত রেলওয়ের বদলীকৃত এলডিএ, একজন সাংবাদিক সহ রেলওয়ের আরো দু’জনের নাম উল্লেখ করেছেন। প্রধান অফিস সহকারী সুরঞ্জন পুরকায়স্থ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিযোগটি ভুয়া এক্ষেত্রে প্রকাশিত সংবাদগুলোও ভুয়া। তিনি জানান, অভিযুক্তরা লিখিতভাবে বক্তব্য দিয়েছেন।

তিনিও লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। রেলওয়ের একাধিক কর্মচারী জানান, সাবেক এলডিএ সহ ছাতক রেলওয়ে থেকে বদলী হয়ে গেলেও এখানে অনেকের কর্তৃত্ব রয়েছে। তাদের নামে রয়েছে বাসা-বাড়ী। এসব বাসা-বাড়ী বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন তারা। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী নিজাম উদ্দিন বুলি ও চান মিয়া চৌধুরী জানান, আক্রোশের কারণে রেলওয়ের একটি চক্র অন্যকে ফাঁসাতে এবং নিজেদের রক্ষা করতে রেলওয়ের বিভিন্ন দপ্তরে নামে-বেনামে অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছে।

এর আগেও রেলওয়ে বিভাগের এক কর্মচারীর বন্ধুকে দিয়ে করানো অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। গত দু’বছরে ছাতক রেল বিভাগকে কলংকিত করেছে এ চক্রটি। প্রায় দিনই অনলাইনে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশিত হয়েছে। আর এসব নিউজ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌছে যাচ্ছে এ চক্রের মাধ্যমে। একই নিউজ বারবার একই পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশিত হচ্ছে।

বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে এবং রেলওয়ের সুনাম ধ্বংসকারী এ চক্রের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গঠিত তদন্ত টিমের কাছে দাবি জানান তারা।

তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-সচিব মীর আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, বিষয়টির তদন্ত শেষ হলে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button