জেলার খবর

চুরি হচ্ছে সাদা পাথর, সৌন্দর্য হারাচ্ছে পর্যটন

আব্দুছ ছালাম শাকিল, জেলা প্রতিনিধি-(সুনামগঞ্জ)

চুরি হচ্ছে সাদা পাথর, সৌন্দর্য হারাচ্ছে পর্যটন

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর উজানে ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টে অবস্থিত ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র। সাদা পাথরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এরই মধ্যে দেশের ভ্রমণ পিপাসুদের মন কেড়ে নিয়েছে।

বিগত তিন বছর যাবৎ পর্যটকদের বাঁধ ভাঙা উচ্ছাস যেন সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি স্বচ্ছ নীল জল আর সাদা রঙের পাথরে যেন ওই এলাকার পাহাড়ি মুক্তার আলো ছড়াচ্ছে। কেউ কেউ ভালবেসে “সাদা সোনা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এই সাদা পাথরকে।

পাহাড়, পাথর আর জলের মিতালি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক। এই পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে গড়ে উঠেছে স্থানীয় বেকারত্বের কর্মসংস্থান। পর্যটকদের সুবিধার্থে স্থানীয় শিক্ষিত বেকার যুবকরা হাতে তুলে নিয়েছেন ক্যামেরা। আয় করে সংসার চালাচ্ছেন তারা। আবার অনেকে বিক্রি করছেন কসমেটিক্স। কেউবা বিক্রি করছেন চা-পান, বিস্কুটসহ হরেকরকম পণ্য। এছাড়াও এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট। সেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা থেকে বাড়তি আয় করে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনছেন তাদের পরিবারে। মূলত পর্যটকদের জন্যেই এখানে গড়ে উঠেছে স্থানীয় বেকার যুবকদের নতুন নতুন কর্মসংস্থান।

সাদা পাথরকে ঘিরে এতসব আয়োজন যেন ম্লান হওয়ার আশঙ্কা জেগেছে। পর্যটকদের নয়ন জুড়ানো সাদা পাথর দিন দিন যেন কমে যাচ্ছে। সাদা পাথরগুলোকে আগের দিন এক স্থানে দেখে আসলেও পরের দিন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যের সাদা পাথর যেন দিনদিন হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে।

কোথায় যাচ্ছে পর্যটকদের সাদা পাথর?

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রতি রাতে ছোট ছোট বারকি নৌকা দিয়ে জিরো লাইনে জমাটকৃত সাদা পাথর চুরি হয়ে যাচ্ছে। কয়েক লাখ টাকার পাথর চুরি হচ্ছে প্রতিদিন। তবে স্থানীয় বিজিবি রয়েছেন নীরব। স্থানীয় কয়েকটি চাঁদাবাজ চক্রের মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা টহলরত স্থানীয় বিজিবিকে ম্যানেজ করেন চুরি করাচ্ছে পাথর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী বলেন, ”চাঁদাবাজদের ভয়ে আমরা মুখ খুলতে ভয় পাই। তাদের হাত অনেক লম্বা। প্রতিদিন রাতেই ছোট ছোট বারকি নৌকা দিয়ে পাথর চুরি হচ্ছে। এভাবে চুরি হতে থাকলে পর্যটকরা এসে কি দেখবেন এখানে। হঠাৎ করে দেখবেন পর্যটক কমে যাচ্ছে। তখন পর্যটকদের উপলক্ষ করে গড়ে উঠা আমাদের এই ক্ষুদ্র ব্যবসাতেও ধস নামতে পারে। প্রশাসনের কাছে আমার অনুরোধ সাদা পাথর চুরি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”

কুমিল্লা থেকে বেড়াতে আসা সাজ্জাদ নামের এক পর্যটক বলেন, ”কিছুদিন আগেও যে পাথর দেখলাম এখন ওইসব পাথর নেই। অবশ্যই পাথর চুরি হচ্ছে।

এবিষয়ে কালাসাদক বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার জাহাঙ্গীর আলম পাথর চুরির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, রাতে যে পাথর যায় তা না। আপনাকে যে তথ্য দিয়েছে তা ভুল তথ্য দিয়েছে। কথা বুঝলেন? এইরকম তথ্য আমার কাছে নাই, শুনিও নাই।

এক পর্যায়ে পাথর চুরির বিষয়ে কৌশলে তিনি বলেন, যদিও পাথর যায় তখন আমরা আটক করি। ওই মনে করেন, এক নৌকা ভরে তখন আমরা গিয়ে আটক করে নিয়ে আসি। এইরকম না যে, ১০টি নৌকা লাগিয়ে ১০০জন লোকে আনতেছে। দুই একটা চুর তো থাকবেই। আমি তো বলিনা একেবারে (পাথর) যায় না। আমি তো আর নদীতে বসে থাকি না। তবে আমার কড়া নির্দেশ একটা পাথরও ধরা যাবেনা।

প্রকাশ্য দিবালোকে ভোলাগঞ্জ রোপওয়ের ১০নং খুটির নীচ থেকে পাথর উত্তোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এইগুলো বালু নিচ্ছে। তাছাড়া ওখানে তো পানি আছে।

তিনি আরও বলেন, তবে কিছু অসহায় গরীব মহিলা ছোট ছোট বাচ্চাদের বালু চড়ে রেখে চিপ তুলে সারা দিনে ৪/৫ শত টাকায় বিক্রি করে। কিন্তু সেখানেও চাদাবাজি করে পাড়ুয়ার সুজন ও মেম্বারের ছেলে ইকবাল।

চাঁদা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে স্থানীয় ইউপি সদস্যের ছেলে ইকবাল বলেন, আমার বাবার সম্পদ কম আছে নাকি ভাই। ১’শ-২’শ টাকার দিকে আমার লোভ নেই। এসব চাঁদাবাজি করে থাকে পাড়ুয়ার সুজন ও গুচ্ছগ্রামের পাগলা। আমি পাগলাকে আরও নিষেধ করি এসব গরীব মানুষের কাছ থেকে টাকা না নেওয়ার জন্য। প্রশাসনের কাছে আমার অনুরোধ যারা গরীব মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয় তাদের বিরুদ্ধে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button