ছাতকে ভর্তি বিড়ম্বনায় প্রাথমিক শেষ করা শতাধিক ছাত্র, অভিভাবকরা দিশেহারা
আব্দুছ ছালাম শাকিল, জেলা প্রতিনিধি-(সুনামগঞ্জ)
ছাতকে ভর্তি বিড়ম্বনায় প্রাথমিক শেষ করা শতাধিক ছাত্র, অভিভাবকরা দিশেহারা
ছাতকে ভর্তি বিড়ম্বনার গেঁড়াকলে আটকে সাধারন পরিবারের শতাধিক ছাত্রের লেখাপড়ায় দেখা দিয়েছে অনিশ্চিয়তা। উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় গত ৩ বছর ধরে এমন বিড়ম্বনায় পড়ে মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছেন শহরে বসবাসরত কয়েক শ’ ছাত্র ও তাদের অভভাবকরা।
শহরের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাতক বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় সরকারীকরণ হওয়ার পর থেকে ভর্তি সমস্যার সম্মূখীন হতে হয় শহরের কয়েক শ’ ছেলে শিক্ষার্থীর।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করা এসব ছাত্রদের উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন অভিভাবকরাও। ফলে প্রতি বছর শতাধিক ছাত্র অকালে ঝড়ে পড়ার আশংকা করছেন এখানের শিক্ষানুরাগীরা। শহরের প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত চন্দ্রনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যাল ও ছাতক সরকারী বহুমুখী মডেল হাইস্কুল ছাড়া কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে আর কোন উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী শেষ করা শহরে বসবাসরত শ’ শ’ শিক্ষার্থীকে পড়তে হয় প্রতিযোগিতার লড়াইয়ে।
মেয়ে শিক্ষার্থীরা সরাসরি চন্দ্রনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও বিপাকে পড়ে ছেলে শিক্ষার্থীরা। আবার ছেলে-মেয়ে উভয়ই ছাতক সরকারী বহুমুখী মডেল হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকায় ছেলে শিক্ষার্থীদের ভর্তির বিষয়টি আরো কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী শেষ করা শ’ শ’ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছেলে মেয়ের সংখ্যা প্রায় সমান থাকে।
এ দুটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শতকরা ৭৫ ভাগ দখল করে নেয় মেয়ে শিক্ষার্থীরা। সরকারী বিধি মোতাবেক ছাতক সরকারী বহুমুখী মডেল হাইস্কুলে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সুযোগ পায় মাত্র ১২০ জন শিক্ষার্থী। প্রতি বছর ভর্তির সুযোগ না পাওয়া শতাধিক ছাত্রের ভাগ্য নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েন তাদের অভিভাবকরা।
করোনা মহামারীর কারনে চলতি শিক্ষা বর্ষে ছাতক সরকারী বহুমুখী মডেল হাইস্কুলে আবেদন করা শিক্ষার্থীর মাঝে লটারীর মাধ্যমে ১২০জন শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে জটিলতা আরো তীব্রতর হয়ে উঠে। বহু মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ থেকে হয় বঞ্চিত। ভর্তির বাইরে থাকা সাধারন পরিবারের ছাত্রদের অভিভাবকরা সন্তানদের ভর্তি নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। শহর কেন্দ্রিক প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জরুরী ভিত্তিতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজন বলে এখানের শিক্ষানুরাগীরা মনে করছেন।
অন্যতায় ভর্তি জটিলতার কারনে এখানের বহু শিশুর শিক্ষা গ্রহনের সহজ পথ রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। এখানে শহর কেন্দ্রিক একটি মডেলসহ ৬টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪টি পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি কিন্ডারগার্টেনও রয়েছে শহরের অভ্যন্তরে। এসব স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সিংহভাগ মেয়েরা চন্দ্রনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ছেলেরা সাধারনত ছাতক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করে আসছে যুগ-যুগ ধরে।
২০১১ সালে ছাতক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মডেল স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করার পর শর্ত পূরনের জন্য ২০১২ সাল থেকে ছেলে-মেয়ে উভয়ই ভর্তির হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে অত্র বিদ্যালয়টি। যোগ্যতার দাবীদার হিসেবে ২০১৮ সালের ২১ মে এ বিদ্যালয়টির নামের পাশে সরকারী শব্দটি যুক্ত হয়ে ছাতক সরকারী বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় নামকরন হয়। আর তখন থেকেই অনিশ্চয়তা দেখা দেয় এখানের শহর ভিত্তিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করা কয়েক শ’ ছাত্রের ভবিষ্যত।
ছাতক সরকারী বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়া পৌর এলাকার মধ্যে রয়েছে মাত্র দুটি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পেপারমিল ও সিসিএফ উচ্চ বিদ্যালয়। যার একটি সুরমা নদীর উত্তর পারে কারখানার ৪নং এলাকায় এবং অপরটি নিটোল কার্টিজ পেপারমিল সংলগ্ন এলাকায়। উভয় স্কুলের দূরত্ব শহর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার। কারখানা সংশ্লিষ্ট ছাড়া বহিরাগতরা সিসিএফ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ কম এবং অনেকটাই ব্যয় বহুল।
এ ছাড়া শহরের প্রায় তিন কিলোমিটারের মধ্যে আর কোন উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় সন্তানদের ভর্তির ব্যপারে অনেকটা দুঃশ্চিতায় ভোগতে হচ্ছে অভিভাবকদের। চলতি বছরে শহর ভিত্তিক স্কুল গুলোর মধ্যে বাগবাড়ী সরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১০২জন, মন্ডলীভোগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১১৬ জন, তাতিকোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৮৫ জন, নোয়ারাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৮২ জন, চরেরবন পৌর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৪১ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক শেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যোগতা অর্জন করে। এ ছাড়া শহরে রয়েছে বেশ কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন ও আরো তিনটি পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সব মিলিয়ে ৫ শতাধিক শিক্ষার্র্থী প্রতিবছর প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নেয়। মেয়েরা চন্দ্রনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ছাতক সরকারী বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির পর্যাপ্ত সুযোগ থাকলেও বিপাকে পড়ে ছেলে শিক্ষার্থীরা। চলতি বছর কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চন্দ্রনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ২৫০ জন ছাত্রী।
অপর দিকে ছাতক সরকারী বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ১২০ জনের মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৩১ জন। প্রতিবছর প্রাথমিক শেষ করা গড়ে প্রায় ২৫০ জন ছেলে শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিযেগিতার ভিত্তিতে ছাতক সরকারী বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে ৬৫ থেকে ৭৫ জন ছাত্র। এ হিসেবে প্রতি বছর দেড় শতাধিক ছাত্রের ভর্তি ও ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হয় এসব ছেলে শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা।
শুধু মাত্র ভর্তি বিড়ম্বনার বেড়াজালে পড়ে এসব ছেলে শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন থমকে যাওয়ারও আশংকা করছেন এখানের শিক্ষানুরাগীরা। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও শিক্ষানুরাগী আব্দুল ওদুদ মনে করেন এটি একটি মেজর সমস্যা। এখানের শিক্ষার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে জরুরী ভিত্তিতে এ সমস্যার সমাধান করা অত্যন্ত প্রয়োজন। পৌর শহরের বহু সরকারী খাস ভুমি রয়েছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য এসব খাস ভুমি উদ্ধার করে এখানে একটি উচ্চ ব