নেয়াখালীতে ছেলের পরিকল্পনাতেই মাকে পাঁচ টুকরো।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে বিল থেকে নূর জাহান (৫৮) নামে এক গৃহবধূর পাঁচ খন্ড লাশ উদ্ধার ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়েছে।
ঘটনার ১৫ দিন পর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি,চাপাতি,কোদাল, বালিশ ও মৃতের পরনের শাড়ি উদ্ধার করা হয়। নিহতের ছেলে হুমায়ূন কবির হুমার পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে।গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মামলার বাদী হুমায়ূন কবির হুমা,তার বন্ধু নীরব ও প্রতিবেশী কসাই নূর ইসলাম, হুমায়ূনের মামাতো ভাই কালাম প্রকাশ মামুন ও মামাতো বোনের স্বামী সুমন।
এর মধ্যে নীরব ও কসাই নূর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।সম্মেলনে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন জানান, গত ৭ই অক্টোবর বুধবার বিকালে সুবর্ণচরের জাহাজমারা গ্রামের একটি বিলের মাঝের বিভিন্ন ক্ষেত থেকে নূর জাহান নামে ওই গৃহবধূর পাঁচ খন্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
পরদিন তার ছেলে হুমায়ূন কবির হুমা অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।পরে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে।
এসপি আলমগীর হোসেন জানান, অভিযানকালে সন্দেহজনকভাবে হুমায়ূনের বন্ধু নীরব ও প্রতিবেশী কসাই নূর ইসলামকে আটক করা হয়।তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি,চাপাতি,কোদাল,বালিশ ও নিহতের পরনের শাড়ি উদ্ধার করা হয়।পরে তারা দুইজন স্বেচ্ছায় তাদের অপরাধ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয়।তাদের জবানবন্দির ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মামলার বাদি হুমায়ূনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে হুমায়ূনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তার মামাতো ভাই কালাম প্রকাশ মামুন ও মামাতো বোনের স্বামী সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।এসপি আরও জানান, হুমায়ূন কবিরের সৎভাই বেলাল গত দেড় বছর আগে ইটভাটায় মারা যান।
মৃত্যুর আগে বেলালের গরু, পুকুরের মাছ ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসার পুঁজির জন্য মা নূর জাহানকে জিম্মাদার রেখে ৪ লাখ টাকা সুদ নেন হুমায়ূন। ওই টাকা পরিশোধের আগে মারা যান বেলাল। বেলালের মৃত্যু পর পাওনাধারগণ ওই টাকার জন্য হুমায়ূন ও তার মাকে চাপ দিতে থাকে।
হুমায়ূন চেয়েছিল, মৃত বেলাল ও তার মায়ের নামে থাকা জায়গা জমি বিক্রি করে ওই টাকা শোধ করতে। কিন্তু নূর জাহান ছেলে হুমায়ূনকে নিজের জমি বিক্রি করে ওই টাকা শোধ করতে বলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো।এর মধ্যে পাওনা ৬২ হাজার ৫০০ টাকার জন্য প্রায়ই ভাই দুলাল মাঝিকে জোর করতেন নূর জাহান। এসব বিষয় নিয়ে দুলালের ছেলে কালাম ও মেয়ের জামাই সুমন নূর জাহানের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।
আর এর জের ধরে হুমাযূন,কালাম, সুমন,প্রতিবেশী ইসমাইল, হামিদসহ মোট সাতজন এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পণা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দেনামুক্ত হতে ওইদিন তারা নূর জাহানকে তার বাড়িতে ঘুমের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে।পরে তারা লাশটি পাওনাদারদের জমির পাশে নিয়ে বটি, চাপাতি ও কোদাল দিয়ে পাঁচ খণ্ড করে বিভিন্ন জমিতে ফেলে। এ ঘটনায় আরও দুই আসামি ইসমাইল ও হামিদকে দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।