জেলার খবর

সনাতনধর্মের ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতার।

রনজিত কুমার পাল (বাবু) স্টাফ রিপোর্টার-ঃ

সনাতনধর্মের ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতার।

ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতার, এঁরা হলেন–
১)মৎস্য, ২)কূর্ম, ৩)বরাহ, ৪)নৃসিংহ, ৫)বামন, ৬)পরশুরাম, ৭)রাম, ৮)কৃষ্ণ, ৯)বুদ্ধ এবং ১০)কল্কি।

১) মৎস্য_অবতার– মৎস্য ভগবান বিষ্ণুর প্রথম অবতার রূপ। এই অবতার রূপে সত্যযুগে বিষ্ণুর আবির্ভাব। পুরাণ অনুযায়ী পৃথিবীর প্রথম মানুষ মনুকে এক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ভগবান বিষ্ণু মৎস্যরূপ ধারণ করে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। শরীরের উপরের অংশ পুরুষ মানুষের মতো, কিন্তু নীচের অংশ মাছের মতো।

২) কূর্ম_অবতার– কূর্ম ভগবান বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার। সত্যযুগে এই অবতার রূপে বিষ্ণু আবির্ভূত হন। পুরাণে বলা হয় সমুদ্রমন্থনের সময় মন্দর পর্বত সমুদ্রের নীচে ঢুকে যাচ্ছিল। তাই সেই সময় বিষ্ণু কূর্ম অবতার অর্থাৎ কচ্চপের রূপে আবির্ভূত হয়ে পর্বত তাঁর পৃষ্ঠে ধারণ করেন। যার ফলে অমৃত প্রাপ্তি সম্পূর্ণ হয়।

৩) বরাহ অবতার– বুনো শূকরের রূপ ধারণ করেছিলেন ভগবান বিষ্ণু। এটি তাঁর তৃতীয় অবতার। বরাহ অবতারে তিনি সত্য যুগে আবির্ভূত হন। পুরাণ মতে পৃথিবীকে হিরণ্যাক্ষ নামক মহাশক্তিশালী অসুরের হাত থেকে রক্ষা করতে এই অবতার রূপে বিষ্ণু পৃথিবীতে আসেন। অসুর পৃথিবীকে মহাজাগতিক সমুদ্রের নীচে লুকিয়ে রেখেছিলেন। বরাহ রূপী বিষ্ণু হিরণ্যাক্ষের সাথে যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত করেন ও মারেন। তারপর পৃথিবীকে মহাজাগতিক সমুদ্রের নীচ থেকে তুলে আনেন। প্রলয়ের পর পৃথিবীর নতুন জন্মের প্রতীক মানা হয় বরাহ অবতারকে।

৪) নৃসিংহ অবতার– চতুর্থ অবতারের নাম নৃসিংহ অবতার, অনেকে নরসিংহ বলে থাকেন। অর্ধেক মানব ও অর্ধেক সিংহ। সত্যযুগে অবতীর্ণ হয় এই অবতার। দেহ মানুষের মত কিন্তু মাথা সিংহের মত। রাক্ষস হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণু ভক্ত। হিরণ্যকশিপু ছিলেন বিষ্ণু বিরোধী। কারণ তাঁর ভাই হিরণ্যাক্ষকে বধ করেছিলেন বিষ্ণু বরাহ রূপে। হিরণ্যকশিপু তাঁর পুত্র প্রহ্লাদকে বিষ্ণুর ভক্ত হওয়ার সাজা স্বরূপ বধ করতে চাইলে শেষমেশ নৃসিংহ অবতারে বিষ্ণু অবতীর্ণ হন। তিনি বধ করেন হিরণ্যকশিপুকে।

৫) বামন অবতার– বামন রূপে ভগবান বিষ্ণু ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হন। এটি তাঁর পঞ্চম অবতার। অসুর বলিকে দমনের উদ্দেশ্যে বামন অবতার রূপে বিষ্ণু জন্ম নেন। অসুর অধিপতি বলে একটি যজ্ঞের আয়োজন করলে বামন সেখানে হাজির হয়ে তিন পা রাখার মত জমি চান। বলি বামনকে জমি দিতে রাজি হয়ে যান। সেই সময় বামন তাঁর দেহ বর্ধিত করে বিশালাকার বিষ্ণু রূপ ধারণ করেন। স্বর্গ ও মর্ত জুড়ে দু পা রাখেন। আর তাঁর পেট চিরে বেরিয়ে আসা একপা রাখার জায়গা চাইলে বলি তাঁর মাথা পেতে দেন পা রাখার জন্য। তৃতীয় পা বলির মাথায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে সে বিষ্ণুর নাম নিয়ে স্তব করতে থাকেন। এমন সময় বিষ্ণু ভক্ত প্রহ্লাদ এসে বলির মুক্তি চান অনুরোধের সাথে। তাছাড়া বলি তাঁর কথা রাখার জন্য কষ্ট সহ্য করায় বিষ্ণু তাকে মুক্ত করেন।

৬) পরশুরাম অবতার– নপরশুরাম বিষ্ণুর ষষ্ট অবতার। ত্রেতা ও দ্বাপর যুগ মিলিয়ে তিনি ছিলেন। পরশুরাম ছিলেন ব্রাহ্মণ জমদগ্নি ও ক্ষত্রিয় রেনুকার পুত্র। পরশুরাম কঠোর তপস্যা করে শিবের থেকে যুদ্ধ বিদ্যা শেখেন। প্রথম যোদ্ধা সন্ত ছিলেন তিনি। পুরাণে বলা আছে সমুদ্রের হাত থেকে তিনি মালাবার ও কোঙ্কণ রক্ষা করেন।

৭) রাম অবতার– রাম ছিলেন বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হন তিনি। রাম লঙ্কাধিপতি রাবণকে বধ করে স্ত্রী সীতাকে রাবণের হাত থেকে মুক্ত করেছিলেন। মহাকাব্য রামায়ণ আমাদের সকলেরই জানা। আলাদা করে আর কিছু এতে লেখার প্রয়োজন নেই।
৮) কৃষ্ণ অবতার– দ্বাপর যুগে অন্যায়ের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে কৃষ্ণের আবির্ভাব হয়। বিষ্ণুর অষ্টম অবতার বলে মানা হয় তাঁকে। কৃষ্ণের ভ্রাতা বলরামকেও অনেকে বিষ্ণু অবতার বলে মনে করেন। এই নিয়ে বহু মতভেদ আছে। ভগবত গীতা অনুসারে অষ্টম অবতার বলরামকে মনে করা হয়। কারণ ভগবত গীতা অনুযায়ী কৃষ্ণ স্বয়ং ঈশ্বর, কোন অবতার নয়।

৯) বুদ্ধ অবতার– গৌতম বুদ্ধকে বিষ্ণুর নবম অবতার মনে করা হয়। কলিযুগে অবতীর্ণ হন তিনি। এই অবতার নিয়ে নানা মতভেদ আছে।

১০) কল্কি অবতার–বিষ্ণুর দশাবতারের সর্বশেষ অবতার কল্কি। কলি যুগের শেষে তাঁর আবির্ভাব হবে বলে মনে করা হয়। পুরাণ মতে সাদা ঘোড়ায় তলোয়ার হাতে আবির্ভূত হবেন বিষ্ণু, কল্কি রূপে। তিনি কলিযুগের অবসান ঘটিয়ে পুনরায় সত্যযুগের সূচনা করবেন। হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button